অর্থনীতি

আন্তর্জাতিক হিসাব মান মানছে না রেনউইক যজ্ঞেশ্বর

আর্থিক প্রতিবেদন তৈরিতে আন্তর্জাতিক হিসাব মান (আইএএস) মানছে না পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রেনউইক যজ্ঞেশ্বর অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড। ফলে গত ৩১ মার্চ সমাপ্ত হওয়া কোম্পানির নয় মাসের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে নানা অসঙ্গতি দেখা দিয়েছে।

এদিকে, চলতি বছরের ৩১ মার্চ সমাপ্ত হিসাব বছরের আর্থিক প্রতিবেদনে কারেন্ট ট‌্যাক্স, বিলম্বিত কর, রিলেটেড পার্টি ট্রানজেকশনসহ বেশকিছু অসঙ্গতি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) নজরে এসেছে। আর্থিক প্রতিবেদন তৈরিতে আন্তর্জাতিক হিসাব মান না মানাসহ হিসাবে নানা অসঙ্গতির বিষয়ে কোম্পানির কাছে ব্যাখ্যাও চেয়েছে ডিএসই।

চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসে অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, কোম্পানিটি কারেন্ট ট‌্যাক্স দিয়েছে ১৪ লাখ টাকা। আগের বছর একই সময়ে এই ট‌্যাক্সের পরিমাণ ছিল ১৯ লাখ টাকা। যা আন্তর্জাতিক হিসাব মান অনুযায়ী হিসাব করা হয়নি। আলোচ্য সময়ে কোম্পানির কম্প্রিহেনসিভ আয়ে আয়কর বাবদ ব্যয় সঠিকভাবে গণনা করেনি। এর মাধ্যমে কোম্পানিটি আন্তর্জাতিক হিসাব মানের (আইএএস) প্যারাগ্রাফ ৪৬ এবং ৮১ (সি) অনুযায়ী কমপ্লায়েন্স পরিপালনে ব্যর্থ হয়েছে।

এছাড়া, কোম্পানিটি ২০২০ সালের ৩১ মার্চ এবং ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ সময়ের আর্থিক প্রতিবেদনে বিলম্বিত কর, সম্পদ/দায়ের বিষয় সঠিকভাবে গণনা করা হয়নি এবং আর্থিক প্রতিবেদনে নোট দেয়নি। যা আন্তর্জাতিক হিসাব মানের প্যারাগ্রাফ ৪৭ এবং ৮১ (জি) এর লঙ্ঘন। একই সঙ্গে গত দুই বছরের বিলম্বিত কর, সম্পদ/দায়ের সঠিক তথ্য প্রকাশ করেনি প্রতিষ্ঠানটি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসইর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো তাদের আর্থিক প্রতিবেদনে নানা তথ্য সঠিকভাবে তুলে ধরছে কি না, তা সব সময় নজরে রাখে ডিএসই। একই সঙ্গে কোনো ধরনের অসঙ্গতি পেলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। কোম্পানির পক্ষ থেকে ব্যাখ্যা পেলে তা যাচাই-বাছাই করা হয়। একই সঙ্গে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হয়। রেনউইক যজ্ঞেশ্বরের যেসব অসঙ্গতি পাওয়া গেছে, সেগুলোর ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। তা পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে ডিএসই। একই সঙ্গে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকেও তা অবহিত করা হচ্ছে।’

রেনইউক যজ্ঞেশ্বর ২০২০ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত আর্থিক প্রতিবেদনে রিলেটেড পার্টি ট্রানজেকশন সম্পর্কে কোনো তথ্য দেয়নি। অথচ আন্তর্জাতিক হিসাব মানের প্যারাগ্রাফ ১৭ অনুযাযী, রিলেটেড পার্টি ডিসক্লোজারে শর্ট টার্ম এমপ্লয়িজ বেনিফিট, পোস্ট এমপ্লয়মেন্ট বেনিফিট এবং অন্যান্য দীর্ঘ মেয়াদী বেনিফিট, টার্মিনেশন বেনিফিট এবং শেয়ারবেজড পেমেন্ট প্রকাশ করতে হয়। কিন্তু কোম্পানিটি তা করেনি। ফলে আইএএসের প্যারাগ্রাফ ১৭ লঙ্ঘন করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

রেনইউক যজ্ঞেশ্বর অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আল ওয়াদুদ আমিন রাইজিংবিডিকে বলেছেন, ‘আর্থিক প্রতিবেদনের বিষয়টি জিএম-ফাইন্যান্স দেখেন। তিনি এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন।’

রেনইউক যজ্ঞেশ্বর অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার (ফাইন্যান্স) মেহেদী হাসান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আর্থিক প্রতিবেদন তৈরিতে নানা অসঙ্গতির বিষয়ে ডিএসই আমাদেরকে একটি চিঠি দিয়েছে। এটা নিয়ে আমরা কাজ করছি। চিঠির ব্যাখ্যা দিতে সময় লাগবে।’

রেনইউক যজ্ঞেশ্বর অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের কোম্পানি সচিব জেবুন নাহার বলেন, ‘কোম্পানির আর্থিক হিসাবে যে অসঙ্গতি আছে, তা নিয়ে কাজ চলছে।’