সম্পাদকীয়

মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষা করতে হবে

আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। এ ভাষার জন্য সালাম, জব্বার, রফিক, বরকত বুকের রক্ত ঢেলেছেন। তারা বাংলা ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছেন। কিন্তু এই গর্ব ও সম্মানের ইতিহাস দুঃখজনকভাবে আমরা বিস্মৃত হতে চলেছি। বিশেষ করে বিগত কয়েক বছরে বাংলা ভাষা ও বানান নিয়ে যে নৈরাজ্য চলছে, তাতে কেবল বাংলা ভাষার প্রতি অবহেলা বা উদাসীনতাই প্রকাশ পায় না, একই সঙ্গে ভাষার নিয়মশৃঙ্খলা সম্পর্কে আমাদের অজ্ঞতাও পরিস্ফুট হয়ে ওঠে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভুলভাবে বাংলা উচ্চারণ ও বানানের যে উৎসব চলছে, তাতে মনে হচ্ছে এমন একটি ধারণা তৈরি হয়েছে যে, একভাবে উচ্চারণ করলেই হলো কিংবা যে কোন বানানে লিখলেই হলো। কিন্তু এভাবে চলতে থাকলে শুদ্ধ উচ্চারণ ও বাংলা বানান ইতিহাসের বিষয়ে পরিণত হবে একদিন। আমরা নিশ্চয়ই আমাদের মাতৃভাষাকে ভালোবাসি। তবে সেই ভালোবাসার মর্যাদা রক্ষা করাও জরুরি। আর মর্যাদা রক্ষা হবে তখনই যখন আমরা বাংলা বানান ও এর শুদ্ধ উচ্চারণ সম্পর্কে সচেতন হব। একটু সতর্ক ও যত্নবান হলে শুদ্ধ উচ্চারণে কথা বলা ও শুদ্ধ বানানে বাংলা লেখা খুব কঠিন কিছু নয়। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বাংলা শব্দের উচ্চারণ ও বানানে অধিক সতর্ক থাকার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তরুণ প্রজন্মের উদ্দেশে তিনি বলেন, প্রথমে মাতৃভাষা শিখতে হবে, তারপর অন্য ভাষা শিখতে হবে। তিনি তরুণ প্রজন্মের অহেতুক ইংরেজিপ্রেম ও বাংলার সঙ্গে ইংরেজির মিশেলে বিচিত্র ভাষায় কথা বলার ব্যাপারে উত্কণ্ঠা প্রকাশ করেছেন। বাস্তবিকই আমরা দেখছি বানান, উচ্চারণ প্রভৃতি ক্ষেত্রে এখন চরম বিশৃঙ্খলা। সংবাদপত্রের পাতায়, পোস্টার-বিজ্ঞাপন-সাইনবোর্ডে, বেতার-টেলিভিশনে অপপ্রয়োগ ও বিভিন্নতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। টেলিভিশন নাটক, এফএম বেতার থেকে শুরু করে সামাজিক মাধ্যমে প্রমিত ভাষার ব্যবহার বন্ধ হওয়ার উপক্রম। প্রধানমন্ত্রী এজন্যই উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে সতর্ক থাকার কথা বলেছেন। বাংরেজিতে কথা না বলার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। অনেক ক্ষেত্রেই অজ্ঞতার কারণে অপপ্রয়োগের ঘটনা ঘটে থাকে। তবে যারা লেখক তাদের সচেতনতা এক্ষেত্রে খুবই জরুরি। কেননা, তার লেখা পাঠ করে অনেক মানুষ প্রভাবিত হয়, প্রভাবিত হয় স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বলার সময় আমরা যেভাবেই বলি না কেন, লেখার সময় অবশ্যই সতর্ক থাকা প্রয়োজন, অবশ্যই শুদ্ধতা ও পরিশীলনের ছাপ থাকা প্রয়োজন। আঞ্চলিক ভাষা কিংবা নাগরিক কথ্য ভাষা টিভিতে ব্যবহার হতে পারে কিন্তু সেটাও যেন হয় প্রয়োজনানুসারে অবিকৃতরূপে। সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীদেরকে ভাষার সুষ্ঠু ব্যবহারে যত্নবান হতে হবে। কারণ, যেকোনো মাধ্যমেই একের ব্যবহৃত ভাষা দ্বারা অন্যে প্রভাবিত হতে পারে। বিশেষত, যেসব মাধ্যম জনপ্রিয় তাদের এ বিষয়ে সচেতন থাকা বাঞ্ছনীয়। প্রত্যেকেই স্ব-স্ব অবস্থান থেকে এ ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল হলে শৃঙ্খলা রক্ষা করা সম্ভব। রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/আলী নওশের/তৈয়বুর/শাহনেওয়াজ