সম্পাদকীয়

নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে পণ্যের বাজার মূল্য

বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম দাম বেড়েই চলেছে। প্রতিটি পণ্যের দাম যেভাবে ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে, তাতে জনগণের নাভিশ্বাস উঠেছে। চালের দাম অনেকদিন ধরেই ঊর্ধ্বগামী। সে সঙ্গে এখন ডাল, লবণ, মাছ, মাংস ও শাকসবজির খুচরা বাজারদর সাধারণ ক্রেতার নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে ক্রমশঃ। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে শাকসবজির দাম। পেপে বাদে কোনো সবজিই এখন ৬০-৭০ টাকার নিচে নেই। পুঁইশাকের ছোট ছোট আঁটি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকায়। বেগুনের কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, টমেটো ১০০ থেকে ১২০ টাকা,  কাঁচা মরিচের দাম আড়াইশ থেকে তিনশ’ টাকা কেজি। সাধারণ মানুষ এখন বাজারে গিয়ে দ্বিধায় পড়ছে- দ্রব্য কিনবে নাকি কিনবে না। মসুরের ডালের দাম সামান্য কমলেও মুগডাল, অ্যাঙ্কর ডালের দাম বেড়েছে। তবে ছোলার ডালের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। পিঁয়াজের দাম এক সপ্তাহ আগের তুলনায়  প্রায় ১১ শতাংশ বেড়েছে। আমদানি করা পিয়াজের দাম বেড়েছে ২১ দশমিক ২৫ শতাংশ। রসুনের দাম কিছুটা কমলেও আদার দাম  বেড়েছে। ফলে বেশি বিপদে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। মূল্যের লাগাম টেনে ধরতে না পারলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে। দেখা গেছে ব্যবসায়ীরা সুযোগ পেলেই কোনো না কোনো অজুহাতের কথা বলে  দাম বাড়িয়ে দেন। আবার পণ্য পরিবহনে চাঁদাবাজি এবং মজুদ রেখে কৃত্রিম সংকট তৈরির কারণে দাম বেড়ে যাচ্ছে কিংবা বাড়ানো হচ্ছে। বলা হচ্ছে, বন্যা ও অতি বৃষ্টির কারণে শাকসবজির উৎপাদন কমে যাওয়ায় মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে। বেশি দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। কিন্তু ব্যবসায়ীদের একথা সঠিক নয়। কেননা পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্টে আমরা দেখছি বাজারে কোনো পণ্যের ঘাটতি নেই। পাইকারি বিক্রেতাদের কাছ থেকে খুচরা পর্যায়ে এসে দাম বেড়ে যাচ্ছে অনেক। আবার পাইকারি বিক্রেতারা কৃষকদের কাছ থেকে এসব পণ্যই কিনছেন আরো কম দামে। তার অর্থ, দাম বাড়ার কারণে কৃষকরা তা থেকে লাভবান হচ্ছেন না কোনোভাবেই। আবার কৃষক যে মূল্যে উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করছে, কয়েক হাত ঘুরে ভোক্তার হাতে পৌঁছতে তার মূল্য বেড়ে যাচ্ছে অনেক। আর এই মুনাফাবাজিতে পকেট ভারী করছে মধ্যস্বত্বভোগিরা। সরকারকে অবিলম্বে পণ্যমূল্যের উর্ধ্বগতি রোধ ও বাজার নিয়ন্ত্রণে সম্ভাব্য সব কিছু করতে হবে। উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করে বাজার নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে হবে। বাজার মনিটরিং ব্যবস্থাকে আরো জোরদার করতে হবে। প্রান্তিক কৃষক যে মূল্যে চাল, ডাল, সবজি বা অন্যান্য দ্রব্য বিক্রি করে, তার থেকে অনেক বেশি মূল্যে বিক্রেতার কাছে বিক্রি করছে ব্যবসায়ীরা। কৃষকের কাছ থেকে যাতে সরাসরি ক্রেতারা পণ্য কিনতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে। শাস্তির আওতায় আনতে হবে অযৌক্তিক মুনাফাকারীদের। বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে হলে মজুদের পরিমাণ, সরবরাহ, সিন্ডিকেটের কারসাজি- এসবের প্রতি কড়া নজর রাখতে হবে। ব্যবসায়ীরা যেন কোনোভাবেই সিন্ডিকেট করতে না পারে, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এ জন্য কঠোর হতে হবে প্রশাসনকে। রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৭ অক্টোবর ২০১৭/আলী নওশের