অর্থনীতি

বানকো সিকিউরিটিজে বিনিয়োগকারীদের অর্থ ফেরত পাওয়া অনিশ্চিত

অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে বানকো সিকিউরিটিজের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা এবং পরিচালকদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হলেও প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে ডিএসইর সঙ্গে সমঝোতার কথা বলে কালক্ষেপণ করা হচ্ছে। ফলে, বিনিয়োগকারীদের অর্থ ফেরত পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

বিনিয়োগকারীদের ‘সম্মিলিত গ্রাহক অ্যাকাউন্ট’ থেকে ৬৬ কোটি ৫৯ লাখ ১৯ হাজার ১৩৩ টাকার সমপরিমাণ অর্থ ও শেয়ার আত্মসাৎ করেছে বানকো সিকিউরিটিজ। এ ঘটনায় মামলা করা হয়েছে। মামলার পর গ্রাহক অ্যাকাউন্টের অর্থ ফেরত দিতে চেয়ে বানকো সিকিউরিটিজের পক্ষে শফিউল আজম এবং মুনিম চৌধুরী ডিএসইর সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছে। গত মঙ্গলবারও (৬ জুলাই) বানকো সিকিউরিটিজের প্রতিনিধিরা ডিএসইর সঙ্গে বৈঠক করেন। কিন্তু সব অর্থ তারা ফেরত দিতে চান না। বানকো সিকিউরিটিজ ৫ কোটি টাকা ফেরত দেওয়ার শর্তে প্রতিষ্ঠানটি চালু করতে চায়। কিন্তু ডিএসই থেকে বলা হয়েছে, একটি প্রস্তাবনাসহ গ্রাহক অ‌্যাকাউন্টের ন‌্যূনতম ৪০ কোটি টাকা ফেরত দিতে হবে। তাহলে প্রতিষ্ঠানটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আলোচনা করার সম্ভাবনা আছে।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বানকো সিকিউরিটিজ দাবি করছে, গ্রাহক অ‌্যাকাউন্টের অনেক অর্থই ইতোমধ্যে তারা বিনিয়োগকারীদের ফেরত দিয়েছে। এখন ৫ কোটি টাকা দিয়ে তারা চালু করতে চায় প্রতিষ্ঠানটি। তবে, ডিএসই জানিয়েছে, তাদের এ দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিনিয়োগকারীরা ‘নো অবজেকশন’ দিলে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে।

এ সম্পর্কে ডিএসই ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল মতিন পাটোয়ারী রাইজিংবিডিকে বলেছেন, ‘বানকো সিকিউরিটিজের প্রতিনিধিরা টাকা ফেরত দেওয়ার প্রস্তাব নিয়ে গত মঙ্গলবার ডিএসইতে এসেছিলেন। কিন্তু তা পরিমাণে কম। ডিএসই থেকে তাদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, বিনিয়োগকারীদের আত্মসাৎ করা অর্থ ফেরত দিলে এ বিষয়ে পরবর্তী আলোচনা করা হবে। কিন্তু গতকাল বুধবার (৭ জুলাই) পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে কেউ যোগাযোগ করেননি।‘

এদিকে, বানকো সিকিউরিটিজ বন্ধ করে দেওয়ার পর লিংক অ‌্যাকাউন্টের মাধ্যমের শেয়ার স্থানান্তর করতে সহায়তা করেছে ডিএসই। কিন্তু নগদ এবং শেয়ার বিক্রি করা অর্থ ফেরত পাননি বিনিয়োগকারীরা। ফলে, তাদের এসব অর্থ পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

এ সম্পর্কে অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ রাইজিংবিডিকে বলেছেন, ‘বানকো সিকিউরিটিজ কিছু টাকা দিয়ে মুচলেকা দিতে চায় বলে শুনেছি। বিষয়টি সমাধান করে সিকিউরিটিজ হাউজ চালু হলে যাদের নগদ টাকা আটকে আছে, তাদের জন্য সুবিধা হবে।’

এ সম্পর্কে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুর রাজ্জাক রাইজিংবিডিকে বলেছেন, ‘বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে বানকো সিকিউরিটিজের বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা উচিত। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিনিয়োগকারীদের আত্মসাৎকৃত অর্থ ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করবে বলে প্রত্যাশা করছি।’

উল্লেখ্য, বানকো সিকিউরিটিজ থেকে বিনিয়োগকারীদের অর্থ ও শেয়ার আত্মসাতের ঘটনায় ডিএসই কর্তৃপক্ষ গত ১৪ জুন মতিঝিল থানায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসহ পরিচালকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে। পরের দিন ১৫ জুন সকালে মতিঝিল থানা অভিযোগটি দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) পাঠায়। বানকো সিকিউরিটিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান আবদুল মুহিতকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গত ২৯ জুলাই আটক করা হয়। পরে তাকে আদালতের নির্দেশে কারাগারে পাঠানো হয়। তাছাড়া, ডিএসইর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৫ জুলাই বানকো পরিচালকদের সংশ্লিষ্ট ১০ প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।