অর্থনীতি

আগস্ট মাসে কলমানি সুদের হার কমেছে

চলতি বছর জুলাই মাসের চেয়ে আগস্ট মাসে কলমানি সুদের হার কিছুটা কমেছে। সংকটে থাকা ব্যাংকগুলো আগস্ট মাসে ধার করেছে ১ লাখ ১৬ হাজার ১২৫ কোটি টাকা।  এ সময় ব্যাংকগুলোর একদিনের বা ওভারনাইট কলমানি লেনদেনে সুদের হার ছিল ৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ। আগের মাস জুলাইয়ে একদিনের  ধারের গড় সুদ হার ছিল ১০ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ।  আলোচ্য সময়ের ব্যবধানে সুদহার কমেছে। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

সর্বশেষ প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, আগস্ট মাসে একদিনের জন্য ব্যাংকগুলো ধার করেছে ১ লাখ ১ হাজার ৯৬৩ কোটি টাকা। এই মাসে শর্টনোটিশ মেয়াদে ধারের পরিমাণ ১২ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা। আর ১৫ দিন থেকে এক বছর মেয়াদি ধারের পরিমাণ ১ হাজার ৫১৯ কোটি টাকা। ওভারনাইট ধারের মতো ওই দুই শ্রেণিতেও ধারের পরিমাণ জুলাইয়ের তুলনায় আগস্টে কমেছে।

কলমানি হচ্ছে, সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলোর নিজেদের মধ্যে টাকা ধার দেওয়া-নেওয়ার একটি ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থায় যেসব ব্যাংকের হাতে নগদ টাকার সংকট থাকে, তাদের তাৎক্ষণিক প্রয়োজনে অতিরিক্ত তারল্য বা অর্থ থাকা ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে টাকা ধার নেয়। এ জন্য সুদ দিতে হয়। কলমানিতে ব্যাংকগুলো তিন ধরনের মেয়াদে টাকা ধার করে। এগুলো হলো, ওভারনাইট বা একদিনের জন্য, শর্টনোটিশ ও টার্ম বা মেয়াদি কলমানি। ওভারনাইট হলো এক দিন মেয়াদের জন্য ধার। শর্টনোটিশে ধারের মেয়াদ ২ থেকে ১৪ দিন। আর টার্ম বা মেয়াদি ধার ১৫ দিন থেকে এক বছর মেয়াদ। ব্যাংকগুলো নিজেদের মধ্যে টাকা ধার দেওয়া-নেওয়া বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকে জানায়। কলমানি বাজারের প্রতিদিনের লেনদেন ও সুদের তথ্য প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দেশের ব্যাংক খাতের ১৪ থেকে ১৫টি ব্যাংক তারল্য সংকটে ভুগছে। এ কারণে এসব ব্যাংকের আমানতকারীরা দুর্ভোগে আছে। ব্যাংকগুলো থেকে আমানতকারীদের বড় অঙ্কের জমাকৃত অর্থ মাসে মাসে সামান্য পরিমাণে ফেরত দেওয়া হচ্ছে। ফলে দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনায় এ সব ব্যাংককে অন্য ব্যাংক থেকে টাকা ধার করতে হচ্ছে।

ব্যাংক খাত নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট হলে আয়োজিত রবিবার (২১ সেপ্টেম্বর) এক আলোচনা সভায় ব্যাংক এশিয়ার এমডি সোহাইল আর কে হোসেন বলেন, ‘‘ব্যাংকের মোট মূলধনের ৯৫ শতাংশ আসে আমানতকারীদের কাছ থেকে। আমানতকারীদের স্বার্থ উপেক্ষা করে দেশের ব্যাংকখাত এখন তার ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সংকটে রয়েছে। কিছু ব্যাংকে খেলাপি ঋণ ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ। এর মূল কারণ সুশাসনের অভাব, সরকারি হস্তক্ষেপ।’’

ওই আলোচনা সভায় সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন বলেন, ‘‘দেশের ব্যাংকখাতে মোট ঋণের পরিমাণ ১৮ লাখ কোটি টাকা, এর মধ্যে ৪ লাখ কোটি টাকা মন্দ ঋণ, আর ৭ লাখ কোটি টাকা সমস্যাপূর্ণ (ডিট্রেসড) অবস্থায় রয়েছে।’’ 

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ‘‘আগস্ট মাসে ব্যাংকগুলোকে ১ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা বিশেষ তারল্য সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এই সুবিধার সুদহার ছিল ১০ শতাংশ।’’