সম্পাদকীয়

সড়ক বন্ধ করে কর্মসূচি নয়

রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক অবরোধ করে বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের প্রবণতা বেড়ে চলেছে। সড়ক বন্ধ করে সংগঠনগুলোর কর্মসূচির কারণে তীব্র যানজট আর ভোগান্তির কবলে পড়তে হচ্ছে রাজধানীবাসীকে। মানুষকে জিম্মি করে  রাস্তার ওপর কর্মসূচি পালন কতটুকু যৌক্তিক সে বিষয়টি ভাবা এখন সময়ের দাবি।

 

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের বাড়ি ও মন্দিরে হামলা এবং সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন জায়গায় সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদে মঙ্গলবার রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে তিনটি সংগঠনের ব্যানারে প্রায় ৩ শতাধিক শিক্ষার্থী। তাদের এ অবরোধের কারণে বেলা ১১টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এই মোড় হয়ে যাতায়াতকারী যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে আশপাশের সড়কগুলোতে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। এর আগে ৪ নভেম্বর এক ঘণ্টা এবং ১১ মে ৭ ঘণ্টা শাহবাগে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীদের কয়েকটি সংগঠন। শাহবাগের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক অবরোধ করে রাখা মানে রাজধানীর একটি অংশকে কার্যত অচল করে ফেলা। শাহবাগ মোড়ের দুই প্রান্তে রয়েছে দেশের সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ দুটি হাসপাতাল-বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ও বারডেম হাসপাতাল। প্রতিদিন মুমূর্ষু রোগীসহ শত শত রোগীকে চিকিৎসার জন্য আসতে হয় এ দুটি হাসপাতালে, যানজটে পড়ে রাস্তার ওপরই অসহায়ভাবে মারা যায় অনেক রোগী। এছাড়াও হাজার হাজার মানুষকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয় গাড়িতে।

 

শুধু শাহবাগে সড়ক নয়, রাজধানীর অনেক গুরুত্বপূর্ণ সড়কই বিভিন্ন সময়ে দাবি-দাওয়া আদায়ের জন্য অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ করা হয়েছে। গত আগস্টে কেন্দ্রীয় কারাগারের পুরনো ভবনের জমিতে আবাসিক হল নির্মাণের দাবিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের  শিক্ষার্থীরা পল্টনে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন । গত বছর টিউশন ফি থেকে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) প্রত্যাহারের দাবিতে গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো অবরোধ করেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এখানে একটি বিষয় লক্ষনীয়, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের শিক্ষার্থীরাই সড়ক অবরোধ করে তাদের কর্মসূচি পালন করেন। তারা সড়ক বন্ধ করে রাখায় নাকাল হতে হয়েছে রাজধানীবাসীকে।

 

রাজধানী ঢাকা এমনিতেই যানজটের নগরী হিসেবে পরিচিত। সকাল-সন্ধ্যা প্রধান সড়কগুলোতে যানজট লেগেই থাকে। এরপর মরার ওপর খড়ার ঘা হিসেবে সড়ক অবরোধ করলে সাধারণ মানুষকে যে সীমাহীন ভোগান্তির শিকার হতে হয় তা বলার অপেক্ষা রাখে না। দাবি আদায়ের স্থান কখনোই সড়ক-মহাসড়ক হওয়া উচিৎ নয়। রাজনৈতিক কর্মসূচির জন্য সরকার যেমন কিছু জায়গা নির্দিষ্ট করে দিয়েছে, তেমনিভাবে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের জন্যও কিছু স্থান নির্দিষ্ট করা উচিৎ। অন্ততঃ জনদুর্ভোগের কথাটি বিবেচনায় রেখে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেবে বলে আমরা আশা করি।

   

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৬ নভেম্বর ২০১৬/শাহেদ/শাহনেওয়াজ