অর্থনীতি

করোনায় ‘হোম ডেলিভারি’ সেবা দিচ্ছে যমুনা ব্যাংক

বৈশ্বয়িক মহামারি করোনাভাইরাসের প্রার্দুভাবে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির মধ্যেও ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে যমুনা ব্যাংক। বর্তমানে ব্যাংকটির মোট ১৪১টি শাখায় সাপ্তাহিক রোস্টার ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্রাহকসেবা দেওয়া হচ্ছে। এ সংকটময় পরিস্থিতিতে গ্রাহকদের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা বিবেচনায় এনে ‘হোম ডেলিভারি’র মতো ব্যতিক্রম সেবা চলু করেছে ব্যাংকটি।

সম্প্রতি করোনাভাইরাসের প্রার্দুভাব মোকাবিলায় ব্যাংকিং কার্যক্রম নিয়ে রাইজিংবিডির সঙ্গে আলাপকালে যমুনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মির্জা ইলিয়াছ উদ্দিন আহমেদ এসব কথা বলেন।

মির্জা ইলিয়াছ বলেন, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এনে গ্রাহকদের জন্য ব্যতিক্রম সেবা হিসেবে বড় অংকের টাকা ‘হোম ডেলিভারি’ দেওয়ার ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। হোম ডেলিভারির ক্ষেত্রে গ্রাহকের বাসা থেকে চেক নিয়ে অনলাইনের মাধ্যমে টাকা রয়েছে কি-না তা দেখে তা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কর্মীদের বেতন চেকের পরিবর্তে নগদ টাকায় হাতে-হাতে দিয়ে থাকে। প্রতিষ্ঠানগুলোর ওই টাকা পরিশোধের ক্ষেত্রে এ হোম ডেলিভারি সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। এতে গ্রাহকদের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়েছে।

যমুনা ব্যাংকের মোট ১৬টি মাইক্রোবাসের মাধ্যমে সারা দেশে এ সেবা দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, এর মধ্যে শুধু ঢাকাতেই গ্রাহকসেবা দেওয়ার জন্য ৬টি মাইক্রোবাস বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বর্তমানে যমুনা ব্যাংক ৪৮ ধরনের সিএসআর পরিচালনা করেছে। সারা বছর ধরেই ব্যাংকটি সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রম (সিএসআর) পরিচালনা করে থাকে।

সিএসআর সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে আমরা বিভিন্ন জেলায় সিএসআর’র অংশ হিসেবে ত্রাণ বিতরণ করেছি। আমাদের ব্যাংকের পরিচালকরা স্ব স্ব উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণ করছেন। এছাড়া ব্যাংকের বিভিন্ন শাখার উদ্যোগ ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। আবার অনেক শাখার বিভিন্ন পার্টির উদ্যোগেও করা হচ্ছে ত্রাণ বিতরণ। এ পরিস্থিতি আমরা সবাই সম্মিলিতভাবে ত্রাণ বিরতণ কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি। এছাড়া বিভিন্ন অঞ্চলে যমুনা ব্যাংকের শাখার মাধ্যমে পিপিই সরবরাহ করেছি। ইতোমধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে ৫ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছে যমুনা ব্যাংক।

যমুনা ব্যাংকের সেবা প্রদান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে যমুনা ব্যাংকের ১৪১ শাখার মধ্যে ৮০টি এটিএম বুথে পর্যাপ্ত টাকা রাখার ব্যবস্থা নিয়েছি। এর মধ্যে ঢাকার সব শাখা খোলা রয়েছে। মফস্বলের জেলাভিত্তিক যমুনা ব্যাংকের শাখাগুলো খোলা। করোনা পরিস্থিতিতেও ঝুঁকি নিয়ে সিমীত পরিসরে ব্যাংকিং সেবা চালিয়ে যাচ্ছি।

অনলাইনে গ্রাহক সেবার বিষয়ে ব্যাংকটির এমডি বলেন, এ মুহূর্তে যমুনা ব্যাংকের গ্রাহকরা বিভিন্ন ডিজিটাল বা ইলেক্ট্রোনিক্স পদ্ধতিতে মোবাইল, ইন্টারনেট, অ্যাপ ও এসএমএস- এর মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবা নিচ্ছেন। এছাড়া বিকাশে টাকা পাঠাতে যমুনা ব্যাংক গ্রাহকরা তাদের ‘জাস্ট পে’ মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে লগ ইন করে বেনিফিসিয়ারি হিসেবে বিকাশ নম্বরটি যোগ করার পর টাকার পরিমাণ ও অ্যাপের পিন নম্বর দিয়ে ট্রানজেকশন করতে পারছেন। এর জন্য গ্রাহকদের কোনো সার্ভিস চার্জ দিতে হবে না।

ব্যাংকিং সেবায় বিশেষ ছাড় প্রসঙ্গে মির্জা ইলিয়াছ বলেন, এ মুহূর্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুসারে, ব্যাংকিং সেবায় গ্রাহকদের জন্য বিশেষ সুবিধা দিচ্ছে যমুনা ব্যাংক। বিশেষ করে গ্রাহকদের শ্রেণিকৃত ঋণের ক্ষেত্রে কেউ যদি এ ৬ মাসের মধ্যে ঋণে কিস্তি পরিশোধ না করতে পারে তাদের স্টাটাস একই থাকবে। এছাড়া এছাড়া গ্রাহকের সেবার বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে এরই মধ্যে সঞ্চয়ী হিসাবের কিস্তি, ডেভিট ও ক্রেডিট কার্ডের বিল, যে কোনো বিলের অর্থ জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে মে পর্যন্ত বিলম্ব জরিমানা মওকুফ করা হয়েছে।

ব্যাংকিং কার্যক্রমে সার্বক্ষণিক নজরদারির বিষয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশা অনুসারে, করোনা পরিস্থিতিতে ২০ সদস্যের একটি বিশেষ কমিটিও করা হয়েছে। যারা সার্বক্ষণিক ব্যাংকিং কার্যক্রম মনিটরিং করছেন। এছাড়া বিভিন্ন রিজিওনেও একটি করে মনিটরিং টিম করে ব্যাংকের শাখাগুলোতে গ্রাহকের যে কোনো সমস্যা সমাধানের জন্য এক মনিটরিং সদস্যের মোবাইল নম্বরও দেওয়া রয়েছে।

কর্মী সেবা প্রসঙ্গে ব্যাংকটির এমডি বলেন, কর্মী সেবার অংশ হিসেবে যমুনা ব্যাংক সবাইকে বৈশাখী ভাতা দিয়েছে। এ মুহূর্তে অফিস করা জন্য তাদের প্রতিদিন অতিরিক্ত ১ হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে। আর অফিসে আসার ভোগান্তি কমাতে কর্মীদের জন্য গাড়ির সুব্যবস্থাতো রয়েছেই। এ সেবা ঢাকাসহ বিভিন্ন রিজিওনে দেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে যেসব কর্মীদের বাসা দূরে তারা এ সেবা পাচ্ছেন। এছাড়া স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা বিবেচনায় এনে কর্মীদের হ্যান্ডগ্লাভস, স্যানিটাইজার ও মাস্কসহ বিশেষ ক্ষেত্রে পিপিই দেওয়া হয়েছে। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশানা অনুসারে কর্মীদের সব বেতনভাতা, স্বাস্থ্য বিমাসহ ও সুবিধাদি দেওয়া হচ্ছে। ঢাকা/এনটি/এসএম