অর্থনীতি

‘অপ্রদর্শিত অর্থ’ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ থাকছে!

দেশের শেয়ারবাজার গতিশীল ও উজ্জীবিত করতে নানাবিধ সংস্কারমূলক পদক্ষেপ বাস্তবায়ন ও গ্রহণ করছে সরকার। যে রূপরেখা বৃহস্পতিবার (৩ জুন) প্রস্তাবিত ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে লক্ষ্য করা গেছে। বাজেটে সরকার শেয়ারবাজারের জন্য বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশনা দিয়েছে। ফলে সার্বিক দিক বিবেচনায় প্রস্তাবিত বাজেটকে শেয়ারবাজারবান্ধব বলে মনে করা হচ্ছে। তবে বাজেটে বিনা শর্তে ‘অপ্রদর্শিত অর্থ’ বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হলে শেয়ারবাজারে আরো বিনিয়োগ বাড়বে ও গতিশীল হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

শুক্রবার (৪ জুন) বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে  অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ রাখার বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার সুযোগ দেওয়া যদি লাভজনক হয়, তাহলে অব্যাহত রাখার জন্য আলোচনা করা হবে। অপ্রদর্শিত অথের্র খারাপ ভালো দুটিই আছে। মন্দ দিক হচ্ছে, এ টাকাটা কোনো সিস্টেমে নাই, আমরা ব্যবহার করতে পারি না। আর যদি এটি প্রদর্শিত আয় হয়ে ঘুরে আসে তাহলে অর্থনীতিতে এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী হবেÑএটা ভাল দিক।

অর্থমন্ত্রীর এই মন্তব্যের বিশ্লেষণ করে সংশিষ্টরা ধারণা করছেন, প্রস্তাবিত বাজেটে অপ্রদর্শিত অর্থ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ তাহলে বহাল থাকছে। এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে বাজেটে ১০ শতাংশ হারে কর দিয়ে জমি, ভবন ও অ্যাপার্টমেন্টের পাশাপাশি নগদ অর্থ, ব্যাংকে সঞ্চিত অর্থ, সঞ্চয়পত্র, বন্ড ও পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের মাধ্যমে অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার সুযোগ ছিল।

এবারের ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, গত অর্থবছরে (২০২০-২১) কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রেখেছিল সরকার। ওই অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৯ হাজার ৬২৩ জন করদাতা অপ্রদর্শিত সম্পদ রিটার্ন প্রদর্শন করে ১ হাজার ৩৮৬ কোটি ১০ লাখ ২ হাজার ৭৯৫ টাকা আয়কর দিয়েছেন। যে কারণে করোনাকালে দেশের অর্থনীতিতে পুঁজি প্রবাহ বেড়েছে। আর পুঁজিবাজারকে গতিশীল করার লক্ষ্যে ১ বছর লক-ইনসহ কয়েকটি শর্তসাপেক্ষে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়। ওই অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৩১১ জন ব্যক্তিশ্রেণির করদাতা পুঁজিবাজারে অর্থ বিনিয়োগ করে ৪৩ কোটি ৫৪ লাখ ৫২ হাজার ৯৮ টাকা আয়কর পরিশোধ করেছেন। এর ফলে দেশের পুঁজিবাজারে অর্থের প্রবাহ বেড়েছে এবং পুঁজিবাজার শক্তিশালী হয়েছে।

এর আগে গত ১৯ মে (বুধবার) ক্রয় সংক্রান্ত কমিটির বৈঠকের পর ব্রিফিংয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ আগামী বাজেটেও থাকবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘যতদিন অপ্রদর্শিত আয় থাকবে, ততদিন পর্যন্ত এ সুযোগ থাকবে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘অপ্রদর্শিত অর্থ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ এবারের বাজেটে বহাল রাখা উচিত বলে মনে করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘দেশে অপ্রদর্শিত অর্থ ও কালো টাকা- এ দুটোই রয়েছে। কিন্তু এ দু’টি বিষয় ভিন্ন। দেশে যদি কালো টাকা ও অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের জায়গা না থাকে, তখন ওই টাকা দেশের বাহিরে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। তাই আমরা চাই এ টাকা বিদেশে চলে না গিয়ে যদি দেশেই থাকে, তাহলে অর্থনীতির জন্য ভালো হবে।’

 ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক মো. রকিবুর রহমান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘অপ্রদশিত অর্থ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো শর্ত দেওয়া যাবে না। গত অর্থবছর অপ্রদশিত অর্থ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এক বছরের শর্ত দেওয়া ছিল। তাই এবার আমরা ওই শর্ত প্রত্যাহার করে শেয়ারবাজারে অপ্রদশিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ করে দিতে অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছি।’

তিনি বলেন, ‘বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী অপ্রদশিত অর্থের বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন। দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত টাকাই হলো কালো টাকা। আর অপ্রদর্শিত অর্থ হলো- আইনের বাধ্যবাধকতার কারণে যে অর্থের উৎস প্রকাশ করা যায়নি। যেমন- ধরা যাক, ১০ বছর আগে প্রতি কাঠা জমি রেজিস্ট্রেশন করতে লেগেছে ১ লাখ করে। আর ১০ বছর পর ওই জমি বিক্রি করা হচ্ছে ১২ লাখ টাকায়। এক্ষেত্রে বাড়তি ১০ লাখ টাকা অপ্রদর্শিত অর্থ হিসেবে গন্য হচ্ছে। আবার একজন ডাক্তার বৈধভাবে উপার্জন করলেও তার উৎস দেখাতে পারেন না। ফলে ওই অর্থও অপ্রদর্শিত অর্থের আওতায় পড়ছে। ফলে এবারের বাজেটে অপ্রদর্শিত টাকা বিনিয়োগের বিষয়ে স্পষ্ট কোনো কিছু উল্লেখ না করা হলেও, স্ট্যাটিউটরি রেগুলেটরি অর্ডার (এসআরও) জারি করে এ সুযোগ দেওয়া হতে পারে। সর্বোপরি এবারের বাজেট শেয়ারবাজার ও ব্যবসাবান্ধব।’

বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুর রাজ্জাক রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘করোনা মহামারির কথা বিবেচনায় রেখে সরকার শেয়ারবাজার বান্ধব বাজেট প্রস্তাব করেছে। আগামী বাজেটে শেয়ারবাজারে উন্নয়নে বিভিন্ন ধরনের দিক নির্দেশনা রয়েছে। এতে শেয়ারবাজার গতিশীল হবে ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি পাবে। প্রস্তাবিত বাজেটে বিনা শর্তে অপ্রদর্শিত অর্থ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ার জন্য দাবি জানাচ্ছি। করোনা পরিস্থিতিতে অপ্রদর্শিত অর্থ প্রবেশের সুযোগ করে দিলে শেয়ারবাজার আরো বেশি গতিশীল হবে।’

 

আরও পড়ুন > ঋণ নেওয়া নয়, দেওয়ার সময় এসেছে: অর্থমন্ত্রী