অর্থনীতি

নৌপথ খননে বাড়ছে বিশ্বব্যাংকের ঋণ

চট্টগ্রাম-আশুগঞ্জ-ঢাকা নৌরুট খনন কাজে বাড়ছে বিশ্বব‌্যাংকের ঋণ।  এই রুট খননে আগে বিশ্বব‌্যাংকের ঋণ ছিল ২ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা।  এবার নতুন করে এই দাতা সংস্থা দিচ্ছে আরও  ১৭২ কোটি ৮০ লাখ টাকা।  এতে সংস্থাটির ঋণের পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে ৩ হাজার ৫২ কোটি ৮০ লাখ টাকা।  

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ‘চট্টগ্রাম-ঢাকা-আশুগঞ্জ নৌ-করিডোর’ প্রকল্পের মোট ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ৩ হাজার ৩৪৯ কোটি ৪২ লাখ টাকা।   বিশ্বব‌্যাংকের ঋণ বাদ দিলে সরকারি অর্থায়ন দাঁড়াচ্ছে ২৯৬ কোটি ৬২ লাখ টাকা।

বিশ্বব‌্যাংক থেকে এই ঋণ নেওয়ার বিষয়টি  মঙ্গলবার (২৯ সেপ্টেম্বর)  জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)-এর সভায় উপস্থাপন করা হবে।

মন্ত্রণালয়-সূত্রে জানা গেছে, এই প্রকল্প ২০১৬ সালের ১ জুলাই শুরু হয়ে ২০২৪ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে, কাজ শুরুর কিছু দিন পর এই রুটে নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার ঠেঙ্গারচরসহ বেশকিছু ডুবোচর জেগে ওঠে।   এতে কয়েক দশকের পুরনো নৌ-রুটের প্রায় তিন কিলোমিটার দক্ষিণে সরে যায়। একই কারণে যথাসময়ে কাজের অগ্রগতিও সম্ভব হয়নি।  ফলে এই খনন কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ হওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দেয়।  এ কারণে সময় বাড়ানোসহ বেশকিছু বিষয়ে প্রকল্প সংশোধনের উদ‌্যোগ নেয় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। এরই অংশ হিসেবে আগামী একনেক সভায় ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের সময় বাড়ানোর সুপারিশ করা হবে।

জানতে চাইলে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সিনিয়র সহকারী প্রধান (নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়) মো. নাজমুল হাসান বলেন, ‘প্রকল্পটি সংশোধনের জন্য একনেক সভায় উপস্থাপন করা হবে।  দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।  প্রকল্পটির আওতায় ঢাকা-আশুগঞ্জ-চট্টগ্রাম নৌপথের গভীরতা বৃদ্ধি, জেটি, ঘাট ও পন্টুন স্থাপন, বিভিন্ন স্থানে নৌবন্দর উন্নয়ন, যাত্রী টার্মিনাল নির্মাণ ও সদরঘাট নৌ-টার্মিনালের ওপর চাপ কমাতে অত্যাধুনিক করে ঢাকায় শ্মশানঘাট যাত্রী টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। ’

মো. নাজমুল হাসান বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রধান অভ্যন্তরীণ নৌ-বাণিজ্যিক রুট এই ঢাকা-আশুগঞ্জ-চট্টগ্রাম নৌ-করিডোর। যা আঞ্চলিক বাণিজ্য সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সদরঘাটের ওপর চাপ অনেকটাই কমে যাবে।’

সংশ্লিষ্ট  সূত্রে আরও জানা গেছে, এই নৌ-করিডোর বরাবর ৬ জায়গায় নৌযানগুলোর ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। প্রাথমিকভাবে ষাটনল, চরভৈরবী, চাঁদপুর, মেহেন্দীগঞ্জে, সন্দ্বীপ ও নলচিরা স্থানকে নির্বাচন করা হয়েছে।  প্রকল্পের আওতায় চারটি প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল নির্মাণ ও উন্নয়ন করা হবে। পানগাঁও ও আশুগঞ্জ টার্মিনাল উন্নয়ন করা হবে।

প্রকল্পের আওতায় ভৈরব বাজার, আলু বাজার, হিজলা, হরিণা, মজু চৌধুরী, ইলিশা (ভোলা) ভেদুরিয়া, লাহারহাট, বদ্দারহাট, দৌলতখাঁ, চেয়ারম্যান ঘাট, সন্দ্বীপ, তজুমদ্দিন, মনপুরা ও তমরুদ্দিনে ১৫টি লঞ্চ ল্যান্ডিং স্টেশন নির্মাণ করা হবে।

ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, নরসিংদী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জ, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, বরিশাল ও ভোলা জেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে।

৩০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রুটে বরিশালসহ অন্যান্য রুটের সংযোগ রয়েছে।  এ রুটের সঙ্গে নারায়ণগঞ্জ ও বরিশাল যুক্ত হলে মোট নৌপথের পরিমাণ দাঁড়াবে ৯০০ কিলোমিটার।