অর্থনীতি

স্বল্প মূলধনী কোম্পানির অবস্থা যাচাইয়ে বিএসইসির কমিটি

দেশের উভয় শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ৩০ কোটি টাকার কম পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানির সার্বিক অবস্থা যাচাই ও করণীয় নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এ লক্ষ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। গঠিত কমিটিকে স্বল্প মূলধনী কোম্পানিগুলোর বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দাখিল করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিএসইসি সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত কমিশন সভায় শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত পারফরমেন্স ভালো না করা ছোট পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানিগুলোর বিষয় আলোচনা হয়েছে। আলোচনায় ৩০ কোটি টাকার কম পরিশোধিত মূলধন সম্পন্ন প্রত্যেকটি কোম্পানির জন্য সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা উপস্থাপন করার সিদ্ধন্ত গ্রহণ করা হয়। একইসঙ্গে এ কাজটি করার জন্য তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে  কমিশন। আগামী ৩০ দিনের মধ্যে গঠিত কমিটিকে বল্প মূলধনের কোম্পানিগুলোর জন্য কারণীয় নির্ধারণে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা বিএসইসি উপস্থাপনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

গঠিত কমিটির সদস্যরা হলেন- বিএসইসি’র কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ, কমিশনার অধ্যাপক মিজানুর রহমান ও অতিরিক্ত পরিচালক মো. নজরুল ইসলাম।

দেশের উভয় শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ৬৭টি কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৩০ কোটি টাকার নিচে রয়েছে। তাদের সার্বিক আর্থিক অবস্থাও যাচাই করে দেখা হবে। পাশাপাশি ওই কোম্পানিগুলোর পরিশোধিত মূলধন একটি মান সম্পন্ন জায়গায় আনার বিষয়ে কাজ করা হবে। এছাড়া কোম্পানিগুলোকে নিয়ে বিকল্প কিছু করা যায় কি-না তাও চিন্তা-ভাবনা করে দেখবে কমিশন। কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রথমিক অবস্থায় স্বল্প পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানিগুলোকে নিয়ে একটি ডাটাবেজ তৈরি করা হবে। তারপর কোম্পানিগুলোর সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসবে বিএসইসি।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) তালিকাভুক্ত ১ কোটি টাকার কম থেকে ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানির সংখ্যা ৩৩টি। কোম্পানিগুলোর মধ্যে- ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টের ৯৯ লাখ ৪০ হাজার টাকা, সাভার সাভার রিফ্র্যাক্টরিজের ১ কোটি ৩৯ লাখ টাকা, লিব্রা ইনফিউশনের ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা, জুট স্পিনার্সের ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা, রেনউইক যজ্ঞেশ্বরের ২ কোটি টাকা, নর্দান জুটের ২ কোটি ১৪ লাখ টাকা, এমবি ফার্মার ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা, সোনালী আঁশের ২ কোটি ৭১ লাখ টাকা, মুন্নু এগ্রার ২ কোটি ৭৩ লাখ টাকা, ফার্মা এইডের ৩ কোটি ১২ লাখ টাকা, মনোসপুল পেপারের ৩ কোটি ২৯ লাখ টাকা, পেপার প্রসেসিংয়ের ৩ কোটি ৭২ লাখ টাকা, বিডি অটোকারসের ৪ কোটি ৩২ লাখ টাকা, জেমিনি সি ফুডের ৪ কোটি ৬৯ লাখ টাকা, রেকিট বেনকাইজার ৪ কোটি ৭২ লাখ টাকা, কে অ্যান্ড কিউয়ের ৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা, শ্যামপুর সুগারের ৫ কোটি টাকা, আজিজ পাইপসের ৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা, অ্যাপেক্স ফুডের ৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা, জিল বাংলা সুগারের ৬ কোটি টাকা, অ্যারামিটের ৬ কোটি টাকা, স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকের ৬ কোটি ৪৬ লাখ টাকা, ন্যাশনাল টি’র ৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা, দেশ গার্মেন্টসের ৭ কোটি ৫৩ লাখ টাকা, দুলামিয়া কটনের ৭ কোটি ৫৫ লাখ টাকা, বঙ্গজের ৭ কোটি ৬২ লাখ টাকা, ইমাম বাটনের ৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা, এএমসিএল প্রাণের ৮ কোটি লাখ টাকা, অ্যাপেক্স স্পিনিংয়ে ৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা, জিকিউ বলপেনের ৮ কোটি ৯২ লাখ টাকা, বিডি ল্যাম্পসের ৯ কোটি ৩৭ লাখ টাকা, রহিম টেক্সটাইলের ৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ও রংপুর ফাউন্ড্রির ১০ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধন।

এছাড়া ডিএসই ও সিএসইতে ১০ কোটি টাকার বেশি থেকে ৩০ কোটি টাকা পর্যন্ত পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানির সংখ্যা ৩৪টি। কোম্পানিগুলো হলো- সমতা লেদারের ১০ কোটি ৩২ লাখ টাকা, আইএসএনএল’র ১০ কোটি ৯২ লাখ টাকা, অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের ১১ কোটি ২৫ লাখ টাকা, মেঘনা পেটের ১২ কোটি টাকা, ইউনিলিভারের ১২ কোটি ৪ লাখ টাকা, লিগেসি ফুটওয়্যারের ১৩ কোটি ৭ লাখ টাকা, বাটা সু’র ১৩ কোটি ৬৮ লাখ টাকা, স্টাইলক্রাফটের ১৩ কোটি ৮৮ লাখ টাকা, ফাইন ফুডসে ১৩ কোটি ৯৭ লাখ টাকা, ওয়াটা কেমিক্যালের ১৪ কোটি ৮২ লাখ টাকা, লিনডে বিডির ১৫ কোটি ২১ লাখ টাকা, অ্যাপেক্স ট্যানারির ১৫ কোটি ২৪ লাখ টাকা, আনোয়ার গ্যালভানাইজিংয়ের ১৫ কোটি ২৪ লাখ টাকা, মেঘনা কনডেন্সড মিল্কের ১৬ কোটি টাকা, প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ১৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা, উসমানিয় গ্লাসের ১৭ কোটি ৪১ লাখ টাকা, আনলিমা ইয়ার্নের ১৭ কোটি ৮৬ লাখ টাকা, সোনালী পেপারের ১৮ কোটি ৩০ লাখ টাকা, শমরিতা হাসপাতালের ১৮ কোটি ৮৭ লাখ টাকা, হাক্কানি পাল্পের ১৯ কোটি টাকা, সিনোবাংলার ১৯ কোটি ৯৯ লাখ টাকা, প্রাইম ফাইন্যান্স ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ডের ২০ কোটি টাকা, রহিমা ফুডের ২০ কোটি টাকা, ওরিয়ন ইনফিউশনের ২০ কোটি ৩৫ লাখ টাকা, জেএমআই সিরিঞ্জের ২২ কোটি ১০ লাখ টাকা, কোহিনূর কেমিক্যালের ২২ কোটি ২০ লাখ টাকা, আল-হাজ্জ টেক্সটাইলের ২২ কোটি ২৯ লাখ টাকা, সিভিও পেট্রোকেমিক্যালের ২৫ কোটি ২৪ লাখ টাকা, এইচআর টেক্সটাইলের ২৫ কোটি ৩০ লাখ টাকা, ইস্টার্ন কেবলসের ২৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা, সোনারগাঁও টেক্সটাইলসের ২৬ কোটি ৪৬ লাখ টাকা, মেঘনা সিমেন্টের ২৭ কোটি ২৮ লাখ টাকা, রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ২৯ কোটি ৪২ লাখ টাকা ও সাফকো স্পিনিংয়ের ২৯ কোটি ৯৮ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধন।

বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, শেয়ারবাজারে কম পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানিগুলোকে নিয়ে কারাসাজি করার বেশি সুযোগ থাকে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। এছাড়া কম পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানিগুলো পারিববারতান্ত্রিকভাবে পরিচালিত হয়ে থাকে। ফলে করপোরেট সুসাশান যথাযথভাবে পরিপালন করে না কোম্পানিগুলো। আর কম পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানির শেয়ারের দাম তুলনামূলক বেশি। তবে বছর শেষে সে অনুযায়ী লভ্যাংশ পান না বিনিয়োগকারীরা। এছাড়া কম পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দর পতনের কারণে শেয়ারবাজারে সবচেয়ে বেশি অস্থিরতা দেখা দেয়।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএসইসির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘মূল মার্কেটের যেসব কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৩০ কোটি টাকার নিচে রয়েছে তাদেরকে পরিশোধিত মূলধনকে একটি স্ট্যান্ডার্ড লেভেলে আনার বিষয়ে কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাশাপাশি কোম্পানিগুলোর সার্বিক আর্থিক অবস্থাও যাচাই করে দেখবে কমিশন। এ জন্য তিন সদস্যস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রথমিক অবস্থায় কম পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানিগুলোকে নিয়ে একটি ডাটাবেজ তৈরি করা হবে। তারপর এ বিষয়ে কোম্পানিগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা হবে।’

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘যেসব স্বল্প মূলধনী কোম্পানির উৎপাদন বন্ধ, নিয়মমত লভ্যাংশ দেয় না এবং শেয়ারের দাম অতিমূল্যায়িত অবস্থায় রয়েছে, তাদের বিষয়ে কার্যকরি ভূমিকা নেওয়ার উচিত। একইসঙ্গে কোম্পানিগুলোর মূলধন বাড়িয়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করার দাবি জানাচ্ছি। এছাড়া কোম্পানিগুলো সরেজমিন পরিদর্শন করে বিনিয়োগকারীদের সুস্পষ্ট ধারনা দেওয়ার আহ্বান জানাই।’