অর্থনীতি

গার্মেন্ট ব্যবসায়ী সংগঠনের বাইরের কারখানার ৫৮ হাজার শ্রমিক ছাঁটাই

গার্মেন্ট ব্যবসায়ীদের সংগঠনের সদস্য নয়, করোনার সময়ে এমন কারখানার ৫৮ হাজার শ্রমিক ছাঁটাই (লে-অফ) করা হয়েছে। 

গত জুনে সম্পন্ন করা জরিপের এ তথ্য বৃহস্পতিবার (১৩ আগস্ট) জানিয়েছে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর এন্টাপ্রেনারশিপ ডেভেলপমেন্ট (সিইডি)-এর ম্যাপড ইন বাংলাদেশ (এমআইবি)।

তার আগে বুধবার (১২ আগস্ট) ‘বাংলাদেশে সদস্যপদবিহীন তৈরি পোশাক কারখানাগুলোর ওপর করোনাভাইরাসের প্রভাব’ শিরোনামে একটি ওয়েবিনারের আয়োজন করা হয় বলে এমআইবির পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

সদস্যপদবিহীন কারখানা বলতে ওইসব কারখানার কথা বলা হয়েছে, যেগুলো তৈরি পোশাকখাতের প্রধান মালিক সমিতি বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক এবং রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) এবং বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুতকারক এবং রপ্তানিকারক সমিতি (বিকেএমইএ)-এর সদস্য নয়।  

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর এন্টাপ্রেনারশিপ ডেভেলপমেন্ট (সিইডি) এবং ব্র্যাক জেমস পি গ্রান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথ যৌথভাবে জরিপটি সম্পন্ন করেছে। 

জরিপের অংশ হিসেবে ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রাম জেলার ৫৫৫টি রপ্তানিমুখী সদস্যপদবিহীন পোশাক কারখানাকে টেলিফোন করে জরিপ করা হয়।  যেখানে ৪৪৮টি সদস্যপদবিহীন পোশাক কারখানা অংশ নেয়। 

ওয়েবিনারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. অতনু রাব্বানী ব্র্যাক জেমস পি গ্রান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথ-কে প্রতিনিধিত্ব করে ওয়েবিনারে জরিপের ফলাফল তুলে ধরেন।  ফলাফল অনুযায়ী, জরিপ চলার সময়ে অর্থাৎ মধ্য জুনে জরিপ করা ৪৪৮টি কারখানার মধ্যে ৮২ দশমিক ৬ শতাংশ কারখানা, অর্থাৎ ৩৭০টি কারখানা চালু রয়েছে এবং এই সদস্যপদবিহীন কারখানাগুলো গড়ে তাদের উৎপাদন ক্ষমতার ৫৩ দশমিক ৮ শতাংশ ব্যবহার করছে। এপ্রিল মাসে এই কারখানাগুলো গড়ে ২ দশমিক ৩ দিন করে চালু ছিল।  কিন্তু মে মাসে গড়ে ৯ দশমিক ৬ দিন চালু ছিল।

জরিপের সময়ে কারখানাগুলোতে ৮৬ হাজার ৬৯৭ জন শ্রমিক কর্মরত ছিলেন।  করোনাভাইরাসের অতিমারি শুরু হওয়ার পরে এই কারখানাগুলো থেকে ৫৮ হাজার শ্রমিককে ছাঁটাই (লে-অফ) করা হয়েছে। যা কারখানা প্রতি গড়ে ২২৬ জন শ্রমিক। 

ড. রাব্বানী এই সদস্যপদবিহীন কারখানাগুলোর আরও কিছু বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেন। 

ওয়েবিনারে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)-এর গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেমের বক্তব্য অনুযায়ী, সদস্যপদবিহীন কারখানাগুলোর শ্রমিকদের দায়িত্ব নেওয়ার ক্ষেত্রে মালিক সমিতিগুলো যে দূরত্ব মেনে চলছে, সেই কাঁচের দেয়াল ভেঙে ফেলা প্রয়োজন। 

কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর-এর উপমহাপরিদর্শক মো. কামরুল হাসানের মতে সদস্যপদবিহীন কারখানাগুলো বিক্ষিপ্তভাবে থাকার কারণে সরকার ও মালিক সমিতিগুলোর দ্বারস্থ হতে পারছে না। 

বিজিএমইএ’র পরিচালক এবং অনন্ত গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শরীফ জহির বলেন, সদস্যপদবিহীন কারখানাগুলোর মালিকেরা মূলত ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা, যারা অবকাঠামাগত সুবিধা পেলে সত্যিকারের উদ্যোক্তায় অবতীর্ণ হবেন এবং দেশের জন্য ভূমিকা রাখতে পারবেন। 

ব্র্যাকের পরিচালক ব্যারিস্টার জেনেফা জব্বার মনে করেন, স্বচ্ছতার জন্য সদস্যপদবিহীন কারখানাগুলোর মজুরি দেওয়ার পদ্ধতি ডিজিটাইজড করা প্রয়োজন।