অর্থনীতি

চ্যালেঞ্জ জিততে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ডিএসই’র নতুন এমডি

আইন অনুযায়ী সঠিকভাবে স্টক এক্সচেঞ্জের কার্যক্রম পরিচালনার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে চান ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তারিকুল আমিন ভূঁইয়া। একইসঙ্গে তিনি ডিএসইকে পূর্ণাঙ্গ রূপে ডিজিটালাইজড করতে চান।

বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা ও শেয়ারবাজারের উন্নয়নে এই চ্যালেঞ্জ বাস্তবায়নে সক্ষম হবেন মনে করেন তিনি।

রোববার (২৫ জুলাই) ডিএসইতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে যোগদানের পর ফোনে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে তিনি রাইজিংবিডির কাছে এই আশাবাদ ও প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

তারিকুল আমিন ভূঁইয়া বলেন, ডিএসইতে রোববার সকালেই কাজে যোগদান করেছি। সকাল থেকেই ডিএসইর বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরিচিত হয়েছি। এখানকার সবাই যথেষ্ট আন্তরিক। কর্মীদের সার্বিক সহযোগিতায় এই ডিএসইকে পূর্ণাঙ্গ ডিজিটালাইজড স্টক এক্সচেঞ্জে রূপান্তরিত করে তুলব। এতে একদিকে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা হবে, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সুপরিচিত হবে ডিএসই। পাশাপাশি আইন অনুযায়ী সঠিকভাবে স্টক এক্সচেঞ্জের কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে। এসব কিছু যথাযথভাবে করা সম্ভব হলেই দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও আকৃষ্ট হবেন। তবে এ কাজটি অনেক চ্যালেঞ্জের। সবার সার্বিক সহযোগিতায় দীর্ঘদিনের এ প্রত্যাশা পূরণে সক্ষম হবো।

তিনি বলেন, ডিএসইকে ডিজিটালাইজড করতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। ইতোমধ্যে ডিএসইকে প্রযুক্তিগতভাবে আরও সমৃদ্ধ করতে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন  করা হয়েছে। 

ডিএসইর নতুন এমডি বলেন, ডিএসই’র সার্বিক উন্নয়নের জন্য আমি কিছু লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি। যাকে বলতে পারি- ‘ফাইভ পি’। এর মধ্যে রয়েছে- প্ল্যাটফর্ম, প্রসেস, পিপলস, প্রোডাক্ট ও পলিসি। এ ‘ফাইভ পি’ বাস্তবায়ন করা গেলে ডিএসই অবশ্যই পূর্ণাঙ্গ রূপে ডিজিটালাইজড হবে। এ কাজের জন্য সর্ব প্রথম প্ল্যাটফর্মের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে। একটি ভালো প্ল্যাটফর্ম স্টক এক্সচেঞ্জকে অনেক বেশি গতিশীল করে তুলতে পারে। তাই ডিএসইর প্ল্যাটফর্মের ওপর আমাদের অধিক গুরুত্ব থাকবে। এভাবে ধারাবাহিকভাবে ‘ফাইভ পি’ বাস্তবায়নের চেষ্টা করব।

তারিকুল আমিন ভূঁইয়া আরও বলেন, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ বাড়াতে বিএসইসি সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। আমরাও বিএসইসিকে সার্বিক সহযোগিতা করব। সোমবার থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ‘রোড শো’ শুরু হচ্ছে। এতে ডিএসই’র প্রতিনিধিরাও অংশগ্রহণ করেছেন। রোড শো’তে দেশের শেয়ারবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি, বিনিয়োগের সুযোগ-সুবিধা এবং উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের ব্যাপকতা তুলে ধরা হবে। ফলে দেশে শেয়ারবাজারকে নিয়ে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের যে ভ্রান্ত ধারণা ছিল তা পুরোপুরি কেটে যাবে। এতে শেয়ারবাজারে প্রবাসী ও বিদেশি বিনিয়োগ আরো বাড়বে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের স্টক এক্সচেঞ্জগুলোতে শেয়ার (ইক্যুইটি) ছাড়াও বিভিন্ন প্রোডাক্ট কীভাবে পরিচালনা করা হচ্ছে, সে বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হবে। এরই ধারাবাহিকতায় আমরা দেশের শেয়ারবাজারে শেয়ার ছাড়াও নতুন নতুন প্রোডাক্ট চালু করা হবে।

চলতি বছরের ৪ জুলাই অনুষ্ঠিত ১০০৮ তম পরিচালনা পর্ষদ সভায় তারিকুল আমিন ভূঁইয়াকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয় ডিএসই। পরবর্তীতে ওই দিনই বোর্ড অ্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন রেগুলেশন্স, ২০১৩ অনুযায়ী তার নিয়োগ অনুমোদনের জন্য শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) প্রস্তাব পাঠায় ডিএসই। ৫ জুলাই বিএসইসি তার নিয়োগের চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়।

তারিকুল আমিন ভূঁইয়া প্রশাসন ও ব্যবসা পরিচালনা, ডিজিটাল অ্যান্ড ফ্যাইনান্সিয়াল টেকনোলজি এবং আইটি সেক্টরের একজন দক্ষ ও অভিজ্ঞ ব্যক্তি। পেশাগত জীবনে আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান- এএনজেড গ্রিন্ডলেস ব্যাংক, বাংলাদেশ এর গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি আইএনজি, সেন্ট জর্জ ও ওয়েস্ট পেক এবং গ্লোবাল পরামর্শক সংস্থা- আইটি প্রতিষ্ঠান টাটা কন্সালটেন্সি সার্ভিসেস (টিসিএস), ইনফোসিস এবং উদ্ভাবনী পরামর্শক সংস্থা- অ্যাকসেন্টারসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ২৫ বছরেরও বেশি সময় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি ব্র্যাক ব্যাংকের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা (সিআইও) এবং মোবাইল মানি ট্রান্সফার কোম্পানি বিকাশের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

ডিএসইতে যোগদানের পূর্বে তিনি ফ্রেন্ডশিপ এনজিও’র তথ্যপ্রযুক্তি পরামর্শক এবং অস্ট্রেলিয়ার হ্যাশক্লাউড পিটিওয়াই লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা সিইও এবং সিটিপিও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি হ্যাশক্লাউড বাংলাদেশ লিমিটেডের নির্বাহী চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।