সম্পাদকীয়

উন্নয়নের গতি ধরে রাখতে হবে

বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে বেশ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। পণ্য রপ্তানিতে বড় ধরনের প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে শেষ হয়েছে ২০১৮ সাল। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে রপ্তানি বেড়েছে আগের অর্থবছরের (২০১৭-১৮) একই সময়ের তুলনায় ১৪ দশমিক ৪২ শতাংশ। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৯ দশমিক ১৩ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে শুধু ডিসেম্বরে ৩৫৩ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২ দশমিক ১৮ শতাংশ বেশি। আর প্রথম ছয় মাসে নানা পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশের আয় হয়েছে ২ হাজার ৫০ কোটি ডলার। আগের বছর একই সময়ে তা ছিল ১ হাজার ৭৯১ কোটি ডলার। রপ্তানি আয়ে সুখবর নিয়ে শুরু হয়েছিল নতুন অর্থবছর। ইতিবাচক সেই ধারা অব্যাহত রয়েছে এখনও। দেশের প্রধান রপ্তানিপণ্য তৈরি পোশাক খাতে আয় ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে। আলোচিত সময়ে পোশাক খাত থেকে আয় হয়েছে ১ হাজার ৭০৮ কোটি ৪৯ লাখ ডলার। এ সময়ে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ৫৭৪ কোটি ৫২ লাখ ডলার। যে কারণে রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধির ধারবাহিকতা এখনও বিদ্যমান। এ সময়ে কৃষিপণ্য রপ্তানিতে আয় হয়েছে ৫১ কোটি ৭৬ লাখ ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৬৭ শতাংশ বেশি। ধারণা করা হচ্ছে, অর্থ বছরের বাকি ছয় মাস এই ধারা অব্যাহত থাকার পাশাপাশি তা আরো বৃদ্ধি পাবে। বস্তুতঃ অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন, বিশেষ করে বন্দর সুবিধা সম্প্রসারণ, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং গ্যাস ও বিদ্যুৎ সহজলভ্য হওয়ায় ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানি প্রবৃদ্ধিতে। দেশের পোশাক শিল্প মালিকরা গত কয়েক বছরে তাদের কারখানার উন্নয়নে নানা পদক্ষেপ নেয়ায় ক্রেতাদের আস্থা বৃদ্ধি রপ্তানি আয় বাড়াতে অবদান রেখেছে বলে মনে করে পোশাক শিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ। উন্নয়নের এই ধারা অব্যাহত থাকলে এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকলে প্রবৃদ্ধির এই গতি আরো ত্বরান্বিত হবে। বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির বাজারও ক্রমেই সম্প্রসারিত হচ্ছে। দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য এখন পর্যন্ত তৈরি পোশাক হলেও অন্যান্য পণ্যের রপ্তানিও দ্রুত বাড়ছে। এছাড়া দেশে রেমিট্যান্সের প্রবাহও বেড়েছে। ২০১৮ সালে প্রবাসী আয় এসেছে দেড় হাজার কোটি ডলারেরও বেশি। যা আগের বছরের চেয়ে ১৫ শতাংশ বেশি। আরো অনেক ক্ষেত্রেই অগ্রগতির এই ধারা বিদ্যমান। আমরা মনে করি রপ্তানির এই প্রবৃদ্ধিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে কর্মসংস্থানসহ অর্থনীতির অন্যান্য ক্ষেত্রেও। তবে আমাদেরকে উন্নয়নের এই গতি ধরে রাখতে হবে। ৪৭ বছরে অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্জন অনেক। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শিল্প, কৃষি, যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এগিয়েছে দেশ। মানবসম্পদ উন্নয়ন সূচকেও অনেক উন্নয়নশীল দেশের চেয়ে বেশি অগ্রগতি আমাদের। এ অগ্রগতি ধরে রেখে আমাদের আরো সামনে এগিয়ে যেতে হবে। রাইজিংবিডি/ঢাকা/৫ জানুয়ারি ২০১৯/আলী নওশের/শাহনেওয়াজ