অর্থনীতি

অস্থির কাগজের বাজার

বেড়েছে কাগজের দাম। এতে বেকায়দায় পড়েছে তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন শিল্পে দরকারি কার্টন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার কারণে দেশের বাজারেও বাড়ছে কাগজের দাম। দেশে তৈরি কাগজের প্রায় সব ধরনের কাঁচামাল আমদানি করতে হয়। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে জাহাজ ভাড়া বেড়েছে প্রায় তিনগুণ। কেমিক্যালের দামও বেড়েছে। নতুন মাত্রা যোগ করেছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। দাম বাড়ার কারণে কমেছে এলসির পরিমাণ। এতে সরবরাহের তুলনায় চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় দামে এর প্রভাব পড়েছে। পাশাপাশি বিদেশি কাগজের দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশি কাগজের চাহিদা বেড়েছে।

গত ২৬ জুলাই কাগজের মূল্য বৃদ্ধির কারণে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) খরচ কমাতে দাপ্তরিক কাজে কাগজসহ সরঞ্জামাদির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করাসহ (যেমন: কাগজের উভয় পৃষ্ঠায় প্রিন্ট করতে হবে এবং অপ্রয়োজনীয় প্রিন্ট পরিহার করতে হবে) ১৪ দফা নির্দেশনা দিয়েছে।

রাজধানীর নীলক্ষেতের কাগজ ব্যবসায়ী সাজিদ এহসান রাইজিংবিডিকে বলেন, আমার আগে কাগজের রিম বিক্রি করছি ২২০ টাকায়, এখন তা ৩৯০ টাকা। কলম থেকে শুরু করে সব স্টেশনারি পণ্যের দাম এখন দ্বিগুণ। প্রায় প্রতিদিনই কাগজের মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে আমাদের ব্যবসায় টিকিয়ে রাখাই কষ্ট হয়ে পড়ছে। দোকান ভাড়া, কর্মচারীর বেতন ও আনুষঙ্গিক খরচ দিয়ে পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকাই বড় কষ্টের ব্যাপার।

নীলক্ষেতের বই ব্যবসায়ী কামরুজ্জামান খান রাইজিংবিডিকে বলেন, বই ব্যবসার অবস্থা এখন খারাপ। আমি আজ সারাদিন ১০০০ টাকার বই বিক্রয় করতে পেরেছি। ক্রেতা কম। এর অন্যতম কারণ হলো বই মূল্য অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। আগে যে বই বিক্রি করতাম ২০০ টাকায়, তা এখন ৩৫০ থেকে ৪০০টাকায় বিক্রি করতে হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী রাফিজ রায়হান রাইজিংবিডিকে বলেন, বাড়ি থেকে মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা পাঠায়। যা দিয়ে চলা খুব কঠিন। আমি বিসিএস প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমার গণিতসহ বিভিন্ন বিষয়ের জন্য প্রচুর কাগজের প্রয়োজন হয়। তবে এখন বাজারে যা অবস্থা কাগজ কেনা কষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

কাগজের মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী মামুনুর রশিদ রাইজিংবিডিকে বলেন, আমারা বেশিরভাগই মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। বর্তমানে যে হারে কাগজের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে তাতে আমাদের লেখাপড়া বন্ধ হওয়ার উপক্রম। প্রয়োজনীয় বই ও খাতা ক্রয় করার ক্ষমতা এখন সাধ্যের বাইরে চলে গেছে।

পুরান ঢাকার বাংলাবাজারের মাইমুনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্রেসের মালিক শফিকুল ইসলাম রাইজিংবিডিকে বলেন, হঠাৎ করে সব ধরনের কাগজের এই মূল্য বৃদ্ধিতে বেশি অসুবিধায় পড়েছি আমরা। বছরের শেষ ভাগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সবগুলো স্তরে বার্ষিক পরীক্ষা ও নতুন বছরের বই ছাপা থাকায় এই সময়ে কাগজের চাহিদা বেশি থাকে। ‘কাগজ ও কালির দাম বেড়ে যাওয়ায় অর্ডার নেওয়া মাল ডেলিভারি দিতে লোকসান গুণতে হচ্ছে। করোনায় বড় লোকসান কাটিয়ে যখন ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই চলছে। এখন এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে ব্যবসা গুটিয়ে পথে বসতে হবে। এমন পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের এখনই কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। অন্যথায় কাগজ শিল্প গভীর সংকটে পড়বে।