অর্থনীতি

ব্লু ইকোনমির সম্ভাবনা কাজে লাগাতে প্রযুক্তিগত সহায়তা দেবে নরওয়ে

বাংলাদেশে সুনীল অর্থনীতির (ব্লু ইকোনমি) বিশাল সম্ভাবনা কাজে লাগাতে প্রযুক্তিগত সহায়তা দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন নরওয়ের রাষ্ট্রদূত এসপেন রিকটার-ভেন্ডসেন। তিনি বলেছেন, ‘সমুদ্রসম্পদ আহরণে ঐতিহ্যগতভাবে নরওয়ের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা আছে। এ অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ ব্যাপকভাবে লাভবান হতে পারে।’

রোববার (১১ অক্টোবর) শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের সঙ্গে বৈঠককালে এসব কথা বলেন নরওয়ের রাষ্ট্রদূত। শিল্প মন্ত্রণালয়ে এ বৈঠককালে আরও উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব বেগম পরাগ।

বৈঠকে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতিতে ব্লু ইকোনোমির সম্ভাবনা কাজে লাগানোর কৌশল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এছাড়া, শিপ রিসাইক্লিং শিল্পের উন্নয়নে নরওয়ের কারিগরি সহায়তা, এ শিল্পে কর্মরত লোকদের প্রশিক্ষণ, সামুদ্রিক আবর্জনা ও শিল্পবর্জ্য ব্যবস্থাপনা, সামুদ্রিক মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, আধুনিক প্রযুক্তিতে শুটকি মাছ সংরক্ষণসহ অন্যান্য বিষয় আলোচনায় স্থান পায়।

বৈঠকে শিল্পমন্ত্রী বাংলাদেশে পরিবেশবান্ধব শিপ রিসাইক্লিং শিল্পের উন্নয়নে নরওয়ের দীর্ঘদিনের কারিগরি সহযোগিতার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘এর ফলে বাংলাদেশের জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প ক্রমেই প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পাচ্ছে।’

এ শিল্পের জনবলের দক্ষতা বাড়াতে নরওয়ে থেকে প্রশিক্ষক পাঠানো ও কারিগরি সহায়তা বাড়ানোর জন্য রাষ্ট্রদূতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন শিল্পমন্ত্রী।

বাংলাদেশের বিশাল সমুদ্রসীমা সুনীল অর্থনীতির ক্ষেত্রে বিরাট সম্ভাবনা তৈরি করেছে, উল্লেখ করে শিল্পমন্ত্রী বলেন, ‘এর ফলে সমুদ্রসম্পদকেন্দ্রিক ব্যাপক শিল্পকারখানা গড়ে তোলার সুযোগ হয়েছে।’

সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং ড্রাই ফিস শিল্পের প্রসারে নরওয়ের প্রযুক্তিগত সহায়তা কামনা করেন নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। একই সঙ্গে তিনি পরিবেশবান্ধব সবুজ শিল্পায়নের লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশে শিল্পবর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নরওয়ের সহায়তা অব্যাহত রাখার তাগিদ দেন।

নরওয়ের রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘বাংলাদেশে শিপ রিসাইক্লিং শিল্পের উন্নয়নে নরওয়ে দশ বছর ধরে সহযোগিতা করে আসছে। ফলে ইতোমধ্যে বাংলাদেশে এ শিল্পের ব্যাপক উন্নতি ঘটেছে।‘

তিনি এ শিল্পের আধুনিকায়ন, সমুদ্রসম্পদ আহরণ, সামুদ্রিক মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, ড্রাই ফিস শিল্প স্থাপন এবং সমুদ্র ও শিল্পবর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নরওয়ের কারিগরি ও প্রযুক্তিগত সহায়তা অব্যাহত থাকবে বলে জানান।

শিল্পমন্ত্রীর সঙ্গে ইরানি রাষ্ট্রদূতের বৈঠক: বাংলাদেশে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ রেজা নাফার শিল্পমন্ত্রীর সঙ্গে তার দপ্তরে সাক্ষাৎ করেছেন। এ সময় তারা দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা করেন।

ইরানের রাষ্ট্রদূত করোনা মহামারি মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ‘মহামারির মধ্যেও বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক অর্জন প্রশংসনীয় ও অনুকরণীয়।’

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করেন ইরানের রাষ্ট্রদূত।

শিল্পমন্ত্রী বলেন, ‘মুসলিম ভ্রাতৃপ্রতিম দেশ হিসেবে ইরানের সঙ্গে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক সম্পর্ক বিদ্যমান। এ সম্পর্ক আরও দৃঢ় করতে বাংলাদেশ আন্তরিক।’

অভিন্ন স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করার ওপর গুরুত্ব দেন শিল্পমন্ত্রী। তিনি শিল্প খাতে দ্বিপাক্ষিক সহায়তার ক্ষেত্র চিহ্নিত করে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রদূতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এ ধরনের প্রস্তাব পেলে বাংলাদেশ তা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে বলে জানান নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন।