অর্থনীতি

রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে জাতিসংঘের জরুরি পদক্ষেপ চান পররাষ্ট্রমন্ত্রী

রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে অনতিবিলম্বে জাতিসংঘকে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। 

১৫ জুন জাতিসংঘ স্থায়ী মিশন আয়োজিত ‘মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতি: সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের অবস্থা’ শীর্ষক এক উচ্চ পর্যায়ের ভার্চুয়াল আলোচনায় প্রদত্ত বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি। জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশ, কানাডা, সৌদি আরব ও তুরস্ক স্থায়ী মিশন এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘গ্লোবাল সেন্টার ফর রেসপনসিবিলিটি টু প্রটেক্ট’ যৌথভাবে ভার্চুয়াল ইভেন্টটির আয়োজন করে। 

এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানে আমরা সবসময়ই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সক্রিয় ভূমিকার আহ্বান জানিয়েছি। সমস্যার মূল কারণগুলো খুঁজে বের করে তা সমাধানের কথা বলেছি।  বিশেষ করে তাদের মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত করার মাধ্যমে নিরাপদে, নিরাপত্তার সাথে এবং মর্যাদাপূর্ণভাবে নিজ দেশে টেকসই প্রত্যাবর্তনের ব্যাবস্থা করার আহ্বান জানিয়েছি।

ভাষানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য নব্যসৃষ্ট আবাসন সুবিধার কথা উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গদের জন্য সৃষ্ট নতুন এই আবাসন ব্যবস্থা জাতিসংঘ ও উন্নয়ন সহযোগীরা যথাযথভাবে পরিদর্শন ও মূল্যায়ন করে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন এবং এখানে তাদের রোহিঙ্গা বিষয়ক কর্মসূচির বাস্তবায়ন কাজ শুরু করেছে।  জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ও মানবাধিকার কাউন্সিলসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গা ইস্যুটি সর্বদা সচল রাখতে অব্যাহত যেসব প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছে তা স্মরণ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। পাশাপাশি এ বিষয়ে যথোপযুক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা পরিষদের ঘাটতির কথাও তুলে ধরেন তিনি। তিনি আশা করেন নিরাপত্তা পরিষদ জাতিসংঘ সনদ অনুযায়ী তাদের দায়বদ্ধতা পরিপালন করবে এবং মিয়ানমার সমস্যার সমাধানে অনতিবিলম্বে ও জরুরিভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে যাতে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী তাদের নিজভূমিতে নিরাপদে, নিরাপত্তার সাথে ও মর্যাদাপূর্ণভাবে ফিরে যেতে পারে। 

আন্তর্জাতিক পদক্ষেপের পাশাপাশি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আঞ্চলিক সংস্থা ও দেশ এবং সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের স্ব স্ব ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালনের জন্য অনুরোধ জানান।

প্যানেলিস্টরা রোহিঙ্গা সমস্যার টেকসই সমাধানে তাদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন এবং রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের মানবীয় উদারতার ভূয়সী প্রশংসা করেন। তারা সবাই এই সমস্যার মূল কারণ খুঁজে বের করে তা সমাধানের কথা বলেন যার শিকড় মিয়ামারেই নিহিত। প্যানেলিস্টরা মিয়ানমারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার মানুষের ন্যায়বিচার নিশ্চিতে দায়বদ্ধতা নিরুপনের চলমান প্রক্রিয়ার প্রতি সমর্থন জানান।

এদিকে, মঙ্গলবার বিকালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি (পিজিএ) ভলকান বজকির এর সাথে বৈঠক করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।  অত্যন্ত আন্তরিকতাপূর্ণ আলোচনায় রোহিঙ্গা সমস্যা, জলবায়ু পরিবর্তন এবং কোভিড-১৯ এর টিকা সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো উঠে আসে। রাজধানী ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য বিশ্ব শান্তি সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য পিজিএ-কে আমন্ত্রণ জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সাধারণ পরিষদের সভাপতি রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের মানবিক ভূমিকার জন্য ধন্যবাদ জানান। এছাড়া জাতিসংঘ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ইস্যুতে তার অফিসকে সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি। 

এছাড়া জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশ, ভূ-বেষ্টিত উন্নয়নশীল দেশ এবং উন্নয়নশীল ক্ষুদ্র দ্বীপ রাষ্ট্রসমূহের উচ্চ প্রতিনিধি ও আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ফেকিতা মোইলোয়া কাটোয়া উতয়কামানুর সাথে সাক্ষাৎ  করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে তারা স্বল্পোন্নত দেশসমূহের টেকসই ও অপ্রত্যাবর্তনযোগ্য উত্তরণ বিষয় নিয়ে কথা বলেন।  ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে কাতারের দোহায় অনুষ্ঠিত এলডিসি-৫ কনফারেন্সের প্রস্তুতিমূলক কমিটির কো-চেয়ার হিসেবে  একটি সহাসী ও উচাকাঙ্খী ফলাফল অজনার্থে বাংলাদেশ সব অংশীজনদের সাথে কাজ করে যাবে মর্মে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।