অর্থনীতি

আমান কটনের আইপিও’র অর্থে এফডিআর: তথ্য চায় বিএসইসি

প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে উত্তোলন করা অর্থ কাজে না লাগিয়ে এফডিআর করেছে পুঁজিবাজারে বস্ত্র খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি আমান কটন ফাইব্রাস লিমিটেড। ওই এফডিআরের বিপরীতে আমান গ্রুপের অন্য কোম্পানির নামে ঋণ নেওয়া হয়। ফলে আইপিওর টাকার অপব্যবহার বন্ধে আমান কটন ফাইব্রাস লিমিটেডের এফডিআরের বিপরীতে নেওয়া ঋণের লেনদেন বন্ধ করতে ইতোমধ্যে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এবার তদন্তের প্রয়োজনে সেই এফডিআরের তথ্য ও নথিপত্র চেয়েছে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

সম্প্রতি এ বিষয়ে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংকে একটি চিঠি পাঠিয়েছে কমিশন। ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর পাঠানো চিঠিতে এফডিআরের তথ্য ও নথি চাওয়া হয়েছে, যা আগামী পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে জমা দেওয়ার জন্য জানিয়েছে কমিশন।

ব্যাংকটিকে দেওয়া বিএসইসির চিঠিতে তদন্ত কমিটি গঠন করার বিষয়ে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, আমান কটন পুঁজিবাজার থেকে আইপিওর মাধ্যমে উত্তোলন করা ৭৩ কোটি টাকা ব্যবহার করে এফডিআর অ্যাকাউন্ট খোলার বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য কমিশন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তদন্ত কমিটির অনুসন্ধানের সঙ্গে সম্পর্কিত সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ এর ধারা ২১(২) এর অধীনে ব্যাংকটিকে চিঠিতে উল্লেখিত তথ্য ও নথি জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ চিঠি জারির পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংককে এসব তথ্য জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হলো।

চিঠিতে উল্লেখিত যেসব তথ্য ও নথি চাওয়া হয়েছে সেগুলো হলো- তালিকাভুক্ত কোম্পানির নামে এফডিআর অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য আমান কটন যেসব সহায়ক নথি জমা দিয়েছে সেগুলোর অনুলিপি। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত উল্লিখিত অ্যাকাউন্টের সর্বশেষ অবস্থা বিস্তারিত তথ্যসহ জমা দিতে হবে। এফডিআরের বিপরীতে লিয়েন থাকা তৃতীয় পক্ষকে ঋণ প্রদানের জন্য যেসব সহায়ক নথি জমা দেওয়া হয়েছে সেগুলোর অনুলিপি। এছাড়া উল্লিখিত তৃতীয় পক্ষের ঋণের বিস্তারিত তথ্য সহ সুবিধাভোগীর নাম, ঋণের অবস্থা এবং বকেয়া ঋণের পরিমাণ ও ইত্যাদি।

তথ্য মতে, তালিকাভুক্ত কোম্পানিটি প্রসপেক্টাসে উল্লিখিত আইপিওর টাকা ব্যবহার পরিকল্পনা অনুযায়ী ১ কোটি টাকাও ব্যবহার করেনি। বরং আইপিওর ৭৩ কোটি টাকা কোম্পানিটি ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকসহ বেশ কয়েকটি বাণিজ্যিক ব্যাংকে এফডিআর হিসাবে জমা রেখেছে। যা আমান ফুডস লিমিটেড এবং আকিন ক্যারিয়ার লিমিটেডের অনুকূলে ঋণ প্রদানের জন্য এফডিআরের অধীনে লিয়েন করে রাখা হয়েছে। এতে আমান কটন আইপিও আয়ের অপব্যবহার করেছে, যা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ এর ধারা ২সিসি এর অধীনে আইপিওর সম্মতি পত্রের শর্ত লঙ্ঘন। তাই এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি দ্বারা ব্যাংককে কমিশনের পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত আমান কটনের নামে জমা থাকা এফডিআর হিসেবের ঋণ লেনদেন স্থগিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়।

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় আমান কটন ফাইব্রাস লিমিটেড। ‘এ’ ক্যাটাগরির এই কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ১০০ কোটি ৮৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা। সে হিসেবে কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ১০ কোটি ৮ লাখ ৩৩ হাজার ৩৩৩টি। এর মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে ৪৯.৫৮ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ১৪.২৫ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৩৬.০৭ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। সর্বশেষ ২০২২ সালের ৩০ জুন কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের জন‌্য ১০ শতাংশ নগদ লভ‌্যাংশ প্রদান করেছে। বুধবার (১০ মে) ডিএসইতে কোম্পানিটির শেয়ার সর্বশেষ ২৬.৫০ টাকায় লেনদেন হয়েছে।