সম্পাদকীয়

মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানির সুযোগ কাজে লাগাতে হবে

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানির দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। শ্রমবাজার ইস্যু নিয়ে দুদেশের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের পর পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম শুক্রবার মালয়েশিয়ায় আনুষ্ঠানিকভাবে এ কথা জানিয়েছেন। নিঃসন্দেহে এটি বাংলাদেশের জন্য একটি সুখবর। প্রতিমন্ত্রী এও বলেছেন, মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানির প্রক্রিয়া এ সপ্তাহেই অনলাইনের মাধ্যমে শুরু হবে। ইতিমধ্যে ছয় হাজার শ্রমিকের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সত্যায়ন করা হয়েছে। খব অল্প সময়ের মধ্যে আরো ৫০ হাজার শ্রমিকের কাগজপত্র সত্যায়ন হবে। ২০১৬ সালে বাংলাদেশ থেকে সারা বিশ্বে যত জনশক্তি রপ্তানি হয়েছে, এ বছর শুধু মালয়েশিয়াতেই তার চেয়ে বেশি রপ্তানির প্রক্রিয়ায় অগ্রসর হচ্ছে সরকার। গত আগস্টে বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে নেয় সৌদি আরব। এই নিষেধাজ্ঞা ছয় বছর ধরে বজায় ছিল। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ফলে সে দেশে ৪৮টি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মানুষের কাজের ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। এখন মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের জনসম্পদ রপ্তানির ক্ষেত্র তৈরি হওয়ায় এ ক্ষেত্রে নতুন দিগন্তের সূচনা হলো। প্রবাসী বাংলাদেশিরা যে অর্থ বিদেশে উপার্জন করে দেশে পাঠান তাতে দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি মজবুত স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে গেছে। শুধু এ কারণে সাম্প্রতিক বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার ধকল বাংলাদেশকে স্পর্শ করতে পারেনি। এটি দেশের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক বিষয়। আর এটি মাথায় রেখেই বর্তমান সরকার দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। বাংলাদেশি কর্মীদের বিদেশে যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। মালয়েশিয়াও এর ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে আমরা গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে দেখেছি কিছু অসাধু মানুষের কারণে দেশের সুনাম বিদেশে ক্ষুণ্ন হয়। আদম ব্যবসায়ী পরিচয়ধারী ও দালাল নামের এইসব অসাধু ব্যক্তি জনশক্তি রপ্তানির নামে অবৈধ পন্থায় লোক পাঠানোর চেষ্টা করেন। বিদেশ গমনেচ্ছুক অনেককেই তাদের খপ্পরে পড়ে ভিটেমাটি হারাতে হয়েছে, বিদেশে কারাবাস ও শারীরিক শাস্তির সম্মুখীন হতে হয়েছে। এমনকি বহুজন প্রাণ পর্যন্ত হারিয়েছেন। এদের অপতৎপরতায় নিরীহ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে, সর্বোপরি রা্ষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই অসাধু চক্রের কারণে বিদেশে এমনকি দেশের অভ্যন্তরে জনশক্তি রপ্তানি খাতে একটি নেতিবাচক ধারণার সৃষ্টি হয়েছে। রপ্তানির নামে আদম পাচারকারী ও দালাল চক্রকে যেকোনো মূল্যে নির্মূল করতে হবে। এ বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি মানবসম্পদ রপ্তানির সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে। আন্তর্জাতিক শ্রমবিধি ও দুদেশের সমঝোতার শর্ত যথাযথ মেনে লোক পাঠাতে হবে। মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানির যে ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে, তাকে কোনো অবস্থাতেই নষ্ট করা যাবে না। বাংলাদেশের বিপুলসংখ্যক মানুষই দেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ। এই মানবসম্পদ যত বেশি রপ্তানি করা যাবে, রেমিট্যান্স তত বেশি বাড়বে। এতে সমৃদ্ধ হবে পরিবার, জাতি ও দেশ।

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২১ জানুয়ারি ২০১৭/শাহনেওয়াজ/এএন