সম্পাদকীয়

ঈদযাত্রা : নিরাপদে বাড়ি ফেরার উদ্যোগ নিন

কয়েক দিন পরই উদযাপিত হবে পবিত্র ঈদুল আজহা। পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে ঢাকা ছাড়ছেন লাখ লাখ মানুষ। শুধু রাজধানী থেকে নয়, দেশের অন্যত্রও ঈদ উপলক্ষে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে মানুষের যাতায়াত বাড়ে। বাড়ি ফেরেন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। কিন্তু এবারও ঈদ যাত্রায় ভোগান্তির আশঙ্কা করা হচ্ছে বিভিন্ন স্থানে চলাচলের অনুপযোগি সড়কের কারণে। সংস্কারকাজ চলতে থাকায় কোথাও কোথাও সড়ক সংকুচিত হয়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, ঈদের আগেই সব মহাসড়ক চলাচলের উপযোগী হবে। ঈদুল আজহা ঘিরে সাধারণ মানুষের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বাস্তবে বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কের অবস্থা এখনো নাজুক। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার মেঘনা সেতু টোল প্লাজার পশ্চিম পাশের অংশ খানাখন্দে ভরা। ফলে এবারও ভোগান্তিতে পড়তে হতে পারে এ পথে যতায়াতকারীদের। কাঁচপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সেতুর নির্মাণকাজ চলার কারণে মহাসড়কের একাংশ কেটে ফেলা হয়েছে। ফলে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে সে এলাকায়। এদিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক দিয়ে রাজধানী থেকে উত্তরবঙ্গে ১৬টি জেলার যানবাহন চলাচল করে। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী এই মহাসড়কে এখনো চলছে চার লেনের কাজ। চন্দ্রা থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত ফোর লেনে গাড়ি চলাচল করলেও সড়কের ওই অংশের দুই পাশে এখনো পিচ ঢালাই হয়নি। ঈদযাত্রার শুরুতেই অনেকে ভোগান্তির শিকার হন। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট সংগ্রহ, যানজট, বাস-লঞ্চে বাড়তি ভাড়াসহ নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। ঈদ যাত্রায় আরেকটি বিড়ম্বনা সড়ক দুর্ঘটনা। এমনিতেই সড়কপথে দুর্ঘটনার হার বেশি। আর ঈদ উপলক্ষে মহাসড়কগুলোয় বাড়তি যানবাহন চলাচল করায় দুর্ঘটনার আশঙ্কা আরও বেড়ে যায়। ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচল করে। নৌপথেও ঈদের সময় ফিটনেসবিহীন নৌযান চলাচলের অভিযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন। বস্তুতঃ প্রতি ঈদেই ঘরমুখো মানুষের দুর্ভোগের একটি বড় কারণ হয়ে দাঁড়ায় সড়কে যানজট। যাত্রীদের ভোগান্তি নিরসনে যানজটের কারণ চিহ্নিত করে যতটা সম্ভব তা দূর করার উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। দ্রুত সড়ক সংস্কার না হলে আনন্দ পরিণত হবে নিরানন্দে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সংস্কারকাজ চলছে কিন্তু কাজের গতি আরো বাড়াতে হবে। বর্ষায় নষ্ট হয়ে যাওয়া সড়ক-মহাসড়কের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে মহাসড়কের পাশে অবৈধ পার্কিং ও হাটবাজার যেন না বসে, বিশেষ করে কোরবানির পশুর হাট যেন যানজটের কারণ না হয় সেদিকে নজর দিতে হবে। ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচলের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার পাশাপাশি নজর দিতে হবে অদক্ষ ও অপেশাদার চালক দিয়ে যাতে গাড়ি চালানো না হয়। আশা করি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সড়ক-মহাসড়ক চলাচলের উপযোগী করতে জরুরি ব্যবস্থা নেবে। ঈদে ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় হতেও দেখা গেছে। এসব দিকে আগেভাগে নজর দেওয়া প্রয়োজন। ট্রেন ও লঞ্চের যাত্রীরাও যেন নিরাপদে যাতায়াত করতে পারেন সে প্রত্যাশা আমাদের। লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন রোধ, ট্রেনের ছাদে যাত্রী ওঠা বন্ধসহ নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়গুলোতে দৃষ্টি দিতে হবে। ঈদের আগে নৌপথে ঝুঁকিপূর্ণ পুরনো লঞ্চ জোড়াতালি দিয়ে নামানোর প্রবণতা দেখা যায়। এসব ঝুঁকিপূর্ণ লঞ্চ যাতে চলাচল করতে না পারে সে জন্য কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে কর্তৃপক্ষকে। ঈদুল আজহা ঘিরে সাধারণ মানুষের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে নানা পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছে সড়ক, নৌ ও রেলওয়ে বিভাগ। আমরা আশা করি এ সব পদক্ষেপ দ্রুত ও যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। সবার নিরাপদে বাড়ি ফেরার উদ্যোগ নেবে কর্তৃপক্ষ। নিরাপদে বাড়ি পৌঁছে পরিবার-পরিজনের সঙ্গে সবাই ঈদ উদযাপন করবেন এমনটিই প্রত্যাশা আমাদের।

   

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৭ আগস্ট ২০১৮/আলী নওশের/শাহনেওয়াজ