অর্থনীতি

করোনা শনাক্তের ১ বছর: অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে ওঠায় সাফল্য 

দেশে করোনাভাইরাস শনাক্তের এক বছর পূর্তি হলো আজ। করোনাসৃষ্ট দুর্যোগকালে আমাদের অর্থনৈতিক যে ক্ষতি হতে পারে বলে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ পূর্বাভাস দিয়েছিল সরকারের দ্রুত কিছু পদক্ষেপের কারণে তা হয়নি। এমনকি ক্ষতি অনেকটাই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। 

পাশাপাশি করোনা পরবর্তী স্থবির হয়ে পড়া দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ, শ্রমবাজারে নতুন প্রবেশকারীদের জন্য কর্মসংস্থান তৈরির প্রতি বাড়তি মনোযোগ দিতে হবে বলেও তারা রাইজিংবিডিকে জানান।

করোনাভাইরাস অর্থনীতিতে এক মহাবিপর্যয় ডেকে আনে। চীনে প্রথম ভাইরাসটি শনাক্ত হলেও গত বছর ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী চিহ্নিত হয়। এই এক বছর বিশ্ব অর্থনীতির মন্দা প্রভাব বাংলাদেশের অর্থনীতির উপরও পড়েছে। আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা বিশ্ব ব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) সহ অন্যান্য সংস্থা আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের ধাক্কা লাগবে। কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব হবে না। তবে এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল দাতা সংস্থাগুলোর আগাম শঙ্কার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বলেছেন, করোনাভাইরাস বিশ্ব অর্থনীতিকে প্রবলভাবে নাড়া দিয়েছে, তার কিছুটা প্রভাব আমাদের অর্থনীতিতেও পড়বে। তবে দাতা সংস্থাগুলো যতটা বলছে ততটা নয়। বাংলাদেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে।

অর্থনীতিবিদ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই)-এর নির্বাহী পরিচালক ড.হাসান এইচ মনসুর রাইজিংবিডিকে বলেন, করোনাভাইরাসের বর্ষপূর্তি হলো। এক বছরের সার্বিক অবস্থা বিশ্লেষণ করলে বলতেই হবে, দেশের ৯৯ শতাংশ মানুষ কোনো না-কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ভালো অবস্থায় কেউ ছিলেন না।  তবে যতটা ক্ষতির আশঙ্কা করা হয়েছিল ততটা হয়নি। ক্ষতি আরো ভয়াবহ হতে পারতো!

আমাদের অর্থনীতির যতটা ক্ষতি হয়েছে তার প্রায় ৮০ শতাংশ রিকভার করা গেছে। বর্তমান অবস্থা বিরাজ থাকলে আগামী জুলাই-আগস্টের মধ্যে বাকিটা অর্জন করা সম্ভব হতে পারে বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিস (বিআইডিএস) এর গবেষণা পরিচালক ড. জায়েদ বখত বলেন, ‘করোনাভাইরাস মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ার পর জীবনহানী এবং অর্থনৈতিক যতটা ক্ষতির আশঙ্কা করা হয়েছিল, তা হয়নি। দ্রুত কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার কারণে সে ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে। তবে এতে আত্মতুষ্টির কোনো কারণ আছে বলে আমি মনে করি না। করোনাভাইরাস সম্পূর্ণ নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত ঝুঁকি থেকেই যাবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘সরকার সময়মত তৈরি পোশাকখাতে প্রণোদনা ঋণ সহায়তা দেওয়ায় বড় ধরনের বিপর্যয় এড়ানো সম্ভব হয়েছে। এখন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং টিকাদান কর্মসূচি আরো গতিশীল করার উপর গুরুত্ব দেওয়া বিশেষ প্রয়োজন। পাশাপাশি স্থানীয় ও বৈদেশিক বিনিয়োগের প্রতি নজর দিতে হবে।’

গবেষণা প্রতিষ্ঠান ডি-নেট এর নির্বাহী পরিচালক ড. অনন্য রায়হান বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে আমাদের আর্থিক খাতে যে ক্ষতি হয়েছে তার অনেকটাই পূরণ করা সম্ভব হয়েছে। গত বছর এই সময় আমাদের যে আর্থিক অবস্থা ছিল, সেই অবস্থায় ফিরে আসা সম্ভব হয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, করোনার কারণে আমরা অনেক কিছু শিখতে পেরেছি। আমাদের দুর্বল জায়গাগুলো চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে। ফলে আগামীতে বড় ধরনের বিপর্যয় মোকাবিলা করতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে সহজ হবে। তবে একটি বড় পাওয়া হচ্ছে ই-কমার্স খাতের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। এ খাতে অনেক উদ্যোক্তা সৃষ্টি হয়েছে।

আমেরিকা চেম্বার অব কমার্স ও এসএমই ফাউন্ডেশনের সাবেক চেয়ারম্যান আফতাব উল ইসলাম বলেন, সরকারের সময়োচিত পদক্ষেপের কারণে আমরা অনেক বড় বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছি। আমাদের মতো দেশের করোনায় যে ক্ষতি হতে পারে বলে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ ও বিভিন্ন দাতা সংস্থা পূর্বাভাস দিয়েছিল তা হয়নি। বরং আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পাওয়ায় অনেকটা এগিয়ে গেছি। বড় বড় প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। মানুষের মাথাপিছু আয়, জীবনমান সব কিছুতেই ইতিবাচক প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে।

তবে কর্মসংস্থান সৃষ্টির দিকে আরো নজর দিতে হবে। এ জন্য দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করেন আফতাব উল ইসলাম।