অর্থনীতি

লকডাউনে শিল্প-কারখানা খোলা রাখা ইতিবাচক, ব্যবসায়ীদের সাধুবাদ

করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে শিল্প-কারখানা খোলা রেখে ১৪ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত লকডাউন ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। গার্মেন্টস মালিকদের লকডাউনে শিল্প-কারখানা খোলা রাখার দাবিকে প্রাধান্য দিয়ে সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। করোনার সংক্রমণের দ্বিতীয় আঘাতের মধ্যে শিল্প-কারখানা খোলা রাখাকে অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

তাই দ্বিতীয় দফা লকডাউনের পরিপ্রেক্ষিতে অর্থনৈতিক ধাক্কা সামলাতে ঢিলেঢালা-নামমাত্র লকডাউনের পরিবর্তে কঠোরভাবে লকডাউন নিশ্চিত করা, সংক্রমণ প্রতিরোধমূলক মাস্ক ও সাবান-স্যানিটাইজার ব্যাপকভাবে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিতরণ করা এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বরাদ্দ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।

এদিকে, লকডাউনে সরকারের শিল্প-কারখানা খোলা রাখার সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানি শিল্পের মালিকরা। করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় শিল্প-কারখানাগুলোতে তাদের যথেষ্ট প্রস্তুতি রয়েছে। লকডাউনকে ঘিরে তেমন শঙ্কা নেই বলেও মনে করে তারা।

গর্মেন্টস মালিকরা জানান, করোনার কারণে বিশ্বব্যপী লকডাউনে গত বছর এ খাতে যে সংকটে পড়েছে তা থেকে উত্তরণ ও শ্রমিকদের মজুরি, ঈদ বোনাস ও অন্যান্য খরচ মেটাতে কারখানা চালু রাখা জরুরি।  এছাড়া করোনা মোকাবিলায় কারখানাগুলো প্রণোদনা ঋণ নিয়েছিল। ওই ঋণ পরিশোধের সময় ঘনিয়ে আসায় কারখানার উৎপাদন অব্যাহত রাখা প্রয়োজন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম রাইজিংবিডিকে বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে শিল্প-কারখানা খোলা রাখা অর্থনীতির জন্য অবশ্যই ইতিবাচক। আর ব্যবসায়ীরাও চাচ্ছিলেন যে, করোনার মধ্যেও তাদের কাল-কারখানা খোলা থাকুক।  তবে শিল্প-কারখানাসহ সব জায়গায় স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে পরিপালন করা না হলে এ লকডাউন কাজে আসবে না। তখন পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে যাবে। তাই স্বাস্থ্যবিধি পরিপালনের ওপর জোর দিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, লকডাউনে যারা বেশি মাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন অর্থাৎ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বরাদ্দ বাড়ানো ও সুষ্ঠুভাবে বিতরণের ব্যবস্থা নিতে হবে। যেন কর্ম বা চাকরি বা ব্যবসাহীন ব্যক্তি যেন অভুক্ত না থাকে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ রাইজিংবিডিকে বলেন, লকডাউনের মধ্যে শিল্প-কারখানা খোলা রাখাতে হবে।  তা না হলে অর্থনীতির চাকা ঘুরবে না। এটা একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত। তবে করোনা পরিস্থিতিতে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।

বিজিএমইএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আব্দুস সালাম রাইজিংবিডিকে বলেন, রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকখাতসহ বস্ত্রখাতের অন্যান্য সহযোগী শিল্পগুলোকে লকডাউনের আওতামুক্ত রাখায় সরকারকে সাধুবাদ জানাচ্ছি।  সরকারের এ সিদ্ধান্ত অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব রাখবে।  তবে লাকডাউনে যেহেতু শিল্প-কারখানা খোলা থাকবে, সেহেতু সব প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।

প্রসঙ্গত, করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ১৪ এপ্রিল সকাল ৬টা থেকে ২১ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত ঘোষিত লকডাউনে বেশ-কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এর মধ্যে শিল্প-কারখানা খোলা রাখা প্রসঙ্গে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ রয়েছে, শিল্প-কারখানাগুলো স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণপূর্বক নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু থাকবে। তবে শ্রমিকদের স্ব স্বপ্রতিষ্ঠান থেকে নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থাপনায় আনা-নেওয়া নিশ্চিত করতে হবে।