অর্থনীতি

কমিশন নিয়ে রশি টানাটানি

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনের প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে এলসি খোলার বিরপীতে কমিশন নিয়ে রশি টানাটানি হচ্ছে। রাষ্ট্রায়ত্ব সোনালী ব্যাংক প্রতি মাসে শতকরা ২০ পয়সা দাবি করছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ পারমাণবিক কমিশন শতকরা ৫ পয়সা হারে কমিশন দেয়ার প্রস্তাব করেছে। এ বিষয়ে অর্থসচিবের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে সোনালী ব্যাংক।

সূত্র জানায়, সরকারের মেগা প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ৯৪ হাজার কোটি টাকার ঋণপত্র খোলার ক্ষেত্রে প্রতি তিন মাসে সোনালী ব্যাংক কমিশন চাচ্ছে শতকরা ২০ পয়সা। বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন তাতে রাজি নয়। এর আগে সোনালী ব্যাংক রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের জন্য ঋণপত্র খোলার জন্য প্রতি তিন মাসে শতকরা ৪০ পয়সা চাইলেও শক্তি কমিশন প্রথমে শতকরা ৯ পয়সা ও পরবর্তীতে শতকরা ৫ পয়সা হারে কমিশন দেয়ার প্রস্তাব করে।

সূত্র জানায়, বিষয়টি নিয়ে গত সপ্তাহে সোনালী ব্যাংকের সিইও অ‌্যান্ড ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. আতাউর রহমান প্রধান অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার কাছে চিঠি দেন। চিঠিতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সোনালী ব্যাংক স্থাপিত ঋণপত্রের বিপরীতে প্রাপ্য কমিশন প্রতি কোয়ার্টার শতকরা ৪০ পয়সা এর স্থলে ন্যূনতম শতকরা ২০ পয়সা হারে পরিশোধের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করেছেন।

চিঠিতে সোনালী ব্যাংকের সিইও আরো বলেছেন, জানুয়ারি  মাসে পারমাণবিক শক্তি কমিশনের সঙ্গে এক বৈঠকে সোনালী ব্যাংককে দুই ধাপে ২০ কোটি টাকা কমিশন পরিশোধের সিদ্বান্ত থাকলেও এখন পর্যন্ত কমিশন সেই অর্থ পরিশোধ করেনি।

চিঠেতে সোনালী ব্যাংকের সিইও বলছেন, ঋণপত্রের কমিশন দিয়েই সোনালী ব্যাংকের বেশি আয় হয়ে থাকে। ঋণপত্র খোলার কমিশন কমে যাচ্ছে আর অন্যদিকে সাতটি কারণ তার মধ্যে রয়েছে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেস্টনির আওতায় নামমাত্র মাশুল অথবা বিনামাশুলে দেশের জনগণকে ৫১টি সেবা প্রদান এবং বিপিসি, বিজিএমসি ও ওরিয়ান ইনফ্রাস্টাকচার লিমিটেড কর্তৃক মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভার নির্মাণের জন্য এ ব্যাংক থেকে গৃহীত ঋণের বিপরীতে ৫ থেকে ৭ শতাংশ সুদে দীর্ঘমেয়াদী বন্ড ইস্যু। ফলে সোনালী ব্যাংকের আয়ের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

এছাড়া বিনা মাশুলে চেষ্ট/সাবচেষ্ট পরিচালনা, জাতীয় সঞ্চয় ব্যুরোর অধীনে রেয়াতী কমিশনে বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্র ইস্যু। সামরিক ও বেসামরিক পেনশনারদের পেনশন প্রদান, রাষ্ট্র মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর অনুকূলে স্থাপিত আমদানি ঋণপত্রের মূল্য যথা সময়ে পরিশোধের ক্ষেত্রে অধিক মূল্যে বৈদেশিক মুদ্রা ক্রয় করে পরিশোধ করা। ফরেন রেমিট‌্যান্স বিতরণের ক্ষেত্রে  বিভিন্ন মাশুল না নেয়ার জন্য নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে ব্যাংকটির আয়ের ওপর।

এদিকে সোনালী ব্যাংকের সাথে সংশ্লিষ্ট চুক্তি মোতাবেক   বাংলাদেশ পরমাণু প্রকল্পের মোট মূল্যের ১০ শতাংশ অগ্রিম পরিশোধের বিধান থাকায় উক্ত চুক্তির আওতায় ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে ১৪টি কিস্তির বিপরীতে এ পর্ষন্ত ৫৭১ দশমিক ৮৪৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ৪৮ হাজার ৫৬৫ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে অবশিষ্ট ১৮টি কিস্তির বিপরিতে ৬৯৩ দশমিক ১৫৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ৫৮ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে।

এদিকে সোনালী ব্যাংক প্রয়োজনীয় পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার তহবিল না থাকায় দেশের প্রতিশ্রুতি বা সুনাম অক্ষুণ্ন রাখার জন্য অগ্রিম হিসেবে পরিশোধিত উক্ত ৫৭১ দশমিক ৮৪৫ মিলিয়ান মার্কিন ডলারের বা ৪৮ হাজার ৫৬৫ কোটি টাকার মধ্যে ৩৪২ দশমিক ৮৪৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আন্তঃব্যাংক বাজার বা বিভিন্ন এক্সচেঞ্জ হাউজ থেকে বেশি দরে মার্কিন ডলার ক্রয় করার জন্য ব্যাংকের এক্সচেঞ্জ ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। পরবর্তী ৬৯৩ দশমিক ১৫৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিশোধ করতে সোনালী ব্যাংক এক্সচেঞ্জ ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি হবে। বাৎসরিক এ ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১ হাজার ৫৯ কোটি টাকা। ঢাকা/হাসনাত/সাইফ