অর্থনীতি

ছয় পণ্যের দাম বেঁধে দিলো কৃষি বিপণন অধিদপ্তর

তেল চিনি ডালসহ ৬টি পণ্যের দাম বেঁধে দিয়েছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। পণ্যগুলো হলো ছোলা, পেঁয়াজ, ভোজ্যতেল, মসুর ডাল, চিনি ও খেজুর।

সোমবার (১২ এপ্রিল) কৃষি মন্ত্রণালয়ের কৃষি বিপণন অধিদপ্তর থেকে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। নতুন দেওয়া দাম অনুযায়ী খুচরা বাজারে ছোলা কেজিপ্রতি ৬৩ থেকে ৬৭ টাকা, পেঁয়াজ ৪০ টাকা, ভোজ্যতেলের এক লিটারের বোতল ১৩৯ টাকা, পাঁচ লিটারের বোতল ৬৬০ টাকা, মোটা দানার মসুর ডাল ৬৭-৬৯ টাকা ও সরু দানার ডাল ৯৭ থেকে ১০৩ টাকায় বিক্রি হবে এবং চিনির খুচরা মূল্য কেজিপ্রতি ৬৭ থেকে ৬৮ টাকায় কিনতে পারবেন ক্রেতারা। সাধারণ মানের খেজুর কেজিপ্রতি ৮০-১০০ ও মধ্যম মানের খেজুর ২০০-২৫০ টাকার বেশি হতে পারবে না।  

প্রতিবদেনে বলা হয়েছে, সাধারণত বছরের অন্যান্য সময়ের চেয়ে রমজান মাসে কয়েকটি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের চাহিদা তুলনামূলকভাবে বেশি থাকে। এ সুযোগে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীকে প্রয়োজনীয় দ্রব্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে অতি মুনাফার চেষ্টা করতে দেখা যায়।  

প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, বর্তমান বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনায় দেখা যায়, আসন্ন রমজানে বাজারে চাহিদা ও সরবরাহ পরিস্থিত স্বাভাবিক থাকবে এবং অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির কোন আশঙ্কা নেই।  ইতোমধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এবং সিটি করপোরেশনের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত মনিটরিং টিম বাজার তদারকি অব্যাহত রেখেছে। এরপরেও কোনো ব্যবসায়ী অসদুপায় বা অন্য কোনো অজুহাতে দাম বাড়ানোর চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বছর আসন্ন রমজানে বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজার পর্যালোচনা, সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ব্যক্তিবর্গ এবং বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে আলাপ আলোচনা করে রমজানে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি দ্রব্যের বাৎসরিক চাহিদা, রমজানের চাহিদা, আমদানির পরিমাণ, অমিদানি মূল্য, উৎপাদনের পরিমাণ, পাইকারী ও যৌক্তিক খুচরা মুল্যের ভিত্তিতে বর্তমান পরিস্থিতির ওপর একটি প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছে।

ছোলা : বাৎসরিক সম্ভব্য চাহিদা রয়েছ ২ দশমিক ১০ লাখ মেট্রিক টন, এর মধ্যে রমজান মাসের চাহিদা শূণ্য দশমিক ৮০ লাখ মেট্রিক টন।  এ বছর জুলাই মার্চে পণ্যটি আমদানি হয়েছে ১ দশমমিক ০১ লাখ মেট্রিক টন। আমদানি মূল্য মূল্য প্রতি কেজি ৫৫ টাকা।  দেশে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে (২০২০-২১) শূন্য দশমিক ০৫ লাখ মেট্রিক টন।  বর্তমানে পাইকারী বাজারে প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫৮ থেকে ৬২ টাকায়, খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৬৩ থেকে ৬৭ টাকায়।

পেঁয়াজ: বাৎসরিক সম্ভব্য চাহিদা রয়েছ ২৬ লাখ মেট্রিক টন, এর মধ্যে রমজান মাসের চাহিদা ৩ লাখ মেট্রিক টন।  এ বছর জুলাই মার্চে পণ্যটি আমদানি হয়েছে ৪ দশমিক ০৭ লাখ মেট্রিক টন।  আমদানি মূল্য উল্লেখ করা হয়নি।  অভ্যন্তরীণ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে (২০২০-২১) ২৯ দশমিক ৫৫ লাখ মেট্রিক টন।  বর্তমানে পাইকারী বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে সর্বচ্চ ৩৫ টাকায়।  খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায় প্রতি কেজি।

ভোজ্যতেল (সয়াবিন) : বাৎসরিক সম্ভব্য চাহিদা ২০ লাখ মেট্রিক টন, এর মধ্যে রমজান মাসের চাহিদা ২ লাখ মেট্রিক টন।  এ বছর জুলাই মার্চে পণ্যটি আমদানি হয়েছে ১৬ দশমমিক ২৩ লাখ মেট্রিক টন।  আমদানি মূল্য প্রতি লিটার ১০৮ টাকা।  অভ্যন্তরীণ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে (২০২০-২১) ২ লাখ মেট্রিক টন। বর্তমানে পাইকারী বাজারে প্রতি ৫ লিটার ক্যান ৬৪০ টাকা, এক লিটার ক্যান ১৩১ টাকা।  খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৫ লিটারের ক্যান ৬৬০ টাকায় এবং ১ লিটারের ক্যান ১৩৯ টাকায়।

মসুর ডাল: বাৎসরিক সম্ভাব্য চাহিদা রয়েছ ৫ লাখ মেট্রিক টন, এর মধ্যে রমজান মাসের চাহিদা শূন্য দশমিক ৮০ লাখ মেট্রিক টন।  এ বছর জুলাই মার্চে পণ্যটি আমদানি হয়েছে ১ দশমিক ৮৩ লাখ মেট্রিক টন।  আমদানি মূল্য প্রতি কেজি ভালো মানের ৭১ টাকা, মোটা বা মধ্যম মানের ৪১ টাকা কেজি। এ বছর অভ্যন্তরীণ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে (২০২০-২১) ২ দশমিক ৬৬ লাখ মেট্রিক টন। বর্তমানে পাইকারী বাজারে প্রতি কেজি মসুর ডাল (মোটা) বিক্রি হচ্ছে ৬১ থেকে ৬৫ টাকায়।  খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৬৭ থেকে ৬৯ টাকায় প্রতি কেজি।

চিনি : বাৎসরিক সম্ভাব্য চাহিদা ১৮ লাখ মেট্রিক টন, এর মধ্যে রমজান মাসের চাহিদা ১ দশমিক ৩৬ লাখ মেট্রিক টন।  এ বছর জুলাই-মার্চে পণ্যটি আমদানি হয়েছে ১৩ দশমিক ২৩ লাখ মেট্রিক টন।  আমদানি মূল্য প্রতি কেজি (অপরিশোধিত) ৩০ টাকা।  অভ্যন্তরীণ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে (২০২০-২১) শূন্য দশমিক ৮২ লাখ মেট্রিক টন।  বর্তমানে পাইকারী বাজারে প্রতি কেজি ৬৩ টাকা আর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ৬৭ থেকে ৬৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

খেজুর : বাৎসরিক সম্ভাব্য চাহিদা ৬০ থেকে ৭২ হাজার মেট্রিক টন, এর মধ্যে রমজান মাসের চাহিদা ৪০ থেকে ৫০ হাজার মেট্রিক টন।  এ বছর জুলাই-মার্চে পণ্যটি আমদানি হয়েছে শূন্য দশমিক ৬২ লাখ মেট্রিক টন।  আমদানি মূল্য প্রতি কেজি (মধ্যম মানের) ১২০ টাকা।  বর্তমানে পাইকারী বাজারে প্রতি কেজি ১৫০ থেকে ২০০ টাকায় এবং খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।