অর্থনীতি

বাজেটে কর ব্যবধান, শেয়ারবাজারে আসবে ভালো কোম্পানি

আসন্ন ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে করপোরেট করহারের ব্যবধান বাড়ানো, দ্বৈত করহার প্রত্যাহার, মার্চেন্ট ব্যাংকের করপোরেট করহার কমানো এবং বিনা প্রশ্নে শেয়ারবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ)।

এসব সুবিধা দেওয়া হলে শেয়ারবাজারে ভালো কোম্পানি আসতে উৎসাহী হবে। পাশাপাশি দেশের শেয়ারবাজার আরও গতিশীল হবে বলে মনে করে বিএমবিএ।

সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা অস্থিরতা বিরাজ করছে শেয়ারবাজারে।  নানা পদক্ষেপেও স্থিতিশীল রাখা যাচ্ছে না বাজার। তাই আসন্ন বাজেট শেয়ার বাজারবান্ধব করার লক্ষ্যে করপোরেট ও দ্বৈত করহার কমানোর দাবি জানিয়েছে বিএমবিএ।

বিএমবিএ’র মতে, বর্তমানে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হার ২২.৫০ শতাংশ এবং অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার ৩০ শতাংশ। তবে ব্যাংক, বিমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, টেলিকম, ট্যোবাকো ইত্যাদি খাত এ আওতার বাইরে রয়েছে। অর্থাৎ তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য কর রেয়াত ৭.৫ শতাংশ আছে।  ফলে, এ সুবিধা উদ্যোক্তাদের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির জন্য উৎসাহিত করে না। তাই, তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার কমিয়ে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। কারণ, ৭.৫ শতাংশ কর সুবিধা দেশের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠিত শিল্প প্রতিষ্ঠান, বহুজাতিক কোম্পানিসহ ইত্যাদিকে আকৃষ্ট করতে পারেনি।  তাই তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে করপোরেট করহারের ব্যবধান বাড়ালে শেয়ারবাজারে ভালো কোম্পানি আসতে উৎসাহী হবে।

অপরদিকে, করপোরেট কর কর্তনের পর লভ্যাংশ দেওয়া হয়। লভ্যাংশ দেওয়ার সময় ১০ থেকে ১৫ শতাংশ হারে অগ্রিম কর কর্তন করা হয়।  পরবর্তী সময়ে আবার লভ্যাংশ গ্রহীতার ব্যক্তিগত আয়কর রিটার্নের সময় তার ওপর প্রযোজ্য হারে কর দিতে হয়। এর ফলে বিনিয়োগকারীরা লভ্যাংশ গ্রহণ না করে রেকর্ড তারিখের আগেই শেয়ার বিক্রয় করে দেয়, যা পুঁজিবাজারকে অস্থির করে তুলে। এভাবে কর প্রদান দ্বৈত কর নীতির আওতায় পড়ে। এক্ষেত্রে অগ্রিম করকে চূড়ান্ত কর হিসাবে বিবেচনা করার জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে।

বিএমবিএ আরও মনে করে, বর্তমানে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো বৃহৎ করের আওতাধীন আছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর করহার ৩৭.৫ শতাংশ, যা হতাশাজনক। বাংলাদেশে বর্তমানে ৬৬টি মার্চেন্ট ব্যাংক আছে। পুঁজিবাজারের ধীর গতি, করোনা পরিস্থিতি এবং ব্যবসার সীমাবদ্ধতার কারণে বেশিরভাগ মার্চেন্ট ব্যাংকের অপারেটিং খরচ চালানো সম্ভব হচ্ছে না। এ অবস্থায় মার্চেন্ট ব্যাংকের বৃহৎ করের আওতায় রাখা এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মতো করহার নির্ধারণ করা অযৌক্তিক। এতে প্রতিষ্ঠানগুলো টিকে থাকা হুমকির সম্মুখীন। তাই, মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোকে বৃহৎ করের আওতায় যুক্ত করে ভুল ব্যবস্থাপনায় ফেলা হয়েছে। সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে প্রতিষ্ঠানগুলোর করহার ২৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হচ্ছে। পাশাপাশি তা সাধারণ সার্কেলে এসেসমেন্ট করার জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে।

এছাড়া, শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত এবং অতালিকাভুক্ত কোম্পানির ভ্যাট হার এক। তাই, তালিকাভুক্ত কোম্পানির ভ্যাট হার হ্রাস করে ১০ শতাংশ করার জন্য আবেদন জানানো হয়েছে। এর ফলে সরকারের মোট ভ্যাট কমবে না। বর্তমানে অনেক প্রতিষ্ঠান ও শিল্পকারখানা আছে, যারা শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত না হয়ে বিভিন্ন সুবিধা ভোগ করছে। এজন্য পুঁজিবাজারের গতিশীলতা ও রাজস্ব বেশি পরিমাণ আদায়ের লক্ষ্যে তালিকাভুক্ত কোম্পানির ভ্যাট হার কমানোর প্রস্তাব করা হচ্ছে।

এদিকে, বিনা প্রশ্নে পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করেছে বিএমবিএ। এই সুযোগ অব্যাহত রাখলে শেয়ারবাজার যেমন শক্তিশালী হবে, তেমনি সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে। পাশাপাশি অর্থপাচারও কমবে। এজন্য আগামী অর্থবছরে ৫ শতাংশ কর দিয়ে শেয়ারবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ চায় বিএমবিএ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএমবিএর সভাপতি মো. ছায়েদুর রহমান বলেন, পুঁজিবাজার নিয়ে আলোচনা আসলে প্রথমেই আসে ভালো কোম্পানির শেয়ারের অভাব। তাই শেয়ারবাজারে ভালো কোম্পানি আনতে হলে  তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করহারের ব্যবধান বাড়াতে হবে। এজন্য বিএমবিএ তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার কমিয়ে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছে। কারণ, গত অর্থবছর ৭.৫ শতাংশ কর সুবিধা দিয়েও শেয়ারবাজারে দেশের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠিত শিল্প প্রতিষ্ঠান, বহুজাতিক কোম্পানিকে আকৃষ্ট করতে পারেনি। এছাড়া দ্বৈত করহার ও মার্চেন্ট ব্যাংকের করপোরেট  করহার কমানোসহ বিনা প্রশ্নে শেয়ারবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।  আশা করছি বিএমবিএ’র প্রস্তাবগুলো বাজেটে বাস্তবায়ন হবে।

এর আগে চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রাক-বাজেট আলোচনা সভায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের কাছে এসব প্রস্তাব উপস্থাপন করে বিএমবিএর সভাপতি মো. ছায়েদুর রহমানসহ অন্য সদস্যরা।