অর্থনীতি

পাচার হওয়া অর্থ কি রেমিট্যান্স হয়ে ফিরে আসছে, প্রশ্ন সিপিডি’র

বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ রেমিট্যান্স আকারে ফিরে আসছে কি না, এ প্রশ্ন তুলেছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।

শনিবার (২৭ মে) রাজধানীর ধানমন্ডিতে সিপিডি কার্যালয়ে এক সভায় রেমিট্যান্স প্রবাহের চিত্র তুলে ধরেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। সেখানেই সন্দেহের বিষয়টি সামনে আনেন তিনি। সভায় উপস্থিত ছিলেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান, রিসার্চ ফেলো মুনতাসির কামাল প্রমুখ।

সিপিডি বলেছে, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার মধ্যপ্রাচ্য। সেখান থেকে রেমিট্যান্সও আসে সবচেয়ে বেশি। কিন্তু, দৃশ্যপট এখন পাল্টে গেছে। রেমিট্যান্স প্রবাহের দিক থেকে মধ্যপ্রাচ্যের জায়গা দখলে নিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। 

যুক্তরাষ্ট্র থেকে হঠাৎ রেমিট্যান্স আসা বেড়ে যাওয়া নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে সিপিডি। বিষয়টিকে ‘অস্বাভাবিক’ আখ্যা দিয়ে পাচারের অর্থ রেমিট্যান্স হয়ে দেশে ফিরছে কি না, এ প্রশ্ন তুলেছে সংস্থাটি। 

ফাহমিদা খাতুন বলেছেন, এটা একেবারেই আনইউজুয়াল, কখনোই হয় না। আমরা জানি, আমাদের বেশিরভাগ রেমিট্যান্স কোথা থেকে আসে। গত ১০ মাসে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে ৯ দশমিক ২২ লাখ মানুষ গেছে। সেখান থেকে প্রত্যাশামতো রেমিট্যান্স আসছে না। লোক যাওয়া ও রেমিট্যান্সের মধ্যে মিসম্যাচ হচ্ছে। এতদিন সৌদি আরব থেকে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এলেও বর্তমানে সে জায়গা আমেরিকার দখলে। গত ২০২১-২০২২ অর্থবছরের ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) সৌদি থেকে ৩ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এলেও চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের একই সময়ে এসেছে ৩ দশমিক ০৪ বিলিয়ন ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে (জুলাই-এপ্রিল) আমেরিকা থেকে রেমিট্যান্স এসেছিল ২ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন ডলার, চলতি বছরের একই সময়ে তা বেড়ে ৩ দশমিক ০৫ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। হঠাৎ যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধিকে সন্দেহের চোখে দেখছে সিপিডি।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে যারা যায়, তাদের বেশিভাগই হোয়াইট কালার জব করে। অনেকেই ঘরবাড়ি ও জমিজমা বিক্রি করে দেশ থেকে টাকা নিয়ে চলে যায়। অনেক শিক্ষার্থীও সে দেশে আছে। তারা তো আর টাকা পাঠাতে পারে না। তাহলে বিপুল এ রেমিট্যান্স আসছে কোথা থেকে!

তিনি বলেন, এর একটা সম্ভাব্য ব্যাখ্যা হতে পারে এমন— যে টাকাটা পাচার হয়েছে, সেটা আবার রেমিট্যান্স হয়ে দেশে ফেরত আসছে। রেমিট্যান্সের ওপর যে আড়াই শতাংশ ইনসেন্টিভ বা সাবসিডি দেওয়া হচ্ছে, সেটার সুযোগ নেওয়া হচ্ছে। কর্তৃপক্ষকে আরও গভীরে গিয়ে বিষয়টির অনুসন্ধান করে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। 

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, সাধারণ মানুষ ব্যবহার করে, এমন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের শুল্ক সাময়িকভাবে কমানো হলে তারা স্বস্তি পাবে। সেক্ষেত্রে বাজার মনিটরিং প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম নিম্নমুখী হলেও দেশের বাজারে এর প্রভাব দেখা যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, দরিদ্রদের প্রত্যক্ষ সহায়তার আওতা বাড়ানো দরকার। সঠিক ব্যক্তিরা সহায়তা পাচ্ছে কি না, সেটাও নিশ্চিত করা প্রয়োজন। রপ্তানি বৃদ্ধির হার ইতিবাচক নয়। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম হচ্ছে। মে ও জুন মাসে তা ৪১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়াতে হবে। যেটা খুবই কষ্টসাধ্য।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘তৈরি পোশাকবহির্ভূত পণ্য কম রপ্তানি হচ্ছে। টাকার অবমূল্যায়নের কারণে প্রতিযোগিতা বাড়ছে।