অর্থনীতি

‘আগামী বাজেটে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার সুযোগ থাকছে’

বিদেশে পাচারকৃত অবৈধ আয়ের অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার সুযোগ দিচ্ছে সরকার। তবে এ জন্য নির্দিষ্ট হারে ট্যাক্স পরিশোধ করতে হবে। তা হলেই বিদেশে পাচার করা টাকা বৈধপথে দেশে আনার সুযোগ মিলবে। আসন্ন বাজেটে এ বিষয়ে একটি ঘোষণা থাকবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

বৃহস্পতিবার (২৬ মে) দুপুরে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত্র ও অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

নির্দিষ্ট পরিমাণ ট্যাক্স নিয়ে বিদেশে পাচার হওয়া টাকা ফিরিয়ে আনার সুযোগ মিলছে, জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘এটি আপনারা বাজেটে পাবেন, বাজেটে এটা থাকবে। আর বাংলাদেশ ব্যাংক যেটি করছে, সেটি বাজেটের আগেই করছে।’

যারা টাকা পাচার করেছে, তারা ট্যাক্স দিয়ে রেকর্ডে নাম লেখাতে চাইবেন কিনা, জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বিভিন্ন দেশে তো এ সুযোগ অনেকে নিয়েছেন। ইন্দোনেশিয়া যখন এমন একটি অ্যামনেস্টি ঘোষণা করলো, তখন অনেক টাকা বিদেশ থেকে দেশে ফেরত আসে। আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের এখান থেকে যারা টাকা নিয়ে গেছেন, এ সুযোগটি তাদের জন্য অত্যন্ত ভালো একটি সুযোগ। আশা করি সুযোগটি তারা কাজে লাগাবেন। সব দিক থেকে আমাদের চেষ্টা করতে হবে।’

বিদেশ থেকে পাঁচ হাজারের বেশি ডলার পাঠানোর ক্ষেত্রেও কোনো ডকুমেন্টস লাগবে না, এতে বিদেশ থেকে কালো টাকা আসবে কি না এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমরা চাইছি, বিভিন্ন সময়ে যেসব কালো টাকা বিদেশে থেকে গেছে, বিভিন্ন সোর্স থেকে সেটি জানতে পারি। অনেক সময় বলা হয়, বিদেশে যারা টাকা নিয়ে গেছেন, তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে? বিদেশে যে টাকা চলে গেছে, আমরা বলেছি যাতে টাকাগুলো দেশে ফেরত আসে।’

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বাজেটের আগেই আমরা এটা করার চেষ্টা করছি। নিজেরাও চিন্তা-ভাবনা করছি। এ ধরনের একটি উদ্যোগ নেওয়া হবে, সেটি আমরা জানি। সংসদে বাজেট উত্থাপিত হওয়ার আগ পর্যন্ত এ বিষয়ে কিছু বলতে চাই না। যখন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে, সেটি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেও হবে। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক সার্কুলার ইস্যু করবে, তার মাধ্যমেই আপনারা জানতে পারবেন।’

তিনি বলেন, ‘যেসব টাকা বিভিন্ন চ্যানেলে চলে গেছে, সেগুলো ফেরত আনার জন্য এ উদ্যোগ। এ ধরনের অ্যামনেস্টি (সাধারণ ক্ষমা) বিভিন্ন দেশ দিয়ে থাকে। তবে কত টাকা গেছে, সেটির ধারণা দিতে পারবো না।’

ডলার সংকটের জন্য এ সিদ্ধান্ত কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই ডলার ক্রাইসিসের জন্য। ডলার আমাদের দরকার। তবে যে ক্রাইসিস বুঝিয়েছে সেটি নেই, আমাদের ফরেন রিজার্ভ ভালো। এখনো ফরেন রিজার্ভে আশেপাশের দেশের তুলনায় আমরা অনেক স্বাভাবিক অবস্থায় আছি। এ ধরনের ক্রাইসিস আমরা আগেও লক্ষ্য করেছি। ২০০১ সালে সেটি আমরা দেখেছি।’

আসন্ন বাজেট নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আসন্ন ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেটে সব শ্রেণির মানুষকে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।’

গত দুই তিনবারের বাজেটে ধনি শ্রেণির জন্য অনেক সুযোগ-সুবিধা রাখা হয়েছে, নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য তেমন কিছু রাখা হয়নি এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বাজেটে নিচু, মাঝারি, উচ্চ সব শ্রেণির মানুষকে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। যখন কোনো সিদ্ধান্ত আসে তখন অনেকেই সুবিধাভোগী হন। এখন যদি বড় কাউকে সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয় সেক্ষেত্রে মূল লক্ষ্য থাকে যে এখানে কর্মক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে কিনা। সামাজিক ক্ষেত্রে কোনো সুবিধা থাকে কি না সেটি দেখা হয়। সুযোগ দিলে যদি কোনো ভালো কিছু হয় উপকারভোগী হবেন প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। এদেরই আমরা প্রাধান্য দিয়েছি।’

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে বাজেট হচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাজার ওঠা-নামা সারাবিশ্বেই হচ্ছে। ধনি-দরিদ্র কোনো দেশ এর বাইরে নেই। আমাদের মূলকাজ হবে বাজার স্থিতিশীল রাখা। আমরা বিভিন্ন পলিসির মাধ্যমে এটি একটি জায়গায় নিয়ে আসতে চাই। আমাদের গ্রোথ দরকার। আমেরিকায় ৪০ বছরে যেটা হয়নি সে পরিমাণ মূল্যস্ফীতি হয়েছে। প্রত্যেক দেশে একই রকম অবস্থা। মার্কেট ইকোনমিতে যেমন সুবিধা পাওয়া যায় তেমন কোনো সমস্যা হলে সারাবিশ্বে সেটি ছড়িয়ে পড়ে। আমরা চেষ্টা করছি মানুষ যতটা কম ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ঈদ আসছে, এক কোটি গরিব পরিবারকে কম দামে মশুরের ডাল দেওয়া হবে।’

গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ালে সেটি আত্মঘাতী হবে, ব্যবসায়ীদের এমন প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা নিজেরাও সেটি বুঝি। দাম বাড়ালে তো অবশ্যই কোনো না কোনোভাবে কারও না কারও ওপরে গিয়ে সেটির ইম্প্যাক্ট পড়ে। আমরা চাই ইম্প্যাক্ট যেন কম পড়ে। সব জিনিস যেন সহনীয় পর্যায়ে থাকে সেই ব্যবস্থা করবো। সেজন্য সরকার নিজেই কনজ্যুমারের সঙ্গে এটি শেয়ার করে নিচ্ছে।’