সম্পাদকীয়

রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগ প্রয়োজন

সহিংসতা থেকে বাঁচতে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানরা বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে ছুটে আসছে। বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী এদেরকে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না দেশের ভেতরে। নৌকায় আসা এই লোকগুলোকে বাধ্য হয়ে সাগরে ভাসতে হচ্ছে। নতুন করে রোহিঙ্গাদের নিয়ে এ সংকট দুঃখজনক ও উদ্বেগজনক।

 

রোহিঙ্গাদের সাম্প্রতিক সংকটটি শুরু হয়েছে গত মাসে। রাখাইন রাজ্যের মংড়ুতে পুলিশের ওপর হামলাকে কেন্দ্র করে বিদ্রোহীদের দমন অভিযানে নামে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী।  হেলিকপ্টার গানশিপ থেকে সেনাবাহিনী গ্রামবাসীর ওপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণও করেছে। সহিংসতায় রাজ্যটিতে এ পর্যন্ত ১৩০ জনের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন । গত মঙ্গলবার থেকে প্রাণ বাঁচাতে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে ছুটতে শুরু করেছে। নদীর তীরে নৌকায় ওঠার অপেক্ষায় থাকা মানুষগুলোর ওপর দেশটির সেনাবাহিনীর সদস্যরা পেছন থেকে গুলি চালাতেও কসুর করেনি। এতে নিহত হয়েছে প্রায় ৮০ জন মানুষ।

 

রোহিঙ্গা সংকট মিয়ানমার সরকার পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে ঝুলিয়ে রেখেছে। ১৯৮২ সালে দেশটির তৎকালীন সামরিক জান্তা প্রকাশিত নাগরিকত্ব আইনে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বকে অস্বীকার করা হয়। সরকারের মদদে  উগ্রপন্থী বৌদ্ধরা রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন শুরু করলে আশির দশকে বাংলাদেশে ব্যাপক হারে আসতে শুরু করে রোহিঙ্গারা। বাংলাদেশ সরকার মানবিক বিবেচনায় তাদের আশ্রয় দিয়েছিল। বাংলাদেশের অনুরোধ ও আর্ন্তজাতিক বিশ্বের চাপের মুখেও মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়া বা তাদের ওপর নিপীড়ন বন্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। ২০১২ সালে দেশটির চরমপন্থী বৌদ্ধরা রোহিঙ্গাদের ওপর নতুন করে হামলা শুরু করলে ফের বাংলাদেশ সীমান্তে রোহিঙ্গাদের ঢল নামে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার তাদের ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হয়। এমনকি চলতি বছর শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অং সান সু চির দল মিয়ানমারে ক্ষমতায় এলেও রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে এখনও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

 

বেসরকারি সংস্থাগুলোর হিসেবে বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা বাস করছে।  মানবিক বিবেচনায় সরকার তাদের সহযোগিতা করে যাচ্ছে। তবে রোহিঙ্গারা মাদক ও অস্ত্র চোরাচালান, জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দেওয়াসহ বিভিন্নভাবে এ সুযোগের অপব্যবহার করে চলছে। এমনকি তারা জালিয়াতি করে বাংলাদেশের পাসপোর্ট ব্যবহার করে বিদেশে গিয়ে নানা অপকর্মও করছে। এর দুর্নাম শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশকেই বহন করতে হচ্ছে।

 

১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনীর হামলায় আমরাও ভারতে শরণার্থীর জীবন যাপনে বাধ্য হয়েছিলাম। তাই আমরা নির্যাতনে দেশ পালানো মানুষের কষ্ট বুঝি। তাই আশ্রয় দেওয়া বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গার চাপ বছরের পর বছর বাংলাদেশের মতো নিম্ন আয়ের একটি দেশ বহন করে চলছে। কিন্তু তার মানে এই নয়, একটি দেশ তার নাগরিকদের পুশব্যাক করবে আর বারবার তাদের গ্রহণ করা হবে। তাই বাংলাদেশ সরকারের উচিৎ রোহিঙ্গা ইস্যুটি জাতিসংঘে উত্থাপনের মাধ্যমে মিয়ানমার সরকারের ওপর জোর চাপ সৃষ্টির  উদ্যোগ নেওয়া।

   

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৭ নভেম্বর ২০১৬/শাহেদ/শাহনেওয়াজ