অর্থনীতি

বে লিজিংয়ের লভ্যাংশ বিভ্রান্তিকর জানিয়ে ডিএসইর চিঠি

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আর্থিক খাতের কোম্পানি বে লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের পরিচালনা পর্ষদ ২০২১ সালের সমাপ্ত হিসাব বছরে সাধারণ শেয়াহোল্ডারদের জন্য শেয়ার প্রিমিয়াম থেকে ৫ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। তবে, কোম্পানিটি সর্বশেষ সমাপ্ত হিসাব বছরে শেয়ারপ্রতি লোকসানে আছে। একই সঙ্গে কোম্পানির রক্ষিত মুনাফা এবং চলতি বছরের মুনাফা উভয়ই নেতিবাচক। এর পরও কোম্পানিটি শেয়াহোল্ডারদের জন্য বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে, যা বিএসইসির জারি করা নির্দেশনার পরিপন্থী।

কোম্পানিটির ঘোষণাকৃত বোনাস লভ্যাংশ বিনিয়োগকারীদের জন্য বিভ্রান্তিকর বলে মনে করে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। এ বিষয়টি পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) অবহিত করেছে ডিএসই। সম্প্রতি, এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে এবং মন্তব্য করে বিএসইসির কাছে চিঠি দিয়েছে ডিএসই।

বে লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট চলতি বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর পরিচালনা পর্ষদের ১৯১তম সভায় ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ৫ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে৷ এ বিষয়ে ডিএসইর প্রশ্নের জবাবে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শেয়ার প্রিমিয়াম থেকে বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়ে। কিন্তু, কোম্পানির উক্ত পদক্ষেপ ২০২১ সালের ৩০ জুন বিএসইসির জারি করা নির্দেশনার ধারা ২(বি) এর পরিপন্থী বলে মনে করে ডিএসই। নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে, কোম্পানি এই ধরনের বোনাস লভ্যাংশ বা বোনাস শেয়ার সঞ্চিত মুনাফা বা রক্ষিত আয় থেকে ঘোষণা করেতে পারবে। কিন্তু, কোম্পানি শেয়ার প্রিমিয়াম থেকে এই বোনাস লভ্যাংশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

ডিএসই জানিয়েছে, এই বোনাস লভ্যাংশের বিষয়ে কোম্পানিটির ঘোষিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য (পিএসআই) অনুযায়ী ডিএসইর ওয়েবসাইটে তথ্য প্রচার করা হয়েছে। তবে, এটা উল্লেখ্য যে, কোম্পানির ধরে রাখা মুনাফা এবং চলতি বছরের মুনাফা উভয়ই নেতিবাচক। আর কোম্পানিটির এই ধরনের ঘোষণা বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করতে পারে। তাই, বিষয়টি বিএসইসিকে অবহিত করা হলো।

এর আগে চলতি মাসেই বে লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের ২০২১ সালের আর্থিক প্রতিবেদনে শেয়ারপ্রতি মুনাফার (ইপিএস) অস্বাভাবিক উত্থান-পতন খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি। এ লক্ষ্যে কমিশন তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটির সদস্যরা হলেন—বিএসইসির উপ-পরিচালক কাজী মো. আল-ইসলাম, সহকারী পরিচালক মো. কাউসার আলী ও মো. আতিকুর রহমান।

কোম্পানির ২০২১ সালের ৯ মাসের অনিরীক্ষিত ও ১২ মাসের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে গড়মিল রয়েছে কি না, ইনসাইডার ট্রেডিং আছে কি না, শেয়ারের দামে প্রভাব পড়েছে হয়েছে কি না এবং কারসাজি হয়েছে কি না, সেসব খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটিকে নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। কোম্পানির এসব বিষয় তদন্ত করে কমিটিকে আগামী ২০ কার্যদিবসের মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন কমিশনে দাখিল করতে বলা হয়েছে।

বে লিজিং কর্তৃপক্ষ ২০২১ সালের প্রথম ৯ মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর, ২১) সমন্বিত শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) দেখিয়েছে ২.৭৫ টাকা। তবে, ১২ মাস শেষে কোম্পানির মুনাফার পরিবর্তে সমন্বিত শেয়ারপ্রতি লোকসান দেখিয়েছে ০.৯৯ টাকা। অর্থাৎ প্রথম ৯ মাসে ২.৭৫ টাকা মুনাফা হলেও শেষ ৩ মাসে (অক্টোবর-ডিসেম্বর, ২১) লোকসান হয়েছে ০.৯৯ টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে সমন্বিত শেয়ারপ্রতি মুনাফা ছিল ১.১৪ টাকা।

কোম্পানির এই অস্বাভাবিক আর্থিক হিসাব প্রশ্নবিদ্ধ বলে মনে করছেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা। এরই ধারাবাহিকতায় বিএসইসি কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন তদন্তে কমিটি গঠন করেছে।

প্রসঙ্গত, বে লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ২০০৯ সালে। কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ১৪০ কোটি ৮৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা। সে হিসেবে কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ১৪ কোটি ৮ লাখ ৮৮ হাজার ৪৪৩টি। এর মধ্যে কোম্পানিটির উদ্যোক্তা পরিচালকের হাতে ৩০.০৭ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ২১.৪২ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে ০.১৫ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৪৮.৩৬ শতাংশ শেয়ার আছে। ডিএসইতে বে লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের শেয়ার মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সর্বশেষ ২৩.৯০ টাকায় লেনদেন হয়েছে।