অর্থনীতি

রমজানে বাজার নিয়ন্ত্রণে কঠোর মন্ত্রণালয়

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সারা দেশে সাধারণ ছুটি চলছে।  এরই মধ্যে আগামী ২৫ এপ্রিল রমজান শুরু হবার কথা।  রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম যেন না বাড়ে—সেজন্য বাজার মনিটরিংসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

পাশাপাশি রমজানে প্রয়োজনীয় যেসব পণ্যের চাহিদা বেশি সেগুলোর পর্যাপ্ত মজুত রাখা হয়েছে।

সূত্র জানায়, রমজানের আগে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে করোনারভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে অনেকে দেশের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় পণ্য আমদানি বন্ধ রয়েছে।  আবার রমজানকে সামনে রেখে অসাধু ব্যবসায়ী নিত্যপণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়িয়ে থাকে।  তাই আসন্ন রমজানে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার শঙ্কাও রয়েছে।  তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, রমজানের নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুত রাখা হয়েছে। পাশাপাশি বাজার নিয়ন্ত্রণ রাখতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া রমজানে মাসে পণ্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে টিসিবি (ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ) ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে।   রমজানের আগেই গত বছরের চেয়ে কয়েকগুন বেশি পণ্য নিয়ে টিসিবি ইতিমধ্যে মাঠে নেমেছে। অসাধু ব্যব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে বাজার অস্থিতিশীল করতে না পারে সেজন্য টিসিবি (ছয়টি পণ্য) পেঁয়াজ, ছোলা, চিনি, মসুর, ডাল, খেজুর, পেঁয়াজ ও  তেল বিক্রি শুরু করেছে। 

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত মাসে রমজানে নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে সচিবালয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।  বৈঠকে নিত্যপণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে এবং প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে বলা হয়।  খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধে জেলা প্রশাসন, খাদ্য মন্ত্রণালয় ও নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি ও পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। রমজানের নিত্যপণ্যের চাহিদা, মজুত পরিস্থিতি দেখতে বিভিন্ন গোয়েন্দা সদস্যরা মাঠে নেমেছেন।  অসাধু ব্যবসায়ীদের ইতিমেধ্যে গোয়েন্দা সংস্থার নজদারিতে রেখেছে।   প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে নিত্যপণ্যের বাজার মনিটরিং করবে।

সূত্র জানায়, বছরে দেশে ভোজ্য তেলের চাহিদা ২০ লাখ টন।  এর মধ্যে  রমজান মাসে ৩ লাখ ৫০ লাখ টন। বর্তমানে দেশে ১৩ লাখ ২২ হাজার টন তেল সরবরাহ আছে।  রমজান উপলক্ষে টিসিবি ৫০ হাজার টন ভোজ্য তেল আমদানির করেছে।   বছরে চিনির চাহিদা ১৮ লাখ টন  আর রমজানেই চাহিদা ৩ লাখ টন।  স্থানীয়ভাবে উৎপাদন আমদানিসহ মোট ৯ লাখ ১৬ হাজার টন চিনি মজুত রয়েছে।  আর  রমজান উপলক্ষে টিসিবি আরো ৩০ হাজার টন চিনি ক্রয় করেছে।

বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ২৪ লাখ টন।   রমজানে  চাহিদা ৫ লাখ টন । বর্তমানে মজুত আছে ১৫ লাখ ২৫ হাজার টন।  মার্চ মাসের শেষ দিকে পেঁয়াজ পুরোপুরি বাজারে চলে আসবে।  এছাড়া আরো ৩০ হাজার টন পেঁয়াজ কিনছে টিসিবি।

বছরে মসুর ডালের চাহিদা ৫ লাখ টন, আর রমজানে চাহিদা ৮০ হাজার টন।  দেশে মসুর ডাল আছে ৩ লাখ ২৪ হাজার টন।  রমজান উপলক্ষে টিসিবি ৩ হাজার টন আমদানি করেছে।

ছোলার ডিমান্ড রমজান মাসে বেশি।  বছরে ছোলার চাহিদা এক লাখ ৮০ হাজার টন এরমধ্যে  রমজানে প্রয়োজন ৮০ হাজার টন । দেশে  ৭৪ হাজার ২৪৬ টন মজুত আছে।  আর ৮ হাজার টন ছোলা টিসিবি আমদানি করেছে। বছরে খেজুরের চাহিদা ২৫ হাজার টন।  যার মধ্যে ১৭ হাজার ১৮৭ টন   আমদানি করা হয়েছে।  রমজানের বাড়তি চাহিদা মেটাতে টিসিবি ৫০০ টন খেজুর আমদানি করেছে।  এছাড়া বেসরকারি ভাবে বিভিন্ন পণ্য আমদানি করা হয়েছে যা খালাসের অপেক্ষায় আছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, রমজানে কঠোরভাবে বাজার মনিটরিং চলবে। বাজারে কিছু দেখলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেবে ভ্রাম্যমাণ আদালত।  এ সপ্তাহ থেকে পাইকারি বাজারগুলোতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা নামবে।

টিসিবি ইতিমধ্যে চিনি ছোলা, পেঁয়াজও খেজুর স্বল্পমূল্যে ট্রাকে করে নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে বিক্রি করছে।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, রমজান মাসকে সামনে রেখে নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে থাকবে। নিত্যপণ্যের দাম না বাড়ে সেদিকে সবচেয়ে বেশি নজরদারি রাখা হবে। আসাদ/সাইফ