অর্থনীতি

ফারইস্ট লাইফের পরিচালকের ঋণ-বিও’র তথ্য চায় বিএসইসি

আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের উদ্যোক্তা পরিচালক আয়েশা হুসনে জাহানের মার্জিন ঋণ ও তার বিও হিসাবের সকল তথ্য চেয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। কোম্পানিটির উদ্যোক্তা পরিচালক আয়েশা হুসনে জাহান ব্রোকারেজ হাউজ পিএফআই সিকিউরিটিজের কাছ থেকে মার্জিন ঋণ নিয়েছেন। ফলে এসব তথ্য পিএফআই সিকিউরিটিজ থেকে চাওয়া হয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে।

গত ৩০ নভেম্বর ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের উদ্যোক্তা পরিচালক আয়েশা হুসনে জাহানের দায় সমন্বয়ের বিষয়ে ব্রোকারেজ হাউজটি বিএসইসিতে একটি চিঠি পাঠায়। ওই চিঠির জবাবের পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি বিএসইসি চিঠি দিয়ে পিএফআই সিকিউরিটিজ থেকে এসব তথ্য চেয়েছে। এ বিষয়টি ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালককেও অবহিত করা হয়েছে।

বিএসইসি’র চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের উদ্যোক্তা পরিচালক আয়েশা হুসনে জাহান পিএফআই সিকিউরিটিজ থেকে মার্জিন ঋণ নিয়েছেন। এই বিষয়ে সিকিউরিটিজ হাউজটিকে বেশ কিছু নথিপত্র জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হলো।

পিএফআই সিকিউরিটিজের কাছে যেসব নথিপত্র চাওয়া হয়েছে সেগুলো হলো- আয়েশা হুসনে জাহানের কেওয়াইসি এবং অন্যান্য নথিসহ অ্যাকাউন্ট গ্রাহক কোডের ফর্মের কপি, মার্জিন ঋণ সম্পর্কিত নথির অনুলিপি, বিও হিসাব খোলার তারিখ থেকে এ পর্যন্ত সম্পূর্ণ তথ্য, মার্জিন ঋণ হিসাবের সম্পূর্ণ তথ্য এবং কমিশনে জমা দেওয়া রিপোর্ট অনুযায়ী নেট ক্যাপিটাল ব্যালেন্স হিসাবের কপি দিতে বলা হয়েছে। সেখানে গ্রাহককে যে আইনের মাধ্যমে ও কোন তহবিল থেকে এ মার্জিন ঋণ প্রদান করা হয়েছে ‌সে বিষয়ে উল্লেখ করতে বলা হয়েছে।

এছাড়া কমিশনের গত বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি জারিকৃত নির্দেশনা অনুযায়ী কোন শেয়ারের বিপরীতে তিনি কি পরিমাণ ঋণ নিয়েছে সে তথ্যের কপি চিঠিতে চেয়েছে বিএসইসি।

এ বিষয়ে জানতে পিএফআই সিকিউরিটিজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কাজী ফরিদ উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

এদিকে গত বছরের গত ১ সেপ্টেম্বর বিএসইসি থেকে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ অপসারণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. রহমত উল্যাহকে চেয়ারম্যান করে ১০ সদস্যের স্বতন্ত্র পরিচালকের একটি পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে। ফারইস্ট ইসলামী লাইফের পুনর্গঠিত পর্ষদের সদস্যরা হলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. রহমত উল্যাহ, মোহাম্মদ সানাউল্লাহ অ্যান্ড এসোসিয়েটসের সিইও মোহাম্মদ সানাউল্লাহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক মো. রফিকুল ইসলাম, অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব মো. মোফাজ্জল হোসেন, অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা কর্নেল গাজী মো. খালিদ হোসেন, এসএমএসি ও এসএসএসি’র পার্টনার স্নেহাশিষ বড়ুয়া, একাত্তর মিডিয়ার এমডি অ‌্যান্ড চিফ এডিটর মোজাম্মেল হক, জি৭ সিকিউরিটিজের চেয়ারম্যান সুজাদুর রহমান, জনতা ব্যাংকের ডিএমডি জিকরুল হক এবং নর্দান জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলাম চৌধুরী। তবে পর্ষদ পুনর্গঠনের এক মাসের মধ্যে ১০ অক্টোবর ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি পুনর্গঠিত চেয়ারম্যানের পদত্যাগ করেন।

এদিকে, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের বিরুদ্ধে নানা আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতি খতিয়ে দেখতে যৌথ তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিএসইসি। চারটি সংস্থার প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে এ যৌথ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালা, ২০১৯ এর বিধি ৫৪ অনুযায়ী যৌথ অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিএসইসি’র নেতৃত্বে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের বিরুদ্ধে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অন্যান্য সংস্থার মধ্যে রয়েছে- দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।