অর্থনীতি

বন্ধ রোজ হ্যাভেনের নেই এটিবির প্রস্তুতি, ব্যাখ্যা তলব

পুঁজিবাজারের ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) মার্কেট থেকে অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডে (এটিবি) স্থানান্তর হবে তালিকাভুক্ত কোম্পানি রোজ হ্যাভেন বলপেন। তবে স্থানান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার বিষয়ে কোম্পানিটি এখনও কোনও প্রস্তুতি গ্রহণ করেনি।

দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা এ কোম্পানিটির কারখানায় নেই কোনও সাইনবোর্ড। কারখানায় একটি দোতলা ভবন ছাড়া তেমন অবকাঠামো নেই। এমনকি দোতলা ভবনটি যে জমিতে অবস্থিত সেটাও আরেক প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে অভিযোগ রয়েছে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে।

সম্প্রতি রোজ হ্যাভেন বলপেনের কারখানা পরিদর্শন করে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) এমনই তথ্য জানিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)।

আর ওই তথ্যের ভিত্তিতে রোজ হ্যাভেন বলপেনের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ পরিচালনা পর্ষদের কাছে ব্যাখ্যা ও প্রয়োজনীয় নথিপত্র চেয়েছে বিএসইসি। একইসঙ্গে ব্যাখ্যাসহ নথিপত্র প্রদানের ব্যর্থ হলে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছে কমিশন।

গত সপ্তাহে রোজ হ্যাভেন বলপেনের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ পরিচালনা পর্ষদের কাছে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। একইসঙ্গে বিষয়টি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই), সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অবহিত করা হয়েছে।   এদিকে রোজ হ্যাভেন বলপেনের কারখানা পরিদর্শনের বিষয়ে ডিএসইর পরিদর্শন প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে, কোম্পানিটি তার সর্বশেষ বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) ১৭ বছর আগে অর্থাৎ ২০০৫ সালের ৭ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। এরপর কোম্পানিটির আর কোনও এজিএম অনুষ্ঠিত হয়নি। কোম্পানিটির উদ্যোক্তা বা পরিচালক ব্যতীত সকল শেয়ারহোল্ডাররা (যারা কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধনের ৬১.৩৭ ধারণ করে রয়েছে) দীর্ঘ সময় ধরে কোনও লভ্যাংশ পাচ্ছেন না। এটা বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর এবং কমিশনের কাছে তা অনাকাঙ্ক্ষিত। আর ২০০৩ সালের পর থেকে কোম্পানিটি আর নগদ লভ্যাংশ দেয়নি।

এছাড়া কোম্পানিটি ২০২১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর জারি করা বিএসইসির নির্দেশনা না মানায়, তাদের শেয়ারগুলো এখনও কাগুজে অবস্থা রয়েছে। প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও), পুনপ্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) ও রাইট শেয়ার ইস্যুর (আরওডি) মাধ্যমে রোজ হ্যাভেন বলপেন ৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকার পরিশোধিত মূলধন ১২.৫০ টাকায় উন্নীত করেছে। এরপরেও বর্তমানে কারখানাটি বন্ধ রয়েছে এবং প্রধান ফটকে কোনও সাইনবোর্ড পাওয়া যায়নি। আর কারখানা চত্বরে একটি দোতলা ভবন রয়েছে। তবে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, কোম্পানিটির দোতলা ভবন যেখানে অবস্থিত, সে জামিটি ইউনাইটেড লেদার ইন্ডাস্ট্রিজের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। আর ওই প্রতিষ্ঠানটি রোজ হ্যাভেন বলপেনের কারখানার পাশে অবস্থিত। আর কোম্পানির বিরুদ্ধে বর্তমানে ১৬টি সার্টিফিকেট মামলা রয়েছে। এজন্য কমিশন কোম্পানিকে ২২ কোটি ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে বলে ডিএসইর পরিদর্শন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

এদিকে রোজ হ্যাভেন বলপেনকে বিএসইসি জানিয়েছে, কোম্পানিটির বর্তমান সার্বিক দিক বিবেচনা করে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ এর ধারা ১১(২) এর অধীনে প্রয়োজনীয় নথিপত্র এবং প্রাসঙ্গিক কাগজপত্রসহ আপনাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে নির্দেশ দেওয়া হলো। এ নির্দেশনা পরিপালনে ব্যর্থ হলে কমিশন আইনানুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

এছাড়া রোজ হ্যাভেন বলপেনের জমির মিউটেশন কপিসহ জমির বিবরণ, উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার পর প্রকাশিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য (পিএসআই), লাইন অব বিজনেস (এলওবি) পরিবর্তন সংক্রান্ত বিবৃতি এবং ট্রেডিং ব্যবসা শুরু করার পর প্রকাশিত পিএসআই, কোম্পানিটি এটিবিতে স্থানান্তরের উদ্যোগ না নেওয়ার কারণ, জমিসহ সম্পত্তি, যন্ত্রাংশ এবং সরঞ্জামের পুনর্মূল্যায়ন প্রতিবেদন,  বিগত ৫ বছরের আর্থিক বিবরণী, আইপিও বা আরপিও বা আরওডির মাধ্যমে উত্তলিত অর্থে ব্যবহারের প্রতিবেদন, সমস্ত ঋণের বিবৃতিসহ তার ব্যবহারের রিপোর্ট এবং  কারখানার কার্যক্রম বন্ধের বিষয়ে পরিচালনা পর্ষদের সভার কার্যবিবরণী ও প্রাসঙ্গিক নথিপত্র চেয়েছে বিএসইসি।

২০২১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর ওটিসি মার্কেট বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি। ফলে ওই মার্কেটের আওতাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে আর্থিক সক্ষমতা ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার ভিত্তিতে এসএমই প্ল্যাটফর্ম ও অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডে (এটিবি) স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি। এরই ধারাবাহিকতায় ওটিসি মার্কেট থেকে রোজ হ্যাভেন বলপেনকে এটিবিতে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। স্থানান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্নের আগে আর্থিক সক্ষমতা যাচাই করতে কোম্পানিটির অফিস ও কারখানা পরিদর্শনের সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। আর এ পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয় ডিএসইকে। ধারাবাহিকতায় ডিএসই কোম্পানিটির অফিস ও কারখানা পরিদর্শন করে বিএসইসি প্রতিবেদন দাখিল করেছে।

প্রসঙ্গত, রোজ হ্যাভেন বলপেন পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ১৯৯৭ সালে। কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ১২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। সে হিসেবে কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ১ কোটি ২৫ লাখ। এর মধ্যে কোম্পানিটির উদ্যোক্তা পরিচালকের হাতে ৩৮.৬৩ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ৯.০৭ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে ১.৭৮ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ৫০.৫২ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। ডিএসইতে রোজ হ্যাভেন বলপেনের শেয়ার সর্বশেষ ১০ টাকায় লেনদেন হয়েছে।