অর্থনীতি

খুচরা পর্যায়ে ভ্যাট জটিলতা সৃষ্টি করেছে এনবিআর : দোকান মালিক সমিতি

খুচরা পর্যায়ে ভ্যাট বা মূল্য সংযোজন কর আদায়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) জটিলতার সৃষ্টি করছে বলে দাবি তুলেছে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির নেতারা।

মঙ্গলবার (২১ জুন) রাজধানীতে এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এই দাবি করেন। এতে সংগঠনটির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন এবং মহাসচিব মো. জহিরুল হক ভূইয়াসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

জটিলতা নিরসনে খুচরা পর্যায়ে ৫ শতাংশ হারে উৎসে ভ্যাট বহাল রাখার আবেদন জানিয়েছেন দোকান মালিক সমিতি। ফলে করোনার এই সময়ে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা সহজভাবে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবেন বলে দাবি করেন তারা। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর সহাযোগিতা চেয়েছে সংগঠনটি।

নেতারা বলেন, আমরা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হিসেবে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম এবার আমরা খুচরা পর্যায়ে ভ্যাট আহরণ করে সরকারী কোষাগারে জমা দেব। কিন্তু খুচরা পর্যায়ে ভ্যাট আদায়ে জটিলতা সৃষ্টি করলো এনবিআর। গত দুই বছরে সংস্থার পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের চাহিদামত ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) মেশিন স্থাপন করা হয়নি। অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানে গিয়ে ব্যবসায়িদের হয়রানিও বন্ধ হয়নি।

লিখিত বক্তব্য দোকান মালিক সমিতির পক্ষ থেকে বলা হয়- ২০১২ সালে ভ্যাট আইন ২০১৯ সালে কার্যকর হয়। এর পূর্বে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপে বার্ষিক ৫০ লক্ষ টাকা টার্ন ওভার সীমা পর্যন্ত ভ্যাটের আওতামুক্ত রাখা হয়েছিল। পরবর্তীতে আইনটি সংসদে পাশ করা হয়। বর্তমানে করোনার এই সময়ে অনেক ক্ষেত্রে এনবিআর দোকান মালিককে না জানিয়ে জোর পূর্বক রেজিস্ট্রেশনের আওতায় আনছে। এই আইনে বলা হচ্ছে রেজিস্ট্রিকৃত দোকান সমূহ ১৫ তারিখের মধ্যে রিটার্ন দাখিল না করলে ১০ হাজার টাকা জরিমানা। এনবিআর ইতিমধ্যে ৩ লাখ ৫০ হাজার দোকান ও প্রতিষ্ঠানকে রেজিস্টেশনের আওতায় এনেছে। তার মধ্যে ৩ লাখ দোকান ও প্রতিষ্ঠান জানেই না যে তাদের রেজিস্ট্রেশনের আওতায় আনা হয়েছে।

এই অবস্থায় দোকান বা প্রতিষ্ঠানের ১০ হাজার টাকা করে ৬ থেকে ১০ মাস পর্যন্ত জরিমানা বকেয়া পড়েছে।

সমিতি দাবি করে, প্রধানমন্ত্রী যখন ক্ষুদ্র ও অতিক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের খাদ্য নিরাপত্তা, ঋণ প্রনোদনাসহ বিভিন্ন সাহায্যের আওতায় আনছেন। একই সময়ে এনবিআর সাড়াষী অভিযানে খুচরো এবং পাইকারী ব্যবসায়ীরা দিশেহারা। এই নতুন ভ্যাট আইনে বলা ছিল দোকান এবং প্রতিষ্ঠান রেজিস্ট্রেশনের আওতায় আসার সঙ্গে সঙ্গে এনবিআর ইএফডি মেশিন স্থাপন করবে। দুঃখ জনক বিষয় হলো এনবিআর এখন পর্যন্ত মাত্র ৩ হাজার ইএফডি মেশিন স্থাপন করতে পেরেছে।

কোন মার্কেটে ও বিপনী বিতানে ৫০০ বা ৬০০ দোকান থাকলে সে সব মার্কেটে ১৫-২০টিতে ইএফডি মেশিন স্থাপন করা হয়েছে। ফলে, যেসব দোকানে মেশিন বসানো হয়েছে সেই দোকানে ক্রেতা শূন্য হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি অন্যান্য দোকানে বলা হচ্ছে মাসিক প্রকার ভেদে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা ভ্যাট হিসাবে প্রদান করতে হবে ও সমপরিমান খরচ দিতে হবে।

সাংবাদ সম্মেলন থেকে এনবিআরের ইএফডি’র ৩ হাজার মেশিনকে তাদের খেয়াল খুশি মত ব্যবহার না করে যেকোন খাতে পাইলট প্রকল্প হিসেবে- স্বর্ণের দোকন, টাইলস বা হোটেল রেস্তোরাঁ নির্বাচন করার পরামর্শ দিয়েছেন দোকান মালিক সমিতি।

সমিতির নেতার বলেন, যতদিন পর্যন্ত এনবিআর ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ দোকান বা প্রতিষ্ঠানে ইএফডি মেশিন স্থাপন করতে না পারবে ততদিন পর্যন্ত বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে উৎসে পর্যায়ে ভ্যাট আদায়ের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতিবেশি দেশগুলোতে সার্বিকভাবে দুই বছরব্যাপী খুচরা পর্যায়ে ইএফডি মেশিন স্হাপন করে এক যোগে ভ্যাট নেওয়া শুরু করে। তাতে সেখানে কোন বৈষম্য সৃষ্টি হয়নি।

ব্যবসায়ীরা দাবি করেন, খুচরা পর্যায়ে ৫ শতাংশের ভ্যাট যদি উৎসে তথা (৩০+৫) = ৩৫ শতাংশ আদায় করে তাহলে সরকারের রাজস্ব বাড়বে ৪ থেকে ৫ হাজার কোটি টাকা।