অর্থনীতি

অ্যাক্টিভ ফাইনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে কমিটি গঠন

শেয়ার বাজারে ওষুধ ও রসায়ন খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি অ্যাক্টিভ ফাইন কেমিক্যালসের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ এবং আর্থিক দুর্বলতা অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। কমিটিকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান স্বাক্ষরিত আদেশে এ তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

অ্যাক্টিভ ফাইন কেমিক্যালের বিরুদ্ধে গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন—বিএসইসির অতিরিক্ত পরিচালক মোল্লা মো. মিরাজ-উস-সুন্নাহ, একই প্রতিষ্ঠানের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ রতন মিয়া ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্যবস্থাপক স্নেহাশিস চক্রবর্তী।

বিএসইসি’র জারি করা আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন মনে করে, অ্যাকটিভ ফাইন কেমিক্যালসের বিরুদ্ধে করা বিভিন্ন অভিযোগ তদন্ত করা প্রয়োজন। তাই, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ (১৯৬৯ সালের অধ্যাদেশ নং XVII) এর ২১ ধারা এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন, ১৯৯৩ এর ১৭ক ধারা অনুযায়ী অ্যাকটিভ ফাইন কেমিক্যালসের বিরুদ্ধে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হলো। তদন্ত কমিটিতে বিএসইসি ও ডিএসইর কর্মকর্তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হলো। তদন্ত কর্মকর্তারা এ আদেশ জারির ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে বিএসইসর কাছে একটি প্রতিবেদন জমা দেবেন।

বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম রাইজিংবিডিকে বলেছেন, ‘বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অ্যাক্টিভ ফাইন কেমিক্যালসের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে সিকিউরিটিজ আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এদিকে, অ্যাক্টিভ ফাইন কেমিক্যালসের আর্থিক বিবরণী বিশেষ নিরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছে বিএসইসি। নিরীক্ষার জন্য হাওলাদার ইউনুস অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টকে নিয়োগ দিয়েছে কমিশন। তবে, বিশেষ নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় কোম্পানি কর্তৃপক্ষ সহযোগিতা করেনি বলে বিএসইসিতে অভিযোগ করেছে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান। তাই, বিএসইসির নির্দেশনা অনুযায়ী বিশেষ নিরীক্ষককে অসহযোগিতার জন্য বৃহস্পতিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) কোম্পানিটিকে কারণ দর্শাতে বলা হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিএসইসির ৭৯০তম কমিশন সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় জরুরি পরিস্থিতি বিবেচনা এবং সর্বনিম্ন দরদাতা হাওলাদার ইউনুস অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টকে ৮ লাখ টাকায় অ্যাক্টিভ ফাইন কেমিক্যালসের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন বিশেষ নিরীক্ষার জন্য নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়। বিশেষ নিরীক্ষা কার্যক্রমে নয়টি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।

এর আগে অ্যাক্টিভ ফাইন কেমিক্যালসের তিন বছরের আর্থিক হিসাব খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নেয় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষও। এজন্য ওই কোম্পানিকে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি ৩০ আগস্টের মধ্যে দাখিল করতে বলা হয়।

২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর ও ২০১৯ সালের ২১ মে জারি করা নির্দেশনা অনুযায়ী উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের মোট পরিশোধিত মূলধনের সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ ধারণ করতে ব্যর্থ হয়েছে অ্যাক্টিভ ফাইন কেমিক্যালস। কোম্পানির মোট পরিশোধিত মূলধনের মধ্যে মাত্র ১২.০৪ শতাংশ শেয়ার আছে পরিচালকদের হাতে। ফলে, এখনও ১৭.৯৬ শতাংশ শেয়ার ধারণ করতে হবে কোম্পানিকে। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে কোম্পানিকে একাধিকবার শুনানিতে তলব করা হয়েছে। সর্বশেষ চলতি বছরের জুন মাসে অ্যাক্টিভ ফাইন কেমিক্যালসের পরিচালনা পর্ষদসহ কোম্পানির সচিব ও প্রধান অর্থ কর্মকর্তাকে (সিএফও) তলব করে বিএসইসি। পাশাপাশি কোম্পানির ব্যবসায়িক ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা চাওয়া হয়।

প্রসঙ্গত, ২০১০ সালে শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত হয় অ্যাক্টিভ ফাইন কেমিক্যালস। ২৩৯ কোটি ৯৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা পরিশোধিত মূলধনের ‘বি’ ক্যাটাগরির এ কোম্পানির মোট শেয়ার ২৩ কোটি ৯৯ লাখ ৩৬ হাজার ৫৮০টি। এর মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে ১২.০৪ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ২৮.৩১ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে ৩.১১ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ৫৬.৫৪ শতাংশ শেয়ার আছে। মঙ্গলবার (৮ ফেব্রুয়ারি) অ্যাক্টিভ ফাইন কেমিক্যালসের শেয়ার সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে ২৪ টাকা ৫০ পয়সায়।