অর্থনীতি

চাকরিচ্যূত ব্যাংক কর্মকর্তাদের ফিরিয়ে নিতে নির্দেশ

করোনা মহামারির সময় দুর্বল পারফর্মেন্সসহ নানা অজুহাতে ব্যাংকগুলো কর্মী ছাটাই করেছে। অনেক কর্মকর্তাদের চাকরি থেকে পদত্যাগ করতেও বাধ্য করেছে ব্যাংকগুলো। এসব চাকরিচ্যুত, পদত্যাগ করা কর্মকর্তা কর্মচারীদের ফিরিয়ে এনে চাকরিতে বহাল রাখার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। নির্দেশনাটি সব ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়েছে।

ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিধি-বহির্ভূতভাবে চাকরিচ্যূতকরণ সম্পর্কে নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ২০২০ সালের ১ এপ্রিল থেকে ২০২১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে ব্যাংকের যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী সুনির্দিষ্ট ও প্রমাণিত কোনো অভিযোগ না থাকা সত্ত্বেও চাকরিচ্যুত হয়েছে কিংবা চাকরি থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে তাদেরকে (আবেদন প্রাপ্তি সাপেক্ষে) বিধি মোতাবেক চাকরিতে বহাল করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। 

এছাড়া আলোচ্য সময়ে ব্যাংকের যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে কিংবা যারা চাকরি হতে পদত্যাগ করেছেন তাদের তথ্যাবলী আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগে পাঠাতে হবে। 

তথ্যবলীর মধ্যে সেসব কর্মকর্তারা পদত্যাগ করেছে তার কারণ ব্যাখ্যা দিতেও বলা হয়েছে। তাছাড়া ২০১৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত কতজন কর্মকর্তা কর্মচারী ছাটাই করা হয়েছে সেই তথ্যও দিতে হবে। এ নির্দেশ অবিলম্বে কার্যকর করতে বলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক ইচ্ছামাফিক ঢালাওভাবে কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাঁটাইয়ের বিষয়ে ২০১৫ সালে সার্কুলার দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ২০২০ সালের কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজসমূহের যথাযথ বাস্তবায়ন এবং কাঙ্খিত জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের নিমিত্ত ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যাতে অধিকতর উজ্জীবিত হয়ে অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করতে পারে সে লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সব উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়।

কিন্তু সম্প্রতি কিছু সংখ্যক ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীর কাছ থেকে এ মর্মে অভিযোগ পাওয়া গেছে যে, সুনির্দিষ্ট ও প্রমাণিত কোনো অভিযোগ না থাকা সত্ত্বেও কোভিড চলাকালীন শুধুমাত্র লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না করা বা অদক্ষতার অজুহাতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরিচ্যুত করা হচ্ছে ও চাকরি হতে পদত্যাগে বাধ্য করা হচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পদত্যাগ করার পর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রাপ্য আর্থিক সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে না, যা উল্লিখিত সার্কুলার লেটারের উদ্দেশ্য ও নির্দেশনার পরিপন্থি।

কোভিড-১৯ এর কারণে সৃষ্ট আর্থিক ক্ষতি হতে দেশের অর্থনীতি পুনরুজ্জীবিতকরণের লক্ষ্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব অর্থায়নে বিপুল অংকের আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে যা তফসিলি ব্যাংকসমূহের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এসব প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নসহ দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে ফ্রন্টলাইনার হিসেবে ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ নিরবচ্ছিন্নভাবে সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যাংকিং সেবা প্রদান করে যাচ্ছেন।

ব্যাংকিং সেবা প্রদান করতে গিয়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারী কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়েছেন এবং অনেকে মৃত্যুবরণ করেছেন। কোভিড-১৯ এর কারণে সৃষ্ট সংকটময় পরিস্থিতিতে ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীগণকে চাকরিচ্যুত করা হলে ব্যাংকে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীগণের মাঝে আতংকের সৃষ্টি হবে এবং তাদের মনোবল ও কর্মস্পৃহা হ্রাস পাবে। ফলে, ভবিষ্যতে মেধাবী ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিবর্গ ব্যাংকে যোগদানে অনীহা প্রকাশ করবে যা দীর্ঘ মেয়াদে ব্যাংকিং খাতের জন্য ক্ষতিকর হবে মর্মে আশংকা করা হচ্ছে।

এ প্রেক্ষাপটে, কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে ব্যাংক কর্মকর্তাকর্মচারীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা বিবেচনায় এবং এ সংকটময় পরিস্থিতিতে ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণের কর্মস্পৃহা অটুট রাখার স্বার্থে নির্দেশনা প্রদান করা হলো।

নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে- সুনির্দিষ্ট ও প্রমাণিত কোনো অভিযোগ না থাকলে কর্মকর্তা-কর্মচারীগণকে চাকরিচ্যুত না করা; কোভিডকালীন শুধুমাত্র লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থতা বা অদক্ষতার কারণ প্রদর্শন করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরিচ্যুত অথবা পদত্যাগ করতে বাধ্য না করা; ২০২০ সালের ১ এপ্রিল থেকে ২০২১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে ব্যাংকের যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী সুনির্দিষ্ট ও প্রমাণিত কোনো অভিযোগ না থাকা সত্ত্বেও চাকরিচ্যুত হয়েছে কিংবা চাকরি হতে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে তাদেরকে (আবেদন প্রাপ্তি সাপেক্ষে) বিধি মোতাবেক চাকরিতে বহাল করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া আলোচ্য সময়ে ব্যাংকের যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে কিংবা যারা চাকরি হতে পদত্যাগ করেছেন তাদের তথ্যাবলী আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগে পাঠাতে হবে।

এ নির্দেশনা অবিলম্বে কার্যকর হবে। ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ এর ৪৫ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এ সার্কুলার জারি করা হয়েছে।