অর্থনীতি

অর্থমন্ত্রীর নির্দেশ পালনে ব‌্যর্থ ২৬ বিমা কোম্পানি

পুঁজিবাজারে বাইরে থাকা ২৭টি বিমা কোম্পানিকে তালিকাভুক্ত হওয়ার নির্দেশনা দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।  ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে এক নির্দেশনায় বিমা কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য তিন মাস সময়ও বেঁধে দিয়েছিলেন তিনি।  তার এই নির্দেশন অনুযায়ী বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) নির্দেশনাও জারি করে।  কিন্তু গত একবছরে মাত্র একটি কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়েছে।  তালিকাভুক্ত হতে পারেনি বাকি ২৬ বিমা কোম্পানি।   

এ বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘এই বিষয়ে মনিটরিং করা হচ্ছে।  ইতোমধ্যে এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে।  চলতি বছরের মধ্যে আরও ২/৩ কোম্পানি তালিকাভুক্তির জন্য আবেদন করবে।  অর্থমন্ত্রীর বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে যারা পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়নি, তাদের বিষয়ে আইডিআরএ খোঁজ নিচ্ছে।’

এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘যতদূর জানা গেছে, এসব বিমা কোম্পানি পুঁজিবাজারে না আসার কারণ হিসেবে আইনগত জটিলতা রয়েছে।’ বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নিয়ম অনুযায়ী কোনো কোম্পানি শেয়ার বাজারে আসতে হলে তার পরিশোধিত মূলধন ন‌্যূনতম ৫০ কোটি টাকা হতে হয়। থাকতে হয় হালনাগাদ অডিটও।  কিন্তু পুঁজিবাজারের বাইরে থাকা বেশির ভাগ বিমা কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৩০ কোটি টাকার বেশি নয়। তাদের কোনো হালনাগাদ অডিটও নেই। ফলে, এসব কোম্পানি শেয়ারবাজারে আসতে পারছে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের ওই কর্মকর্তা জানান, ‘বিমা কোম্পানিগুলো এখন বলছে, করোনার কারণে তারা পাঁচ-ছয় মাস কোনো কাজ করতে পারেনি।  ফলে পুঁজিবাজারে আসার জন্য সেসব নিয়ম-কানুন অনুসরণ করা প্রয়োজন, তা-ও সম্পূর্ণ করতে পারেনি। এ ক্ষেত্রে তারা আরও সময় চেয়েছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, এই বছরও তাদের পুঁজিবাজারে আসা সম্ভব হবে না।’

গত বছর ১৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ফোরাম, সব বিমা কোম্পানির চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও  মুখ্য নির্বাহীদের নিয়ে এক মতবিনিময় সভা করেন।  ওই সভায় তিনি বলেন, ‘তিন মাসের মধ্যে যেসব কোম্পানি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হতে পারবে না, তাদের লাইসেন্স সাময়িক বাতিল করা হবে।  এরপর কয়েকটি কোম্পানিকে একীভূত হওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে।  যেসব কোম্পানি এরপরও শেয়ারবাজারে আসতে পারবে না, সেগুলোর লাইসেন্স বাতিল করা হবে। ’  

এরপর ২৭ বিমা কোম্পানিকে চিঠি দিয়ে ওই বিমা কোম্পানিগুলোকে তিন মাসের মধ্যে (ডিসেম্বর-২০১৯) পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার নির্দেশ দেয়  আইডিআরএ। একইসঙ্গে তালিকাভুক্ত হতে ব‌্যর্থ হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হয়। 

ওই নির্দেশনার পরও যে ২৬ বিমা কোম্পানি পুঁজিবাজারের আসতে পারেনি, সেগুলো হলো—বায়রা লাইফ, গোল্ডেন লাইফ, হোমল্যান্ড লাইফ, সানফ্লাওয়ার লাইফ, বেস্ট লাইফ, চার্টার্ড লাইফ, এনআরবি গ্লোবাল লাইফ, প্রোটেকটিভ ইসলামি লাইফ, সোনালী লাইফ, জেনিথ ইসলামি লাইফ, আলফা ইসলামি লাইফ, ডায়মন্ড লাইফ, গার্ডিয়ান লাইফ, যমুনা লাইফ, মার্কেন্টাইল ইসলামী লাইফ, স্বদেশ লাইফ, ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ, এলআইসি বাংলাদেশ, ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স, মেঘনা ইন্স্যুরেন্স, সাউথ এশিয়া ইন্স্যুরেন্স, ইসলামি কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্স, ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স, দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, সেনা কল্যাণ ইন্স্যুরেন্স ও সিকদার ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড।

উল্লেখ‌্য, বিমা আইন অনুযায়ী কোনো কোম্পানি নিবন্ধিত হওয়ার তিন বছরের মধ্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে হয়।  এ সময়ের মধ্যে কোনো কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসতে না পারলে যুক্তিসঙ্গত কারণ দেখিয়ে আরও দুই বছর সময় নিতে পারে।  এরপরও ব‌্যর্থ হলে প্রতিদিনের জন্য জরিমানা গুনতে হবে।