সম্পাদকীয়

আবাসন সমস্যা সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ প্রয়োজন

সম্প্রতি রাজধানীর বাসভবনসমূহ নিয়ে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়। এতে আবাসন খাতে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা নিয়ে উদ্বেগজনক কিছু তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। বেসরকারি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) ‘নগর পরিস্থিতি-২০১৭: ঢাকা মহানগরীর আবাসন’ শীর্ষক এ গবেষণা প্রতিবেদনে রাজধানীতে বাসস্থানের পর্যাপ্ততা, নগরবাসীর সামর্থ্য, বাসস্থানে মৌলিক সেবাসমূহের মান এবং দুর্যোগ প্রস্তুতি, ভাড়াটেদের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে নানা তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। গবেষণা কাজে বিআইজিডি তাদের নিজস্ব জরিপ ছাড়াও সরকার, জাতিসংঘ, এনজিও ও রাজউকের গবেষণা থেকে সহায়তা নিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, প্রতিবছর ঢাকা মহানগরীতে শূন্য দশমিক ১২ মিলিয়ন নতুন বাড়ি বা ফ্ল্যাটের দরকার হলেও সেখানে গড়ে উঠছে মাত্র ২৫ হাজার। যা খুবই অপ্রতুল। রাজধানীতে বসবাস করা মানুষের আয়ের ৩০ শতাংশই বাড়ি ভাড়ায় ব্যয় হয়ে যায়। আর রাজধানীর ৯৫ শতাংশ ভাড়া বাড়িরই কোনো জরুরি নির্গমন ব্যবস্থা নেই। আবার যে সব বাড়িতে জরুরি নির্গমন ব্যবস্থা বিদ্যমান তা যথাযথভাবে চিহ্নিত করা নেই। এ ছাড়া অগ্নিঝুঁকি মোকাবিলায় উপযুক্ত প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থাও নেই। বিষয়টি বেশ উদ্বেগজনক। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জরিপকালে ৮২ শতাংশ মানুষ বলেছেন তাদের আয়ের ৩০ শতাংশই চলে যায় বাড়ি ভাড়ায়। আর ৬৮ শতাংশ মানুষ বলেছেন, তাদের ঢাকায় ফ্ল্যাট অথবা বাড়ি কেনার ইচ্ছে নেই। কারণ, তাদের সে রকম সঞ্চয় নেই। অধিকাংশ মানুষই ব্যাংক লোনে নানা ঝামেলার কারণে লোন নিয়ে ফ্ল্যাট কিংবা বাড়ি কিনতে চান না। বাসা ভাড়া ও বাড়ি কেনার ক্ষেত্রে মানুষ প্রাধান্য দেন তার বাসা থেকে অফিসের দূরত্ব কতটুকু, তা। এর মূল কারণ ঢাকার যানজট। এছাড়া প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বেসরকারিভাবে যারা আবাসন ব্যবসা করেন তারা সব সময় ফ্ল্যাট বিক্রয়ের ক্ষেত্রে টার্গেট করেন উচ্চবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষকে। রাজউকের প্রকল্প থেকে ফ্ল্যাট কেনার চেয়ে বেসরকারি কোম্পানির কাছ থেকে ফ্ল্যাট কেনার আগ্রহ বেশি মানুষের। আর ঋণ নিয়ে বাড়ি কিংবা ফ্ল্যাট কিনতে গেলে ৭০ শতাংশ টাকা ব্যাংক দেয়। বাকি ৩০ শতাংশ ক্রেতাকে এককালীন পরিশোধ করতে হয়। এজন্য অনেক ক্রেতা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। কারণ, এককালীন পরিশোধের এই টাকাও অনেকের কাছে থাকে না। এক্ষেত্রে প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে, ফ্ল্যাট বা বাড়ি কেনার এককালীন পরিশোধ ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে পাঁচ শতাংশ  করা যেতে পারে। এছাড়া ঋণ পরিশোধের সময় বাড়ি ভাড়ার সঙ্গে সামঞ্জস্য করতে পারলে  ফ্ল্যাট কেনায় আগ্রহী হয়ে উঠবেন ভাড়াটিয়ারা। বস্তুতঃ আবাসন খাতের সংকটের কারণে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের। নগরে একটি স্বপ্নের ফ্ল্যাটের মালিক হওয়া তাদের জন্য দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। আবার উচ্চমূল্যে ফ্ল্যাট কেনার পর বড় ধরনের রেজিস্ট্রেশন ফি ক্রেতার ওপর মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো। আবাসন মানুষের অন্যতম মৌলিক অধিকার। তাই আমাদের প্রত্যাশা এ খাতের উদ্যোক্তারা এবং সরকার আবাসন ক্ষেত্রে সমস্যার সমাধান ও ভোগান্তি নিরসন করে মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ নেবেন। রাইজিংবিডি/ঢাকা/৪ জানুয়ারি ২০১৮/আলী নওশের/শাহনেওয়াজ