অর্থনীতি

চামড়ার দাম কমলো অর্ধেক, বাণিজ‌্য মন্ত্রণালয়কে দুষছেন ব‌্যবসায়ীরা

এবার সরকারের বেঁধে দেওয়া দর থেকে কাঁচা চামড়ার দাম প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। রাজধানীতে প্রতি বর্গফুট কোরবানির পশুর চামড়া কেনা-বেচা হচ্ছে মাত্র ১৫-২০ টাকায়। ফড়িয়া-মৌসুমি ব্যবসায়ীরা এই দামেই কোরবানিদাতাকে চামড়া ছাড়তে বাধ্য করেছেন।  চামড়ার দাম অর্ধেকে নামার জন‌্য বাণিজ‌্য মন্ত্রণালয়কে দুষছেন ট‌্যানারি ব‌্যবসায়ীরা।    

চলতি বছর ঢাকায় লবণজাত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম সরকার বেঁধে দেয় ৩৫-৪০ টাকা।  গতছর একই পরিমাণ চামড়ার  ‍দাম ছিল ৪০-৪৫ টাকা।  দাম নির্ধারণী পর্যায়েই শতকরা ২৩ থেকে ২৯ শতাংশ হারে কমিয়ে ছিল সরকার।  এখন কাঁচা চামড়া কেনাপর্যায়ে দাম আরও ৫০ শতাংশ কমলো।

রাজধানীতে চামড়ার বৃহত্তম আড়ৎ পোস্তায় প্রতিপিস চামড়া গড়ে ৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।  আর আমিনবাজারে বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকায়।  এই দুই জায়গার সাড়ে তিন শত আড়তেই একই দামে কেনাবেচা হচ্ছে।  তবে, রাজধানীর সায়েন্সল্যাব এলাকার অস্থায়ী হাটে বড় আকারের ভালো মানের চামড়া ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে।  যদিও মাঠপর্যায়ে প্রতিপিস চামড়া ফড়িয়া ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা মান ও আকার ভেদে কিনেছেন মাত্র ২৫০ থেকে ৫৫০ টাকায়। অন্যদিকে কোরবানিদাতারা মাদ্রাসায় চামড়া দিয়েছেন বিনা দামে।  

জানতে চাইলে কামরাঙ্গীচর হাফেজিয়া মাদ্রাসার একজন শিক্ষক বলেন, ‘১৩০ পিস চামড়া নিয়ে এসেছি। কিন্তু চামড়ার দাম খুব কম।  ২২০০-২৭০০ টাকার চামড়া এবার মাত্র ৫০০ টাকায়  বিক্রি করেছি।’

সায়েন্সল্যাবে চামড়া কিনতে আসা মিতালি ট্যানারির কর্ণধার মাকসুদ আলম বলেন, ‘চলতি মৌসুমে আমাদের লক্ষ্য ৫ লাখ চামড়া কেনা। আজ সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কিনেছি ৪ হাজার চামড়া। এসব চামড়া ৪৫০-৬০০ টাকার মধ্যে কিনেছি।’

আমিনবাজারের আড়ৎদার মো. আমজাদ হোসেন বলেন, ‘এখানে আসা বেশিরভাগ চামড়ার দাম গড়ে ৪৫০ টাকা।  বিকাল চারটা পর্যন্ত এখানে হাজার বিশেক চামড়া এসেছে।’

মাঠপর্যায়ে চামড়ার দাম কমার কারণ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্ক্রিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আফতাব আহমেদ বলেন, ‘একটি চামড়া কেনার পর ট্যানারি মালিকের কাছে পৌঁছানো পর্যন্ত প্রতি বর্গফুটের জন্য ৮ টাকা বাড়তি খরচ পড়ে। এই হিসাবে মাঠপর্যায়েও সমপরিমাণ কমে কেনার কথা।  কোথায়ও যদি এর চেয়েও কম দামে কিনে থাকে, তাহলে তা বিচ্ছিন্ন ঘটনা।’

এক প্রশ্নের জবাবে আফতাব আহমেদ বলেন,  ‘চামড়ার দাম নির্ধারণের প্রক্রিয়ায় অস্পষ্টতা আছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উচিত ছিল—লবণজাত চামড়ার পাশাপাশি মাঠপর্যায়ে কাঁচা চামড়ার দরও নির্ধারণ করে দেওয়া। তাহলে কোনো স্তরের বিক্রেতা পর্যায়েই অসন্তোষ থাকতো না।  তা না করায় কোরবানিদাতারাও মনে করছেন, তারা লবণজাত দামেই বিক্রি করবেন।’

একই সংগঠনের মহাসচিব টিপু সুলতান বলেন, ‘দাম কম পেলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় মাদ্রাসাগুলো। তারা সমপরিমাণ চামড়া থেকে বেশি টাকা পায় না। ’ মাদ্রাসগুলো বিনামূল্যে চামড়া পাওয়ায় তাদের কোনো ঝুঁকি নেই বলেও মন্তব‌্য করেন তিনি।’

শাহ আলম খান/এনই