অর্থনীতি

লকডাউনেও ভ্যাট রিটার্ন বেড়েছে ৩৫ শতাংশ

মহামারি করোনাভাইরাসের মতো প্রতিকূল পরিস্থিতিতে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট/মূসক) রিটার্ন দাখিলে আশাব্যঞ্জক সাড়া মিলেছে। লকডাউন পরিস্থিতিতে এপ্রিল মাসের ভ্যাট রিটার্নের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ৩৫ শতাংশ। যেখান থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা।

অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সংশ্লিষ্টরা। 

এনবিআর বলছে, ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে ও অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে এপ্রিল মাসেও সীমিত আকারে ভ্যাটের সব সার্কেল অফিস খোলা রাখা হয়।  ১২ থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত চারদিনে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় অফিস খুলে প্রায় ৩১ হাজার রিটার্ন নেওয়া হয়েছিল। সেই ধারাবাহিকতায় মে ভ্যাটের সার্কেল অফিস নিয়মিত খোলা রাখার পাশাপাশি ১৫ মে (শুক্রবার) বিশেষ ব্যবস্থাপনায় খোলা ছিল। যার কারণে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি সাড়া পাওয়া যায় ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে।

এনবিআরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তার জানান, এনবিআর সব অফিস স্বাস্থ্যবিধি মেনে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে করদাতাদের সেবা দিচ্ছে। অফিস প্রবেশমুখে হাত ধোঁয়া, স্যানিটাইজার ও স্প্রে করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কর্মকর্তারা সুরক্ষা সামগ্রী পরিধান করে সেবা দেন। এছাড়া করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে অনলাইনে ভ্যাট রিটার্ন দাখিলের প্রতি জোর দেওয়া হচ্ছে।  করদাতারাও এ সময় আগ্রহী হচ্ছেন। ফলও পাওয়া যাচ্ছে।  যার ফলে সারা দেশে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা সত্ত্বেও প্রত্যাশার চেয়ে বেশি রিটার্ন দাখিল ও রাজস্ব আদায় হয়েছে।

এনবিআর সূত্রে জানা যায়, ১৬ মে পর্যন্ত সারা দেশে ভ্যাট রিটার্ন (এপ্রিল মাস) দাখিল হয়েছে ৪২ হাজার ৬১০; যা গত মাসের (মার্চ) প্রায় ১১ হাজার বেশি। শতকরা হিসাবে দাখিলপত্র বেড়েছে ৩৪ দশমিক ৮২ শতাংশ।  আর এ সময় রাজস্ব আদায় হয়েছে ৩ হাজার ৮৭৯ কোটি টাকা; যা আগের মাসের চেয়ে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা বেশি।  শতকরা হিসাবে রাজস্ব বেড়েছে ২২ শতাংশের বেশি।

এর মধ্যে ভ্যাট লক্ষ্যমাত্রার বড় একটি অংশ আসে বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ)-মূল্য সংযোজন কর শাখা থেকে। এ ইউনিটে এপ্রিল মাসের রিটার্ন দাখিল করে ১৪৩টি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে ৫২টি অনলাইনে ও ৭২টি ম্যানুয়াল। যার মাধ্যমে রাজস্ব আদায় হয় এক হাজার ৯৯৬ কোটি ৫ লাখ টাকা।

এপ্রিল মাসের ভ্যাট রিটার্ন দাখিলে ১৫ এপ্রিল (শুক্রবার) দেশের ২৫২টি ভ্যাট সার্কেল অফিস খোলা ছিল। নতুন ভ্যাট আইন অনুযায়ী, প্রতি মাসের ভ্যাট দাখিলপত্র পরবর্তী মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে জমা দিতে হয়। অন্যথায় ১০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে। আইনি বাধ্যবাধ্যতা থাকায় আর করদাতাদের সুবিধার্থে শুক্রবার ছুটির দিনেও সব ভ্যাট সার্কেল খোলা হয়।

ঢাকার বাইরেও ভ্যাট রিটার্ন দাখিলের ক্ষেত্রে ব্যাপক সাড়া মিলেছে। এ বিষয়ে কথা হয় যশোর ভ্যাট কমিশনার জাকির হোসেনের সঙ্গে। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, এ কমিশনারেটের আওতাধীন ১০ হাজার ৬৬৭ করদাতার মধ্যে এপ্রিল মাসের ৮ হাজার ৯৬৩ জন রিটার্ন জমা দিয়েছেন। অনলাইনে রিটার্ন দাখিলের হার শতভাগের কাছাকাছি।  যেখান থেকে এপ্রিল মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে ২২ কোটি টাকা।  করোনা ভাইরাসের মতো প্রতিকূল পরিবেশে আমরা নিয়মিত অফিস রেখেছি।  আমরা চেষ্টা করছি করদাতাদের সেবা দেওয়ার।

অন্যদিকে এ বিষয়ে কুমিল্লা ভ্যাট কমিশনার আজিজুর রহমান বলেন, কুমিল্লার এ অফিসের আওতাধীন নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৬ হাজার ৭৫৪টি। এপ্রিল মাসে রিটার্ন দাখিল করেছে ২ হাজার ৫৬৪টি। এর মধ্যে অনলাইনে ২ হাজার ৩৭২টি, ম্যানুয়াল ১৯২টি। এপ্রিল মাসে রাজস্ব আদায় হয় ৩১৫ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। যা গতবছর একই সময় ছিল ২৯২ কোটি টাকা।

গত ২৬ মার্চ থেকে কার্যত সারা দেশ লকডাউন। সাত দফায় ৩০ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে সাধারণ ছুটি।  কোনো কোনো জেলায় লকডাউন কিছুটা শিথিল করা হলেও সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় দোকানপাট, শপিংমলসহ শিল্প-কারখানা বন্ধ। এ পরিস্থিতিতে রাজস্ব আদায়ে ভাটা পড়ে। তবে লকডাউনের মধ্যে রাজস্ব তথা ভ্যাট আদায়ে কিছু খাত আশার আলো দেখাচ্ছে। মোবাইল অপারেটর, সুপারশপ, ওষুধ, খাদ্যপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, সিগারেট, ব্যাংক, ইন্টারনেট ইত্যাদি।  অন্যদিকে লকডাউন পরিস্থিতিতে অনলাইনে ভ্যাট রিটার্ন দাখিলে জোর দিচ্ছে এনবিআর। যদিও প্রতিষ্ঠানগুলোও অনলাইন রিটার্ন দাখিলে এখনো পুরোপুরি অভ্যস্থ নয়। রহমান/এসএম