দেশের ঋণ পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন নীতি-নির্ধারক ও অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। তারা সতর্ক করেছেন, যদি সময়মতো প্রয়োজনীয় সংস্কার এবং আর্থিক শৃঙ্খলা নিশ্চিত না করা যায়, তাহলে বাংলাদেশ গুরুতর ঋণের ফাঁদে পড়তে পারে।
সোমবার (৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সেমিনারে এসব কথা বলেন বিশেষজ্ঞরা।
সেমিনারে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “রাজস্ব আদায় বাড়াতে না পারলে এবং ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হলে আমাদের দেশের জন্য ঋণের ফাঁদে পড়া অনিবার্য। তখন ঋণ পরিশোধের জন্য আবার ঋণ নিতে হবে।”
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেন, “আমরা ইতোমধ্যে ঋণের ফাঁদে পড়েছি-এ সত্য স্বীকার না করলে ভবিষ্যতে এগোনো সম্ভব নয়।”
অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মনিরা বেগম। প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার অর্থবিষয়ক বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী।
বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। এছাড়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা বিভাগের সচিব এস এম শাকিল আখতার, অর্থ বিভাগের সচিব মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার এবং জিইডির সদস্য মঞ্জুর হোসেনসহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও অর্থনীতিবিদরা।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “সরকারি কর্মচারীদের বেতন ও পেনশন, কৃষি ও শিক্ষা খাতে ব্যয় এখন ঋণের সুদ পরিশোধের কারণে পেছনে পড়ে যাচ্ছে। এতে সামাজিক খাতগুলোর উন্নয়ন হুমকির মুখে পড়ছে।”
এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান জানান, কয়েক বছর আগে কর-জিডিপি অনুপাত ১০ শতাংশের বেশি ছিল, কিন্তু বর্তমানে তা ৭ শতাংশের ঘরে নামছে।
তিনি বলেন, “সমস্যা মূলত কর সংগ্রহে, কারণ জিডিপির সব খাত থেকে রাজস্ব সংগ্রহ সম্ভব হচ্ছে না।”
তিনি জানান, অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেই এনবিআরকে দুই ভাগে ভাগ করে দুজন সচিবের নেতৃত্বে কাজ শুরু করা হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, “সমস্যাগ্রস্ত পাঁচটি ব্যাংকের সংযুক্তির প্রক্রিয়া দ্রুত এগোচ্ছে। ডিপোজিট গ্যারান্টি ১ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২ লাখ টাকা করা হয়েছে।”
তিনি আশা প্রকাশ করেন, “এক-দুই সপ্তাহের মধ্যে ৭৬ লাখ আমানতকারী পরিবার তাদের আমানত ফেরত পেতে পারবেন এবং নতুন ব্যাংক প্রথম বা দ্বিতীয় বছরের মধ্যে মুনাফার মুখ দেখতে পারে।”