অর্থনীতি

ধূমপান কমাতে বাংলাদেশে ধীরগতি, নিউজিল্যান্ডে সাফল্য

ধূমপানমুক্ত হওয়ার খুব কাছাকাছি পর্যায়ে চলে এসেছে নিউজিল্যান্ড। ২০১৫ সালে দেশটিতে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ধূমপায়ীর হার ছিল ১৩.৩ শতাংশ, যা বর্তমানে কমে হয়েছে ৬.৯ শতাংশ। অন্যদিকে, বাংলাদেশে এই হার ২৩ শতাংশ থেকে কমে মাত্র ১৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

‘টেল অব টু নেশনস: বাংলাদেশ ভার্সেস নিউজিল্যান্ড’ শিরোনামের একটি গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। ‘স্মোক ফ্রি সুইডেন’ সম্প্রতি একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গবেষণা প্রতিবেদনটির কথা তুলে ধরেছে। বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ডের ধূমপানবিরোধী নীতির তুলনামূলক বিশ্লেষণ তুলে ধরা হয়েছে এতে। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিউজিল্যান্ডের এই সাফল্যের মূল কারণ হলো তাদের বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গি ও তামাক নিয়ন্ত্রণে ক্ষতি হ্রাস কৌশলের অন্তর্ভুক্তি। দেশটি ভেপিংয়ের মতো বিকল্পকে আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন দিয়ে ধূমপায়ীদের ধূমপান ছাড়ার জন্য কার্যকর নীতি প্রণয়ন করেছে। 

অন্যদিকে, বৈজ্ঞানিক প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশে ক্ষতি হ্রাসকেন্দ্রিক কৌশলের চর্চা নেই বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়, বাংলাদেশে ভেপিংয়ের মতো সম্ভাব্য নিরাপদ বিকল্প পণ্যে কঠোর নিয়ম-কানুন আরোপ করে পরিস্থিতি আরো জটিল করা হচ্ছে। এর ফলে অনেকে ধূমপান চালিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন অথবা ঝুঁকিপূর্ণ তামাক পণ্য ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন। 

নিউজিল্যান্ডের উদাহরণ দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৮৩ সালে প্রতি তিনজন কিউইর মধ্যে একজন ধূমপায়ী ছিলেন। দেশটির সরকার পাবলিক প্লেসে ধূমপান নিষিদ্ধসহ নানা নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপ নিলেও প্রত্যাশিত হারে ধূমপান কমেনি। তবে, ২০০৯ সালে ভেপিং বাজারে আসার পর দেশটির জনস্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ এটিকে ধূমপানের বিকল্প হিসেবে বিবেচনা করে এবং নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত করে। এর ফলে ধূমপান কমাতে তারা সফলতা পায়।

বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের মধ্যে ধূমপায়ীর হার ৩৪.১ শতাংশ, যা নিউজিল্যান্ডের তুলনায় চার গুণ বেশি। ধোঁয়াহীন তামাক, যেমন: জর্দা ও গুল ব্যবহারও ব্যাপক, যা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করছে। প্রতিবছর তামাকজনিত রোগে বাংলাদেশে মৃত্যু হচ্ছে প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার জনের। দেশের মোট মৃত্যুর ২১.৯ শতাংশই এই কারণে ঘটে।

বাংলাদেশ হার্ম রিডাকশন ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি ড. মো. শরিফুল ইসলাম দুলু বলেছেন, “ভেপ এবং পাউচের মতো নিরাপদ বিকল্পের প্রতি বাংলাদেশের সীমাবদ্ধ দৃষ্টিভঙ্গি ভবিষ্যতের জন্য উদ্বেগজনক। ধোঁয়ামুক্ত বিকল্পের উপকারিতা নিয়ে আমাদের কাছে স্পষ্ট বৈশ্বিক প্রমাণ রয়েছে। তবু, সক্রিয় কর্মী ও নীতিনির্ধারকরা জীবন রক্ষাকারী এই বিকল্পগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের চেষ্টা করছেন। এতে তামাকজনিত স্বাস্থ্য সমস্যা আরো প্রকট হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। কারণ, অনেকেই ধূমপান চালিয়ে যেতে অথবা বিপজ্জনক ধোঁয়াহীন তামাকপণ্য ব্যবহারে বাধ্য হতে পারেন।”

ওয়ার্ল্ড মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল ও স্মোক ফ্রি সুইডেনের নেতৃত্বে থাকা ড. ডেলন হিউম্যান বলেছেন, “নিউজিল্যান্ডের বাস্তববাদী ও বৈজ্ঞানিকভাবে সমর্থিত নীতি তামাক নিয়ন্ত্রণে সফল হয়েছে। ভেপিংয়ের মতো বিকল্পকে অনুমোদন দিয়ে তারা ধূমপায়ীকে তামাক ছাড়ার বাস্তব পথ দেখিয়েছে। এর ফলে দেশটিতে মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে ধূমপানের হার প্রায় ৫০ শতাংশ কমেছে।”

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সিগারেটের নিরাপদ বিকল্পের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা আরোপ করলে বাংলাদেশের তামাকজনিত সংকট আরো ভয়াবহ হবে। কেননা, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার সঙ্গে নিরাপদ বিকল্প যুক্ত করাসহ ধূমপানের ক্ষতি হ্রাস কৌশলকে একীভূত করা গেলে ২০৬০ সাল নাগাদ বাংলাদেশে প্রায় ৯ লাখ ২০ হাজার মানুষের জীবন রক্ষা করা সম্ভব।