অর্থনীতি

লভ্যাংশ পাচ্ছেন সোনালী লাইফের আইপিও পরবর্তী শেয়ারধারীরা

শেয়ারবাজারে বিমা খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পরিচালনা পর্ষদ ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত হিসাব বছরে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) আগে শেয়ার ধারণকারীদের জন্য ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ প্রদান করেছে। এতে আইপিও পরবর্তী কোম্পানিটির শেয়ার ধারণকারীরা লভ্যাংশ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। 

ফলে আলোচ্য হিসাব বছরে আইপিও পরবর্তী লভ্যাংশ প্রদান সংক্রান্ত রেকর্ড ডেটের দিন শেয়ারধারী সকল বিনিয়োগকারীদের ১০ শতাংশ করে নগদ লভ্যাংশ প্রদানের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি)।

সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি চিঠি সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে পাঠানো হয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে।

একইসঙ্গে বিষয়টি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) ও সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অবহিত করা হয়েছে।

এর আগে, গত বছরের নভেম্বরে আইপিও’র আগের শেয়ারধারীদের লভ্যাংশ প্রদানের বিষয়টি অগ্রহণযোগ্য বলে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সকে অবহিত করেছিল ডিএসই।

বিএসইসির চিঠিতে উল্লেখ করা হয়- পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ২০২১ সালের ১০ জুলাই সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স ২০২০ সালে ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত হিসাব বছরের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে প্রাক-আইপিও শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করে। একইসঙ্গে ২০২১ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত সময়ে (প্রথম প্রান্তিক) অন্তর্বর্তী ২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করে কোম্পানিটি। আর ওই বছরের ২ সেপ্টেম্বর শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ বিতরণ করা হয়। 

উল্লিখিত কার্যকলাপের মাধ্যমে, কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের লিস্টিং রেগুলেশন, ২০১৫ এবং প্রবিধান ২(১) ডিপোজিটরি (ব্যবহারিক) প্রবিধানমালা, ২০০৩ এর প্রবিধান ১৯(২) লঙ্ঘন করেছেন। এর ফলে কোম্পানিটিকে আলোচ্য রেকর্ড তারিখ অনুযায়ী শেয়ারধারীদের সমান পরিমাণ নগদ লভ্যাংশ (অর্থাৎ সব ধরনের শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১০ শতাংশ) বিতরণ করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হলো। আর এ চিঠি জারি করার ১৫ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট বিষয়টি কমিশনকে অবহিত করতে নির্দেশ দেওয়া হলো।

তথ্য মতে, আইপিও প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে গত বছরের ৩০ জুন দেশের উভয় শেয়ারবাজারে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারের লেনদেন শুরু হয়। পরবর্তীতে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ ১০ জুলাই ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত হিসাব বছরের লভ্যাংশ ঘোষণা সংক্রান্ত সভা আয়োজন করে। ওই সভায় কোম্পানিটির পর্ষদ ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত হিসাব বছরের জন্য ১০ শতাংশ নগদ ও চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকের জন্য ২ শতাংশ অন্তর্বর্তী নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করে। একই সঙ্গে কোম্পানিটি এ সংক্রান্ত মূল্য সংবেদনশীল তথ্যে (পিএসআই) প্রকাশ করে। তবে ওই পিএসআইতে গত বছরের জন্য ঘোষিত লভ্যাংশ কেবলমাত্র ২০২০ সালে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বা আইপিও পূর্ববর্তী শেয়ার ধারণকারীরা পাবেন বলে উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া বাকি ২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ গত ৪ আগস্ট রেকর্ড ডেটের দিন শেয়ার ধারণকারী সব শেয়ারহোল্ডার পাবেন বলে জানানো হয়।

তবে তাৎক্ষণিকভাকে এ বিষয়টি শেয়ারহোল্ডারসহ নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের কারোই দৃষ্টিগোচর হয়নি। পরবর্তীতে বিষয়টি অন্যান্য সব কোম্পানির মতোই সোনালি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের লভ্যাংশ ঘোষণার তথ্য ডিএসই’র ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। পরবর্তীতে গত ১৬ সেপ্টেম্বর কোম্পানিটির পক্ষ থেকে ডিএসইর ওয়েবসাইটে জানানো হয়, ঘোষিত ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ব্যাংক হিসাবে বিতরণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে আইপিও পূর্ববর্তী শেয়ার ধারণকারীদের ব্যাংক হিসাবে ঘোষিত লভ্যাংশের অর্থ গেলেও, সাধারণ শেয়ারহোল্ডালরা কিছুই পাননি। এরপরই সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের বিরুদ্ধে শেয়ারহোল্ডাররা প্রতারণার অভিযোগ তোলে।

এরই ধারাবাহিকতায় গত বছরের লভ্যাংশ প্রদানের বিষয়ে ইতোমধ্যে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে বিএসইসি ও ডিএসই। তবে কোম্পানিটির প্রদান করা ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট নয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা।  

এদিকে বিএসইস’র নির্দেশনা অনুযায়ী, কোনো কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ সভায় লভ্যাংশ সংক্রান্ত যে ঘোষণা করা হবে, তা রেকর্ড ডেটের দিন শেয়ারধারণ করা সব শেয়ারহোল্ডাররা পাবেন। এক্ষেত্রে রেকর্ড ডেটের শেয়ারহোল্ডারদের কোনো অংশকে বাদ দিয়ে লভ্যাংশ প্রদান করার সুযোগ নেই।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএসইসির একজন কর্মকর্তা রাইজিংবিডিকে বলেন, কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের লিস্টিং রেগুলেশন ও অন্যান্য আইন লঙ্ঘন করেছে। ফলে কোম্পানিটিকে আলোচ্য রেকর্ড তারিখ অনুযায়ী শেয়ারধারীদের ১০ শতাংশ সমান পরিমাণ নগদ লভ্যাংশ প্রদান করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।