সম্পাদকীয়

তরুণরা যেন জঙ্গিদের ফাঁদে পা না দেয়

রাজধানীতে আবারো কয়েকজন তরুণ নিখোঁজ হয়েছে। সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, আট দিনে নিখোঁজ হয়েছে ছয় তরুণ। এদের প্রত্যেকের বিষয়ে সাধারণ ডায়েরিও করা হয়েছে থানায়। নিখোঁজদের পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও তাদের খোঁজ করছে। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী একজন বাদে বাকীদের কোনো হদিস মিলছে না।

 

নিখোঁজ হওয়া বনানীর ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের ছাত্র সাঈদ আনোয়ার খান চারদিন পর বাসায় ফিরে এসেছে। প্রকাশিত খবর অনুযায়ী  শুক্রবার গভীর রাতে বনানীর বি ব্লকের ২১নং সড়কের ৬ নম্বর বাড়ির সামনে একটি মাইক্রোবাস থামে। মাইক্রোবাসের দরজা খুলে সাঈদকে নামিয়ে দেওয়া হয়। এ সময় তার চোখ বাধা ছিল। চোখ খুলে নামিয়ে দিয়েই মাইক্রোবাসটি দ্রুত গতিতে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।

 

নিখোঁজদের মধ্যে চারজনকে সর্বশেষ কয়েকদিন আগে বনানীর একটি রেস্তোরাঁয় দেখা গিয়েছিল। সিসি ক্যামেরায় তাদের ছবি ধরা পড়েছে। কিন্তু তার পর থেকেই বন্ধ পাওয়া যায় তাদের মোবাইল ফোন। এ কারণে তাদের হঠাৎ নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি নিয়ে নানা প্রশ্নের উদয় হচ্ছে সবার মনে। তাদের জঙ্গি সম্পৃক্ততা আছে কি না কিংবা অন্য কোন বিষয় এর সঙ্গে জড়িত কি না।

 

কেননা, এর আগেও এ ধরনের নিখোঁজের ঘটনা ঘটেছে। রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলা, শোলাকিয়ায় হামলায় জড়িতরাও হামলার কয়েক মাস আগে একইভাবে নিখোঁজ হয়েছিল। এখন আবার এই নিখোঁজের ঘটনা অপহরণ নাকি অন্য কারণ রয়েছে তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।

 

দেশে জঙ্গি হামলা হয়েছে বেশ কয়েকবার এবং আরো হামলার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। হামলার সঙ্গে বেশিরভাগই তরুণদের জড়িত থাকার কথা জানা যায় যারা জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। দেখা গেছে হামলায় জড়িত কিছু তরুণ ঘর ছেড়েছিল ওই সব হামলা হওয়ার আগে। যেমন- গত ১ জুলাই আর্টিজানে হামলায় জড়িত নিবরাস, তাওসিফ ৩ ফেব্রুয়ারি, মোবাশ্বের ২৯ ফেব্রুয়ারি ঘর ছেড়েছিল। 

 

বিশ্বে জঙ্গিবাদ বিস্তার লাভ করেছে ব্যাপকভাবে। এটি এখন মারাত্মক এক বৈশ্বিক সমস্যা। যুবক-তরুণদের বিভ্রান্ত করে জঙ্গিবাদে যুক্ত করার জন্য নানা কৌশলে কাজ করে সংশ্লিষ্টরা। বিভিন্ন রকম ফাঁদ পেতে এদের আকৃষ্ট করে দলে ভিড়ানো হয়। এখন নতুন করে নিখোঁজ তরুণরাও কোন জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত কি না কিংবা তারা কোনো হামলা পরিকল্পনায় যুক্ত হয়েছে কি না সে আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে।

 

তাই আবার কোন বিপর্যয় ঘটার আগে এই তরুণদের খুঁজে বের করা প্রয়োজন। নিখোঁজ হওয়ার পর সাঈদ যেভাবে ফিরে এসেছে তা স্বাভাবিক কোন ঘটনা নয়। সে নিজে চলে গিয়েছিল নাকি কোন চক্র তাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল সেসব বিষয় ভাল করে খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। আর যারা নিখোঁজ রয়েছে তাদের জীবনাচার, চলা-ফেরা, নিরুদ্দেশ হওয়ার আগে কোথায় যেত, কাদের সঙ্গে মিশত, সেসব বিষয় অনুসন্ধান করা জরুরি।

 

আমরা চাই না মোবাশ্বের-নিবরাসদের মত তরুণরা অন্ধকার পথে পা বাড়াক। জঙ্গিদের ফাঁদে পা দিয়ে নিজের এবং পরিবার ও সমাজের মারাত্মক ক্ষতি ডেকে আনুক। আমাদের তরুণরা যেন এভাবে হারিয়ে না যায়, জঙ্গিদের সঙ্গে যেন যুক্ত হতে না পারে সে জন্য সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

   

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১১ ডিসেম্বর ২০১৬/এনএ/শাহনেওয়াজ