সম্পাদকীয়

প্রয়োজন যৌক্তিক দাম ও মানসম্পন্ন ওষুধ

ওষুধ উৎপাদন ও বাজারজাত করার ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে নতুন জাতীয় ওষুধনীতি ২০১৬ প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। নতুন এ ওষুধনীতিতে ওষুধের মান ও দামের ক্ষেত্রে যে স্বেচ্ছাচারিতা চলছে তা নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

 

এ ওষুধনীতির খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে নতুন এ আইনের খসড়ায় অনুমোদন দেওয়া হয়।  বিশেষজ্ঞরা আশা করেছেন, দ্রুত সংসদে পাস করার পর কঠোরভাবে এ আইন বাস্তবায়ন করা হবে। জনস্বাস্থ্য রক্ষায় এই আইনের যথাযথ প্রয়োগ কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে আমরাও আশাবাদী।

 

নতুন এ ওষুধনীতিতে ওষুধের যৌক্তিক ও নিরাপদ ব্যবহারে বেশ কিছু পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে। একশ বা তার বেশি শয্যাবিশিষ্ট সব সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে অ্যান্টিবায়োটিকের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে নিজস্ব অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার নির্দেশিকা থাকতে হবে। নিয়মিত তা হালনাগাদ করা এবং চিকিৎসাসেবা দেওয়ার সময় তা মানতে হবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।

 

ওষুধনীতিতে জাতীয় ওষুধ নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর লক্ষ্যে হলো নকল, ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ তৈরি ও বিপণন রোধ করা। খসড়ায় বলা হয়েছে, মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ উৎপাদন ও বিক্রি শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। আইনে শাস্তি নির্ধারণ করা হবে। নীতিমালা অনুযায়ী ওষুধের মূল্য নির্ধারণ করা হবে। জনস্বার্থে দাম নির্ধারণ করে তা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। কেউ বেশি দাম নিলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

বাংলাদেশে ওষুধ একটি বিকাশমান শিল্প। ১২২টি দেশে আমাদের তৈরি ওষুধ রপ্তানি হচ্ছে। ওষুধশিল্প রপ্তানি আয় বৃদ্ধিতেও বড় ভূমিকা রাখছে। শুধু তাই নয়, জীবন রক্ষাকারী মূল্যবান অনেক ওষুধও এখন আমাদের দেশেই উৎপাদিত হচ্ছে। এতে বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হচ্ছে।

 

কিন্তু দুঃখজনক হচ্ছে যে, ভাল মানের পাশাপাশি ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ তৈরি ও বাজারজাত হচ্ছে এবং তা বেড়েই চলেছে। অনেক ক্ষেত্রে ওষুধের মান নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না। এমন অভিযোগও আছে অনেক কোম্পানি জেনে শুনে জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এ অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত।

 

সাধারণ মানুষের পক্ষে ওষুধের ভেজাল বা নিম্নমান চিহ্নিত করা সম্ভব নয়। সুতরাং শুধু জনস্বার্থে নয়, কোম্পানিগুলোর নিজ স্বার্থেও ওষুধের মান ঠিক রাখা জরুরি। আর জনস্বার্থে রাষ্ট্রকেই এসব নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আমরা আশা করব জাতীয় ওষুধনীতি চূড়ান্ত করার আগে এটি আরও পর্যালোচনা করা হবে।

 

মানুষের সুস্থ্য স্বাভাবিক জীবন যাপনে ওষুধের গুরুত্ব অপরিসীম। এজন্য ওষুধ কোম্পানিগুলো যাতে মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে সেদিকে জোর নজরদারি প্রয়োজন। স্বাস্থ্যখাতে সরকারের অর্জন কম নয়। কিন্তু স্বার্থান্বেষী মহলের কারণে যেন সেসব ভেস্তে না যায়। জনস্বাস্থ্য রক্ষায় এ বিষয়ে সরকার কঠোর অবস্থানে থাকবে এটিই আমাদের প্রত্যাশা।

   

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৩ ডিসেম্বর ২০১৬/নওশের/শাহনেওয়াজ