সম্পাদকীয়

পাকিস্তানের কাছে পাওনা চাইতে হবে

পাকিস্তানের একটি সংবাদমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে, বাংলাদেশের কাছে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা (৯ দশমিক ২১ বিলিয়ন পাকিস্তানি রুপি) পাওনা দাবি করতে যাচ্ছে ইসলামাবাদ। তবে এ পাওনা কিসের বাবদ তা জানায়নি। পাকিস্তান অবশ্য এখনো বাংলাদেশকে এ ব্যাপারে অনানুষ্ঠানিক বা আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি, তারপরও দেশটির সংবাদমাধ্যমে এ ধরণের  সংবাদ প্রকাশ উদ্বেগজনক।

 

এক্সপ্রেস ট্রিবিউন নামে পাকিস্তানের একটি সংবাদমাধ্যম  জানিয়েছে, বাংলাদেশের কাছ থেকে স্বাধীনতার পূর্বে এবং ভারতের কাছে থেকে ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পূর্বের পাওনা অর্থ আদায়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাকিস্তান সরকার। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক দ্য স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের হিসাবে ১৯৭১ সালের আগে সরকারি অফিস, ঋণ, আগাম সুবিধাসহ বিভিন্ন বিষয়ে পরিবর্তনের কারণে পূর্ব পাকিস্তানের কাছে যে টাকা পাওনা ছিল, ২০১৬ সালের জুন নাগাদ সম্পদ মূল্যায়নের মাধ্যমে তা ৯ দশমিক ২১ বিলিয়ন পাকিস্তানি রুপিতে (৬০০ কোটি ৯২ লাখ টাকা) দাঁড়িয়েছে। আর ভারতের কাছে পাওনা এসে দাঁড়িয়েছে ৬ বিলিয়ন রুপিতে। এই পাওনার বিষয়ে পাকিস্তানের সব বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নতুন করে তথ্য চেয়েছে দ্য স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তান।

 

১৯৭১ সালে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের দায়ে ২০১৩ সালে আব্দুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার পর এই মৃত্যুদণ্ড নিয়ে সম্পূর্ণ অযাচিত ও কূটনৈতিক শিষ্টাচারের বাইরে গিয়ে বিবৃতি দিয়েছিল পাকিস্তান। ওই সময় এ বিষয়ে পাকিস্তানের হাইকমিশনারকে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করে প্রতিবাদও জানানো হয়েছিল। এরপরও  যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও মৃত্যুদণ্ড নিয়ে বারবার বিবৃতি দিয়েছে দেশটি। সর্বশেষ চলতি বছরের শুরুতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের কর্মকর্তা মৌসুমী রহমানকে বহিষ্কার করে ইসলামাবাদ, যা ছিল আন্তর্জাতিক রীতিনীতি ও ভিয়েনা কনভেনশনের খেলাপ। সেই রেশ না কাটতেই পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমে নতুন করে তথাকথিত ‘পাওনার’ খবর প্রকাশিত হলো।

 

তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ লুটেপুটে পশ্চিম পাকিস্তানের উন্নয়ন করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বাংলাদেশের অবকাঠামোসহ অর্থনৈতিক খাত পুরোপুরি পঙ্গু করে দিয়েছিল পাকিস্তানি হানাদাররা। স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশকে একটি টাকাও ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেয়নি পাকিস্তান। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে একটি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের ৪ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ বণ্টনের যে বিষয়টি রয়েছে তা এখনো সুরাহা হয়নি। ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ের পর এই বাংলায় সহায়তা বাবদ বিভিন্ন দেশ যে ২০ কোটি ডলার পাঠিয়েছিল, তাও পাকিস্তান সে সময় নিয়ে গেছে। দীর্ঘদিন ধরে ওই অর্থ চাওয়া হলেও তা দিচ্ছে না পাকিস্তান। এছাড়া বাংলাদেশে আটকে পড়া পাকিস্তানিদের ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে আজ পর্যন্ত কোনো কথাই বলেনি ইসলামাবাদ।

 

পাওনা চাওয়ার বিষয়টি নিয়ে পাকিস্তানের কর্মকর্তারা এখনো মুখ খোলেননি। এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের দাবি, এ ব্যাপারে শিগগিরই বাংলাদেশকে জানানো হবে। যদি পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে ভবিষ্যতে এ ধরণের  দাবি জানানো হয়, তাহলে অবশ্যই আমাদেরকেও তাদের কাছে সব পাওনা কড়ায়-গণ্ডায় চাইতে হবে। প্রয়োজনে জাতিসংঘে আমাদের এ দাবি উত্থাপনের উদ্যোগ নিতে হবে।

   

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৬ নভেম্বর ২০১৬/শাহেদ/শাহনেওয়াজ