অর্থনীতি

ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা বাড়াচ্ছে সরকার

ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে সরকার। বিশাল ঘাটতি পূরণে আগামী বাজেটে ব্যাংক থেকে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাচ্ছে।

আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪৪ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা। এই ঘাটতি পূরণে ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে ঋণ নেওয়া হবে এক লাখ এক হাজার ৮১৮ কোটি টাকা। এই প্রথমবারের মতো ব্যাংক থেকে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এর পাশাপাশি সঞ্চয়পত্র থেকে নেওয়া হবে আরও ৩৫ হাজার কোটি টাকা। গত চার অর্থবছরে ব্যাংক থেকে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় দ্বিগুণ বা ১৯৪ শতাংশ বেড়েছে।  অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

অর্থ বিভাগের একটি সূত্র জানায়, এর আগে বেশ কয়েক বছর সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে বেশি পরিমাণ ঋণ নিয়ে বাজেট ঘাটতি মিটিয়েছে। কিন্তু সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়া অত্যন্ত ব্যয়বহুল, প্রায় সাড়ে ১১ শতাংশ সুদ গুনতে হয়। 

অন্যদিকে ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে সুদের হার ৬ শতাংশের নিচে থাকে। তাই সরকার স্বল্প সুদে এই খাত থেকে ঋণ নিয়ে ঘাটতি অর্থায়ন করছে। তবে এতে বেসরকারি খাত ব্যাংক ঋণ থেকে বঞ্চিত হতে পারে বলে শঙ্কা রয়েছে।

এদিকে, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের মূল বাজেটে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের গৃহীত ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে এর পরিমাণ ৮৭ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা প্রাক্কলন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

বাজেট উপাত্ত পর্যালোচনায় দেখা যায়, বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে সঞ্চয়পত্র নির্ভরতা কমিয়ে আনার পর ব্যাংক খাতে সরকারের ঋণ অনেক বেড়ে গেছে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে প্রকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল ৩৪ হাজার ৫৮৭ কোটি টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছরের মূল বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা। এর বিপরীতে প্রকৃত নেওয়া হয়েছে ৭৯ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা। এরপর ২০২০-২১ অর্থবছরের মূল বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৪ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে ঋণ গ্রহণের পরিমাণ ৭৯ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকা দেখানো হয়েছে। 

অন্যদিকে, বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে আগামী অর্থবছরে ব্যাংক বহির্ভূত খাত থেকে ৪০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হবে। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের মূল বাজেটে ব্যাংক বহির্ভূত খাত থেকে অর্থায়নের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৩৭ হাজার কোটি টাকা এবং এর মধ্যে সঞ্চয়পত্র খাত থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৩২ হাজার কোটি টাকা।

পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত দুই-তিন বছরে সঞ্চয়পত্র খাত থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণ আগের তুলনায় কমেছে। কিন্তু সেটি আবার একটু একটু করে বাড়ছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র খাত থেকে সরকারের প্রকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল ৫০ হাজার ৩৫৭ কোটি টাকা (মূল বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৬ হাজার কোটি ১৯৭ কোটি টাকা)। একই অর্থবছরে ব্যাংক বহির্ভূত অন্যান্য খাত থেকে ঋণ নেওয়া হয় ২১ হাজার ৯০০ কোটি টাকা (মূল বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা ছিল তিন হাজার কোটি টাকা)। ২০১৯-২০ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র খাতে ঋণ কমে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ১৩৯ কোটি টাকা।

একই অর্থবছরে ব্যাংক বহির্ভূত অন্যান্য খাত থেকে ঋণ নেওয়া হয় ১৩ হাজার ৬৪১ কোটি টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরের মূল বাজেটে সঞ্চয়পত্র খাত থেকে ঋণ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে এ খাতে গৃহীত ঋণের পরিমাণ ৩০ হাজার ৩০২ কোটি টাকা দেখানো হয়েছে।

প্রসঙ্গত, আগামী অর্থবছরের জন্য ছয় লাখ ৭৭ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকার বাজেট প্রাক্কলন করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ।  এতে রাজস্ব প্রাপ্তি ধরা হয়েছে চার লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা।  সে হিসাবে নতুন বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে ২ লাখ ৪৪ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা।  এটি জিডিপির ৫.৫৫ শতাংশ।  চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে ঘাটতি জিডিপির ৬ দশমিক ২ শতাংশ প্রাক্কলন করা হয়েছে। সে হিসাবে ঘাটতি কমছে। কিন্তু টাকার অঙ্কে ঘাটতি বাড়ছে ৩০ হাজার ১৮৩ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে সামগ্রিক ঘাটতি ধরা হয়েছে দুই লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা।