স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার বাস্তবতায় আয়কর হার, ভ্যাট হার, সম্পূরক কর, শুল্কহারসহ কাস্টমস ডিউটি পুনর্বিন্যাস করার পরামর্শ দিয়েছে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই)।
মঙ্গলবার (১ মার্চ) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এর সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনায় এমসিসিআই এর পক্ষ থেকে এ পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানে এমসিসিআই সভাপতি সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্মার্ট বাংলাদেশের নির্মাণের যে ঘোষণা দিয়েছেন তা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে হলে সম্পূর্ণ অটোমেশন ব্যবস্থার সুষ্ঠু পরিকল্পনা খুবই জরুরি। এ অবস্থায় বর্তমান বাজেট প্রস্তাবনায় এর রূপরেখা বা পরিকল্পনা থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, এনবিআর এর বৃহৎ করদাতা ইউনিটের অধিকাংশ সদস্যই এমসিসিআইয়ের সদস্য। সামগ্রিক জাতীয় রাজস্বের প্রায় ৪০ শতাংশ বা তারচেয়েও বেশি আসে এমসিসিআইর সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে। এমসিসিআই বরাবরই রাজস্ব সংগ্রহ এবং নীতি বাস্তবায়নে এনবিআরকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে আসছে। বাজেট প্রস্তাবনার মধ্যে সব সময় বাজেট ব্যবস্থাপনা অধিকতর গতিশীল করার দিকে জোর থাকে। আমাদের বাজেট প্রস্তাবনায় দেশের কল্যাণ ও বিনিয়োগবান্ধব ব্যবসা চিন্তার প্রতিফলন থাকে।
করপোরেট করহার হ্রাসের সুপারিশ করে এমসিসিআই সভাপতি বলেন, বিগত অর্থবছরে কিছু শর্ত সাপেক্ষে প্রায় সব ক্ষেত্রে করপোরেট করহার ২.৫ শতাংশ পর্যন্ত কমানো হয়েছে। বর্তমান বাস্তবতায় হ্রাসকৃত কোম্পানি করহার সুবিধা কেউই ভোগ করতে পারছে না। অর্থ আইন, ২০২২ অনুযায়ী নগদ লেনদেনের শর্তাবলির প্রযোজ্যতার কারণে হ্রাসকৃত করহার সুবিধা নেওয়া সম্ভব হয়ে উঠছে না। আমাদের দেশে কার্যকরি করপোরেট করহার অনেক বেশি।
এমসিসিআই ভ্যাট ব্যবস্থাপনা সফটওয়্যারের মাধ্যমে বর্তমানে প্রায় সব কোম্পানিগুলো মাসিক ভ্যাট রিটার্ন দিয়ে থাকে। তবে এই ব্যবস্থা পূর্ণাঙ্গভাবে অটোমেশন নয়। ই-ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে এই অটোমেশন ব্যবস্থা গতিশীল হবে বলে মনে করে এমসিসিআই।
এছাড়া সময়ের চাহিদার প্রতি লক্ষ্য রেখে কর নির্ধারণ ব্যবস্থা, আপিল, ট্রাইব্যুনাল, বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (এডিআর) পর্যায়ে প্রচলিত আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধনী এনে অনলাইনে শুনানি গ্রহণের বিধান দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
এদিন বিকেলে আলোচনায় অংশ নেয় ফরেন ইনভেস্টর্স চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ফিকি)। ক্যাশলেস সমাজ গড়তে সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিতে হবে বলে মনে করে তারা। বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী, একটি প্রতিষ্ঠান বছরে ৩৬ লাখ টাকার ওপর নগদ লেনদেন করলে ২.৫ শতাংশ অতিরিক্ত কর দিতে হয়। এই হার শূন্য শতাংশে নামিয়ে আনার প্রস্তাব দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
সংগঠনটি জানায়, এক ধাক্কায় ক্যাশলেস সমাজ গড়তে চাইলে তা সম্ভব হবে না। এজন্য ধাপে ধাপে এগিয়ে যেতে হবে। এছাড়া বর্তমানে ইফেক্টিভ ট্যাক্স রেটের হার ২৭ দশমিক ৫০ শতাংশ। তবে ব্যবসা সহজ করতে তা যৌক্তিক করার পরামর্শ প্রতিষ্ঠানটির।
অনুষ্ঠানে সংগঠনের সভাপতি নাসের এজাজ বিজয় বলেন, করপোরেট করহার কমিয়ে ২৭.৫০ শতাংশ করার পরও বিভিন্ন শর্তের কারণে যে সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে না। তাই টিডিএসের বিপরীতে ন্যূনতম করহার যৌক্তিক করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। এছাড়া গত কয়েক বছরে এনবিআর কিছু পণ্যের এইচএস কোড পরিবর্তন করেছে যা ওয়ার্ল্ড কাস্টম অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউসিও) এইচএস কোড গাইডলাইনের পরিপন্থি উল্লেখ করে তাতে আমদানিকারকের অনেক খরচ বাড়ছে বলে জানান তিনি। সেই সঙ্গে তা বাতিল করার আহ্বান জানান তিনি।
এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, আমাদের নতুন ভ্যাট আইনটি সম্পূর্ণ ডিজিটাল অপারেশন, ডিজিটাল ম্যানেজমেন্ট, ডিজিটাল সিস্টেমভিত্তিক আইন। এই আইনের সঠিক ব্যবহার করতে গেলে ওই জায়গায় যেতে হবে। কিন্তু আমরা তো আইনটা করেছি মাত্র, তাই নানা ধরনের অসুবিধা দেখা দিচ্ছে। এটা ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে হবে।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ডিজিটাল ইনভয়েস হলে আর কিছু লাগে না। ডিজিটাল ইনভয়েস না হয় বাদ দিলাম, ইনভয়েসের চর্চা কি আমাদের আছে? কেনাকাটা করতে গেলে আমরা ইনভয়েস নিই না। দোকানদার যদি দেয়, তা ফেলে দিই। এই চর্চাটা আমাদের সমাজে আনতে হবে। এছাড়া রিটার্ন জমা দেওয়া সহজ করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
প্রাক-বাজেট আলোচনায় এনবিআর চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে শুল্ক বিভাগের সদস্য মো. মাসুদ সাদেক, ভ্যাট নীতির সদস্য জাকিয়া সুলতানা ও আয়কর নীতির সদস্য সামস উদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।