অর্থনীতি

রাজধানীর শপিংমল-মার্কেটে ক্রেতা নেই, লোকসানের শঙ্কায় দোকানিরা

রাজধানীর শপিংমল-মার্কেটগুলোয় ক্রেতার অভাবে বেচাকেনা নেই বলে জানিয়েছেন ব‌্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, আশা অনুযায়ী মুনাফা দূরে থাক, লোকসান গোনার শঙ্কায় এখন দিন কাটছে।   

ঈদের আগের দিন (শুক্রবার) রাজধানীর শপিংমল-মার্কেট ঘিরে কোনো চাঞ্চল্য নেই।  দোকান মালিক-কর্মচারীরা অলস সময় কাটাচ্ছেন। তাদের মুখে চিন্তার ছাপ। শপিংমল-মার্কেটগুলোয় কোনো প্রাণচাঞ্চল্য নেই। দোকান মালিক-কর্মচারীরা অলস সময় কাটাচ্ছেন। তাদের মুখে চিন্তার ছাপ। ফুটপাতে যে ক’টি দোকান আছে, সেগুলোও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারির কারণে ঠিকমতো বসতে পারছে না।

রাজধানীর অন্যতম শপিংমল ‘বসুন্ধরা শপিংমলে’ক্রেতাদের কিছুটা ভিড় দেখা গেলেও বেচাকেনা তেমন হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন ব‌্যবসায়ীরা। শপিংমলে ঢোকার সময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর গুরুত্ব দিলে ভেতরে ক্রেতারা মাস্ক খুলে ফেলছেন।  

নামি-দামি ব্র‌্যান্ডের দোকানগুলোতে কিছুটা বেচাকেনা হতে দেখা গেছে। তবে, দোকানিরা জানিয়েছেন বেচাকেনা যতটা হওয়ার কথা, তার সিকিভাগও  হচ্ছে না।  

হাতিরপুলে দেশের প্রথম সুপার মার্কেট ‘ইস্টার্ন প্লাজা’য়ও ক্রেতা নেই। এই মার্কেটে প্রায় ৪০০ দোকান রয়েছে।  প্রায় দোকানই বন্ধ। যেগুলো খোলা রয়েছে, সেগুলোতেও ক্রেতা নেই।  জানতে চাইলে ইস্টার্ন প্লাজার একজন দোকান মালিক বলেন, ‘বেচাকেনা নেই, কর্মচারীদের ঈদ বোনাস দূরের কথা, বেতনও দিতে পারবো না। ’ 

একই মার্কেটের ‘আঙ্গিনা শাড়ি ঘরের’ম্যানেজার আব্দুল কাদের বলেন, ‘করোনায়  দীর্ঘদিন দোকান বন্ধ ছিল।  গত জুনে দোকান খোলার পর থেকে বেচাকেনার অবস্থা খুবই খারাপ। মানুষের হাতে টাকা না থাকলে তারা নতুন পোশাক কিনবে কী দিয়ে? আশা করেছিলাম, কোরবানির ঈদে কিছুটা বেচাকেনা হবে। কিন্তু খুবই খারাপ অবস্থা যাচ্ছে।  স্বাভাবিক সময়ে যেখানে প্রতিদিন গড়ে ৩০/৩৫ হাজার টাকার পণ‌্য বিক্রি হতো, এখন তা ৩/৪ হাজার টাকায় নেমেছে। কোনো কোনো দিন একেবারেই বিক্রি হয় না। 

এলিফ‌্যান্ট রোডে মাল্টিপ্ল‌্যানের সামনের ফুটপাতের দোকান। (ছবি: প্রতিবেদক)

 

এই মার্কেটের‘চয়নিকা শাড়ি ঘরের’ম্যানেজার মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘গত ৭ দিন ধরে কোনো বিক্রি নেই।  দোকানে ৩ জন সেলসম্যান। তাদের বেতন দেওয়াই কঠিন হয়ে পড়বে। দোকানের মালিক বিদেশে থাকেন। তাকেই বা কী হিসাব দেবো, তাই ভাবছি। ’

জুতা, স্যান্ডেল, শিশুদের পোশাক ও বড়দের পাঞ্জাবির জন্য এলিফ্যান্ট রোডের দোকানগুলোর সুনাম রয়েছে। এসব দোকানও এখন প্রায় ক্রেতাশূন্য। দোকানিরা জানিয়েছেন, মূল্যছাড় দিয়েও ক্রেতা টানা যাচ্ছে না।  

রিসেন্ট সুজের একজন সেলসম্যান বলেন, ‘আমাদের দোকানে  দেশি-বিদেশি সব ধরনের জুতা স্যান্ডেল রয়েছে।  কিন্তু ক্রেতা নেই।  প্রতিদিন যেখানে ৪০/৫০ হাজার টাকা বিক্রি হতো, এখানে সেখানে সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত মাত্র ৮০০ টাকা বিক্রি করেছি। ’

মাল্টিপ্ল্যান শপিংমলটি বন্ধ।  এরপাশেই ভ্যানে করে কবির আহমেদ নামে একজন পুরুষের বিভিন্ন ধরনের পায়জামা বিক্রি করছিলেন। তিনি ভ্যান ঠেলে পাশের গলির ভেতর নিয়ে যান।  জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এমনিতেই বেচাকেনা নাই।  এখানে কোনো ভিড় নাই।  তবু পুলিশ বেচাকেনা করতে দিচ্ছে না।  আমরা কী করবো?’

এলিফ্যান্ট রোডের ফুটওভার ব্রিজ থেকে নীলক্ষেত পর্যন্ত এই জায়গায় স্বাভাবিক সময়েও ক্রেতাদের ভিড় থাকে। এই এলাকায় পাঞ্জাবির দোকান ‘মোনালিসা’র ম্যানেজার আব্দুল আলীম বলেন, ‘বেচাকেনা কী হচ্ছে, তা জানতে না চেয়ে একটা পাঞ্জাবি কিনে সাহায্য করুন।’

ইস্টার্ন প্লাজায় ক্রেতাশূন‌্য দোকান। (ছবি: প্রতিবেদক)

 

একই আকুতি জানালেন প্রিয়াংকা শপিং মলের সামনের ফুটপাতের দোকানি জামাল। 

তবে, গাউসিয়া সুপার মার্কেটের সামনে ফুটপাতজুড়ে  কিছুটা ভিড় দেখা গেছে।  তবে, দোকানিরা বলছেন, ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেলেও বিক্রি কম। 

নিউমার্কেট, চন্দ্রিমা মার্কেটসহ ধানমন্ডি রোডে রাপা প্লাজাসহ অন্যান্য শপিংমলেরও একই অবস্থা বলে জানিয়েছেন ব‌্যবসায়ীরা।