অর্থনীতি

অ্যাক্টিভ ফাইনের তদন্ত: ১০ এপ্রিলের মধ্যে নথি দাখিলের নির্দেশ

পুঁজিবাজারে ওষুধ ও রসায়ন খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি অ্যাক্টিভ ফাইন কেমিক্যালসের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ ও আর্থিক দুর্বলতা অনুসন্ধানের লক্ষ্যে বিশেষ নিরীক্ষাসহ তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। তবে, কোম্পানিটির অসহযোগিতা ও প্রয়োজনীয় নথিপত্র না দেওযায় বিশেষ নিরীক্ষাসহ তদন্ত কার্যক্রম এখনও সম্পন্ন হয়নি।

এদিকে, প্রয়োজনীয় নথিপত্র দাখিল করতে বিএসইসির কাছে এক বছর সময় চেয়ে আবেদন জানিয়েছে কোম্পানিটি। কিন্তু, কোনো সময় না দিয়ে অ্যাক্টিভ ফাইনকে আগামী ১০ এপ্রিলের মধ্যে সব নথিপত্র জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।

এর আগে তদন্তের বিষয়ে অ্যাক্টিভ ফাইন কোনো সহযোগিতা না করায় কমিশনে অভিযোগ জানায় নিরীক্ষক। পরবর্তীতে এ বিষয়ে কোম্পানিটিকে তলব করে সতর্ক করে কমিশন। কিন্তু, এরপরও প্রয়োজনীয় নথি বা কাগজপত্র দিয়ে নিরীক্ষককে সহযোগিতা করেনি কোম্পানিটি। পরে বিষয়টি নিয়ে কোম্পানি সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়। এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ একটি আদেশ জারি করে। কোম্পানি সহযোগিতা না করায় তদন্ত কমিটি করার দুই বছর চলে গেলেও শেষ হয়নি তদন্ত। আর সময় দেওয়া যাবে না, জানিয়ে কমিশন সময় বেঁধে দিয়ে এ সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। সম্প্রতি এ বিষয়ে একটি চিঠি কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর পাঠিয়েছে বিএসইসি।

বিএসইসির চিঠিতে তদন্তের বিষয়ে কোম্পানিকে দেওয়া আগের চিঠির বিষয়ে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, কোম্পানি গত ১ মার্চ কমিশনের কাছে একটি চিঠি জমা দিয়েছে, যা মার্চের ৫ তারিখ কমিশন পেয়েছে। প্রয়োজনীয় নথিপত্র জমা দেওয়ার জন্য কমিশনকে এক বছরের সময় দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে। কিন্তু, কমিশন উল্লেখ করেছে যে, তদন্ত কমিটির প্রয়োজনীয় নথিগুলো সময় সময়ে প্রয়োজনীয় এবং পুরনো দলিল। সেই সঙ্গে এ ধরনের কোনো দলিল প্রস্তুত করার সুযোগ নেই। এছাড়া, তদন্ত কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সীমিত সময় দেওয়া হয়। তাই, কমিশনের পক্ষে আর সময় বাড়ানো সম্ভব নয়।

এদিকে, বিএসইসির ২ ফেব্রুয়ারি দেওয়া চিঠির বিষয়ে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, কোম্পানিকে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯-এর ধারা ২ই এবং ২১(৩) এর অধীনে নথিগুলো সরবরাহ করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরে ২২ ফেব্রুয়ারির চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, আগামী ১০ এপ্রিলের মধ্যে তদন্ত কমিটির কাছে সব নথি বা কাগজপত্র জমা দিয়ে সহযোগিতা করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হলো।

চিঠিতে আরও উল্লেখ্য রয়েছে যে, সময় আর বাড়ানো হবে না এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সহযোগিতাসহ কোম্পানির প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে। সেটা না হলে কোম্পানিটি কোনো স্থায়ী সম্পদ অর্জন করেনি বিবেচনা করা হবে বলে জানিয়েছে বিএসইসি।

এদিকে, অ্যাক্টিভ ফাইন কেমিক্যালসের বিশেষ নিরীক্ষার অবস্থা সম্পর্কে নিরীক্ষক হাওলাদার ইউনুস অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট নিয়োগের বিষয়ে এর আগে ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১ নভেম্বর ২০২১, ২৫ মে ২০২২ এবং ১৬ অক্টোবর ২০২২ এ মোট চারটি চিঠি দিয়েছে কমিশন। সেই চিঠিতে কমিশন হাওলাদার ইউনুস এবং কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টকে কোম্পানিটির বিশেষ নিরীক্ষা করার জন্য অনুমতি দিতে সম্মতি জানিয়েছে। এই চিঠি জারির দিন থেকে আগামী অতিরিক্ত ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে কোম্পানিটির বিশেষ নিরীক্ষা সম্পন্ন করতে হবে এবং কমিশনে প্রতিবেদন জমা দিতে।

এর আগে অ্যাক্টিভ ফাইন কেমিক্যালসের আর্থিক বিবরণী বিশেষ নিরীক্ষার নির্দেশ দেয় বিএসইসি। নিরীক্ষার জন্য হাওলাদার ইউনুস অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টকে নিয়োগ দিয়েছিল কমিশন। তবে, বিশেষ নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় কোম্পানি কর্তৃপক্ষ সহযোগিতা করেনি বলে বিএসইসিতে অভিযোগ করেছে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান। তাই, বিএসইসির নির্দেশনা অনুযায়ী বিশেষ নিরীক্ষককে অসহযোগিতার জন্য গত বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি কোম্পানিটিকে কারণ দর্শাতে বলা হয়।

অ্যাক্টিভ ফাইন কেমিক্যালসের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ এবং আর্থিক দুর্বলতা অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি গঠন করে বিএসইসি। কমিটিকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

অ্যাক্টিভ ফাইন কেমিক্যালের বিরুদ্ধে গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন—বিএসইসির অতিরিক্ত পরিচালক মোল্লা মো. মিরাজ-উস-সুন্নাহ, একই প্রতিষ্ঠানের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ রতন মিয়া ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্যবস্থাপক স্নেহাশিস চক্রবর্তী।

প্রসঙ্গত, ২০১০ সালে শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত হয় অ্যাক্টিভ ফাইন কেমিক্যালস। ২৩৯ কোটি ৯৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা পরিশোধিত মূলধনের ‘বি’ ক্যাটাগরির এ কোম্পানির মোট শেয়ার ২৩ কোটি ৯৯ লাখ ৩৬ হাজার ৫৮০টি। এর মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে ১২.০৪ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ২২.৩৮ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে ০.২৭ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ৬৫.৩১ শতাংশ শেয়ার আছে। বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) অ্যাক্টিভ ফাইন কেমিক্যালসের শেয়ার সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে ১৯.৩০ টাকায়।