সম্পাদকীয়

স্বপ্ন এখন দৃশ্যমান

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে নির্মাণাধীন পদ্মা বহুমুখী সেতুর পিলারের ওপর বসানো হয়েছে প্রথম স্প্যান। আর এর মধ্য দিয়ে জাতীয় জীবনের একটি বহুল কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নও দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। মূল কাজ শুরুর প্রায় পৌনে দুই বছর পর শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে শনিবার সকালে বসানো এই স্প্যান দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার সঙ্গে রাজধানী ঢাকার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপনে একটি বৃহৎ সেতু নির্মাণের যে স্বপ্ন সূচিত হয়েছিল, তার চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার কাজ আরেক ধাপ এগিয়ে গেল। পদ্মা নদীর ওপর দ্বিতল এই সেতু হচ্ছে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া ও শরীয়তপুরের জাজিরার মধ্যে। মূল সেতুর দৈর্ঘ্য (পানির অংশের) ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। ডাঙার অংশ ধরলে সেতুটি প্রায় ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ হবে। খুঁটির ওপর ইস্পাতের যে স্প্যান বসানো হবে, এর ভেতর দিয়ে চলবে ট্রেন। আর ওপরে কংক্রিটের প্লাটফর্ম দিয়ে চলবে যানবাহন। এ পর্যন্ত পদ্মা সেতুর সার্বিক কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৪৭ দশমিক ৫ শতাংশ। মূল সেতুর কাজ শেষ হয়েছে ৪৯ শতাংশ। নদী শাসনের কাজ হয়েছে ৩৪ শতাংশ। মাওয়া প্রান্তে সংযোগ সড়কের কাজ শতভাগ শেষ। জাজিরা প্রান্তে সংযোগ সড়কের কাজ ৯৮ শতাংশ হয়েছে সম্পন্ন। এছাড়া সার্ভিস এরিয়া-২ এর কাজও শতভাগ শেষ। ২০১৮ সালে নভেম্বরে মূল সেতুর কাজ শেষ করার আশা করা হচ্ছে। কাজ শেষ হলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নসহ সারা দেশে সামগ্রিক অর্থনীতিতে যোগ হবে নতুন মাত্রা। স্প্যান বসানোর পর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী  ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রথম স্প্যান বাসানোর মধ্য দিয়ে কালো মেঘ কেটে দৃশমান হয়েছে পদ্মা সেতু। সব বাধা উপেক্ষা করে সেতুর কাজ এগিয়ে চলেছে। যথাসময়েই সেতুর কাজ শেষ করার চেষ্টা চলছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফিরে স্প্যান বসানো উদ্বোধন করবেন জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, সেতুর কাজ যাতে একমুহূর্তের জন্য বন্ধ না থাকে সেজন্য অনানুষ্ঠানিকভাবে স্প্যান বসানো হয়েছে। সেতু দৃশ্যমান হওয়ার পর ওই এলাকায় মানুষের মধ্যে আনন্দোচ্ছল পরিবেশ দেখা গেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন দৃঢ় কণ্ঠে নিজস্ব অর্থায়নেই পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিলেন, তখন অনেকের কাছে তা 'উচ্চাভিলাষী' মনে হয়েছিল। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে জাজিরায় নদীশাসন কাজ উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন- 'দেশে বড় কোনো কাজ করতে গেলেই বিদেশিদের কাছে হাত পাততে হবে- এ মানসিকতা থেকে বেরিয়ে এসেছে বাংলাদেশের মানুষ। 'বস্তুতঃ সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। আমাদের প্রত্যাশা, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই আমাদের সবার স্বপ্নের এই সেতু উন্মুক্ত হবে যানবাহন ও রেল চলাচলের জন্য। আমরা মনে করি, পদ্মা সেতু প্রকল্প নিছক অবকাঠামোগত উন্নয়নের বিষয় নয়; এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ প্রমাণ করে চলেছে, বৈদেশিক সহায়তা ছাড়াও আমরা পারি। এই সেতু দেশের যোগাযোগ, অর্থনীতি ও উন্নয়নের পথে অনন্য মাইলফলক হয়ে থাকবে। রাইজিংবিডি/ঢাকা/২ অক্টোবর ২০১৭/আলী নওশের