অর্থনীতি

জুলাই থেকে মানসম্মত ডিজেল আমদানি

দেশের জ্বালানি তেলের চাহিদা পূরণে রাষ্ট্রীয় চুক্তির আওতায় এ বছরের জুলাই থেকে ৫০০ পিপিএম এর পরিবর্তে ৫০ পিপিএম সালফার মানমাত্রার ডিজেল আমদানি করার উদ্যোগ নিয়েছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ।  এর ফলে ১৭ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন ডিজেল আমদানি করতে অতিরিক্ত ৪৪ কোটি ৩৬ লাখ টাকার প্রয়োজন হবে।

এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির পরবর্তী বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে।  জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) দেশের জ্বালানি চাহিদা পূরণের জন্য প্রতি বছর বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রায়ত্ব প্রতিষ্ঠান থেকে মেয়াদী চুক্তির আওতায় জি-টু-জি ভিত্তিতে এবং টেন্ডার প্রক্রিয়ায় পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করে আসছে।  এর আগে ২০২০ সালের পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানির প্রস্তাব অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বিপিসির আমদানিকৃত জ্বালানি তেলের ৮০ ভাগের বেশি ডিজেল।  বর্তমান সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিপিসি ৫০০ পিপিএম ডিজেল আমদানি করছে।

 বৈঠকের জন্য তৈরি সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক ২০১৪-২০১৫ সাল পর্যন্ত প্রণীত ‘রোড ম্যাপ ফর সালফার রিডাকশন ইন ডিজেল ফুয়েল’ ছকে ২০২০ সালে ৩৫০ পিপিএম অথবা কম মানমাত্রায় ডিজেল আমদানির বিষয় উল্লেখ রয়েছে।  তবে জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার দর প্লাটস পাবলিকেশনে ৩৫০ পিপিএম মানমাত্রার ডিজেলের বিষয়ে কোনও স্পেসিফিকেশন পাওয়া যায়নি।

জি-টু-জি ভিত্তিতে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে ২০২০ সালের জুলাই থেকে ৫০০ পিপিএম এর পরিবর্তে ৫০ পিপিএম মানমাত্রার ডিজেল সরবরাহের বিষয়ে বিপিসি কর্তৃক মতামত চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে জি-টু-জি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ইনিপেক সিঙ্গাপুর প্রাইভেট লিমিটেড, পিটিভুমি সিয়াক পুসাকো জাপিন ইন্দোনেশিয়া, পেটকো ট্রেডিং লাবুয়ান কোম্পানি, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরের পেট্রোচায়না ইন্টারন্যাশনাল, সিঙ্গাপুরের পিটিটি ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডিং প্রাইভেট লিমিটেড ৫০ পিপিএম মানমাত্রায় ডিজেল সরবরাহের বিষয়ে ইতিবাচক মতামত দেয়। 

অন্যদিকে, কুয়েত পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (কিপিসি) ৫০ পিপিএম মানমাত্রার ডিজেল উৎপাদন না করায় ১০ পিপিএম ডিজেল সরবরাহের প্রস্তাব দেয়।

২০২০ সালে ভারতের নুনালিগড় রিফাইনারি লিমিটেড (এনআরএল) থেকে জি-টু-জি ভিত্তিতে ডিজেল আমদানির বিষয়ে গত বছর ১১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নেগোশিয়েশন বৈঠকে এনআরএল প্রতিনিধি জানান, ২০২০ সাল থেকে ভারতে ১০ পিপিএম মানমাত্রায় ডিজেল ব্যবহার করা হবে। ফলে এনআরএল কর্তৃক বাংলাদেশে ৫০০ পিপিএম মানমাত্রার ডিজেল সরবরাহ করা সম্ভব হবে না।  ২০২০ সালের জানুয়ারি-জুন সময়ে শুধু ৫০ পিপিএম মানমাত্রার ডিজেল সরবরাহ করবে এবং ‘মিন অব প্লাটস আরব গালফ (এমওপিএজি)’ পাবলিকেশনে প্রকাশিত ৫০ পিপিএম ডিজেল (গ্যাস ওয়েল) এর মূল্য অনুযায়ী বিপিসি কর্তৃক এনআরএল কে পরিশোধ করতে হবে।

এদিকে, জাতীয় পরিবেশ নীতি, ২০১৮ এর ৩, ১৬.৭ অনুচ্ছেদে উল্লেখ রয়েছে, দেশে ব্যবহৃত জ্বালানি তেলের ক্ষতিকর পদার্থ যেমন ডিজেলে সালফারের পরিমাণ পর্যায়ক্রমে কমিয়ে সর্বনিম্ন পর্যায়ে আনতে হবে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর বর্তমানে ৫০ বা ১০ পিপিএম সালফার মানমাত্রার ডিজেল ব্যবহার করছে।  পরিবেশ দূষণরোধ এবং যন্ত্রপাতির কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি ও রক্ষনাবেক্ষণ খরচ কমানোসহ নানা কারণে কম সালফার যুক্ত ডিজেল দেশে ব্যবহার করা আবশ্যক।  এতে ৫০০ পিপিএম সালফার মানমাত্রার ডিজেলের তুলনায় ৫০ বা ১০ পিপিএম মানমাত্রার ডিজেলের আন্তর্জাতিক মূল্য বেশি হওয়ায় আমদানি ব্যয় বৃদ্ধিসহ অন্যান্য আর্থিক সংশ্লেষণ রয়েছে।

এমওপিএজি পাবলিকেশনে প্রকাশিত জ্বালানি তেলের বাজার দর অনুযায়ী ৫০০ পিপিএম মানমাত্রার ডিজেলের তুলনায় ৫০পিপিএম সালফার মানমাত্রার ডিজেলের ব্যারেল প্রতি মূল্য ২০ থেকে ৪০ সেন্ট বেশি হয়ে থাকে।  ২০২০ সালের জুলাই-ডিসেম্বর ছয় মাস সময়ে আমদানিয় প্রায় ১৭ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন অর্থাৎ এক কোটি ৩০ লাখ ৫৫ হাজার ব্যারেল ডিজেল আমদানিতে মার্কিন ডলার ০.৪০/ব্যারেল বেশি বিবেচনায় প্রায় ৫২ লাখ ২২ হাজার মার্কিন ডলার বা আনুমানিক ৪৪ কোটি ৩৬ লাখ টাকা অতিরিক্ত আর্থিক সংশ্লেষণ হতে পারে।

এ অবস্থায়, বিপিসির প্রস্তাব অনুযায়ী পরিবেশ দূষণ রোধ যন্ত্রপাতির কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি এবং রক্ষণাবেক্ষণ খরচ হ্রাস পাবে বিধায় ২০২০ সালের জুলাই থেকে বিদ্যমান ৫০০ পিপিএম (০.০৫ শতাংশ) এর পরিবর্তে ৫০ পিপিএম (০.০০৫ শতাংশ) সালফার মানমাত্রার প্রায় ১৭ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন ডিজেল আমদানির বিষয়ে অতিরিক্ত ৪৪ কোটি ৩৬ লাখ টাকা ব্যয়ের বিষয়ে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে।

 

 হাসনাত/সাইফ